হলুদ পিচবোর্ডের টিকিটের স্থান আজ জাদুঘরে

নতুন গতি প্রতিবেদন: কতই না আবেগ জড়িয়ে আছে ওই হলুদ পিচবোর্ডের টিকিট গুলোর সাথে।ছোটবেলা তে ওগুলো খেলা ধূলার অংশ ও ছিল।এই তো ৬বছর আগে মানুষের হাতে ঘুরে বেড়াতো এই টিকিট।আজ তার স্থান জাদুঘর এ।
ইউটিএসপদ্ধতি আবির্ভাব এর পর রেল স্টেশনের চিরপরিচিত ওই ছবি অবশ্য আগেই বদলাতে শুরু করেছিল। যে ক’টা হাতেগোনা স্টেশনে এখনও এমন হলুদ টিকিট চালু রয়েছে, সেখানেও এ বার কম্পিউটর-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের মাধ্যমেই টিকিট বিক্রি করা হবে, এমনই সিদ্ধান্ত ভারতীয় রেলের।
লোকাল ট্রেনের পিচবোর্ডের ওই হলুদ টিকিটের পোশাকি নাম এডমন্ডসন টিকিট। ১৮৪০ নাগাদ ইংল্যান্ডে যাত্রিবাহী ট্রেনে প্রথম এই পদ্ধতিতে টিকিট কাটা শুরু হয়। এর ১৩ বছর পর যখন ভারতে প্রথম যাত্রিবাহী ট্রেন চালু হয়, ততক্ষণে ইউরোপে টিকিট কাটার এই ব্যবস্থা যথেষ্টই জনপ্রিয়। শুরু থেকেই এ দেশের রেলযাত্রীরা এমন টিকিট-ই কেটে এসেছেন। প্রথম দিকে বিলেত থেকেই ছেপে আসত ট্রেনের টিকিট। ভারতীয় রেলের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, ‘এডমন্ডসন ক্যাবিনেট’ নামে একটি ক্যাবিনেটের বিভিন্ন খোপের মধ্যে বিভিন্ন গন্তব্যের টিকিট রাখা থাকত। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী রেলকর্মী নির্দিষ্ট খোপ থেকে টিকিট নিয়ে মেশিনে দিনটা পাঞ্চ করে টিকিট বিক্রি করতেন। ক্যাবিনেট নির্মাতা এবং বিলেতে নিউ ক্যাসেলের স্টেশন মাস্টার টমাস এডমন্ডসনের নামেই এই ক্যাবিনেট ও টিকিট। আয়তকার এই টিকিট দৈর্ঘ্যে হত ২.২৫ ইঞ্চি, প্রস্থে ১.২২ ইঞ্চি।
গত ছ’-সাত বছরে কম্পিউটর-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রে আনরিজার্ভড টিকেটিং সিস্টেম (ইউটিএস) প্রায় সর্বত্রই চালু হয়েছে। ধুলো পড়তে শুরু করে পাঞ্চিং মেশিনে। বর্তমানে রাজ্যে খুব বেশি হলে মাসে কয়েক হাজার মাত্র এমন টিকিট ছাপা হয় বলে জানাচ্ছেন স্টোর বিভাগের কর্মীরা। প্রত্যন্ত কয়েকটি স্টেশন, যেখান থেকে সারাদিনে একশোরও কম যাত্রী টিকিট কাটেন–এমন জায়গাতেই এখনও এডমন্ডসন টিকিট পাওয়া যায় বলে জানাচ্ছেন রেলকর্মীরা। এ ছাড়া নীলগিরি মাউন্টেন রেলওয়ের মতো হেরিটেজ যাত্রায় এখনও এই ধরনের টিকিট দেওয়া হয়।
খরচ কমাতে ভারতীয় রেল বহু দিন ধরেই ছাপাখানাগুলো ক্রমে বন্ধ করছে। শেষ পর্যন্ত মুম্বই, হাওড়া, দিল্লি, রোয়াপুরম ও সেকেন্দ্রাবাদের ছাপাখানা চালু ছিল। এগুলোও সামনের মার্চের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ এসেছে রেলবোর্ডের স্টোর বিভাগ থেকে। এর ফলে লোকাল ট্রেনের পুরোনো হলুদ টিকিট, হলুদ মান্থলি টিকিট, টিকিট পরীক্ষকের স্লিপ কাটার প্যাড ইত্যাদি আর ছাপা হবে না। ছাপাখানার কর্মীদের অন্য বিভাগে ট্রান্সফার করা হবে।
ম্যাড়মেড়ে হলুদ পিচবোর্ডের টিকিট। এক দিকে স্টেশন ও গন্তব্যের নাম, টিকিটের নম্বর, ভাড়া ও যাত্রার তারিখ ছাপা। অন্য দিকটা ফাঁকা। সাধারণত ছোটদের খেলার সামগ্রী, বইয়ের পেজমার্ক বা টলমল করা টেবিল-চেয়ারের পায়ার নীচে গতি হত এই টিকিটের। রেল তার ১৬৬ বছরের অভ্যেস পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলার পর পিচবোর্ডের এই টুকরোর ঠাঁই হবে রেলের জাদুঘরে।