প্রদীপের ছায়ায় স্বাধীনতা সংগ্রামী

নিজস্ব সংবাদদাতা : ৪২ এর বিপ্লবে শুধু অংশগ্রহণ নয়, স্বাধীনতা সংগ্রামী তোজাম্মল হোসেন কবিতাও লিখেছেন। লিখেছিলেন– “প্রিয়ে মরেও তুমি মর নাইকো/ আছো তুমি মোর অন্তরে , / তোমার স্মৃতি ভুলবো নাকো / রাখব মনে যুগ যুগান্তরে।” মৃত সহধর্মীণীকে উদ্দেশ্য করে লেখা হলেও এর মধ্যে থেকেই উঠে আসে প্রিয় দেশ। তৎকালীন বিডিয়ার রেলপথের স্টেশনে সংগঠিত করেছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন। উল্লেখ্য এই পোস্টেশন দিয়ে ই বটুকেশ্বর দত্ত আত্মগোপনকারী ভগৎ সিংহকে নিয়ে ব্রিটিশ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছিলেন। উখরিদ অঞ্চলের গড়শাখারী ফুটবল ময়দানে এক জনসভায় ইংরেজ পুলিশের লাঠির আঘাতে আহত হন। জন সেবক পরীক্ষার পত্রের সই করে তিনি দেশবাসীর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন।

    স্মরণ ও স্মারক সংরক্ষণ কক্ষের দ্বারোদ্ঘাটন হয়ে গেল গত ১১ ফেব্রুয়ারি
    পূর্ব বর্ধমান জেলার খন্ডঘোষ থানার উখরিদ অঞ্চলের খাঁটিকার গ্ৰামে। নীহার স্মৃতি ভবনের গৃহকর্তা কাজী ফজলে বারি স্বপনের উদ্যোগে। উপস্থিত ছিলেন ইতিহাস ও সাহিত্যের গবেষক, অধ্যাপক এবং এলাকার গুণীজন। সরকারি নথি ও প্রমাণ অনুযায়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের সংখ্যা কম নয়। কাজী ফজলে বারি স্বপন পূর্বসূরী ও পারিবারিক ইতিহাস সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে আরেক অভিনব ইতিহাসের সূচনা করলেন। স্বাধীনতার ইতিহাসে উপেক্ষিত, পিতামহ মরহুম কাজী তোজাম্মল হোসেনকে চিরস্মরণীয় করার অভিনব উদ্যোগ। যিনি দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলের প্রতিষ্ঠিত ও সুপরিচিত বটুকেশ্বর দত্ত, রাসবিহারী বসু প্রমুখ স্বাধীনতা সংগ্রামী সহ আরো অনেক বিপ্লবীর মতো দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তিনি সেইভাবে এতদিন পরিচিত হতে পারেন নি। কিছু তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর তৃতীয় প্রজন্ম তথা পৌত্র আজ বহু গুণীজনের সান্নিধ্যে প্রায় বিস্মৃত স্বাধীনতা সংগ্রামীর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের সূচনা করলেন। তাঁর নামাঙ্কিত কক্ষের কক্ষের দ্বারোদ্ঘাটন তোজাম্মল হোসেন সাহেবের একমাত্র জীবিত সন্তান সৈয়দা আজিমা খাতুন। তাঁকে এই কর্মযজ্ঞে সহায়তা করেন স্বাধীনতা সংগ্রামীর পৌত্র কাজী ফজলে বারি এবং নাতি সৈয়দ নুরুল হাফিজ। এই সংগ্ৰহশালায় তোজাম্মল হোসেন সাহেবের ঘড়িসহ ব্যবহৃত দ্রব্যদি সহ বেশ কিছু বর্তমানে অব্যবহৃত এবং দুষ্প্রাপ দ্রব্যাদি দর্শনার্থীদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। উপস্থিত প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তি এই মহতী প্রয়াসের উচ্ছসিত প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ডঃ সেখ জাহির আব্বাস। এ ছাড়া অতিথি হিসাবে মঞ্চাসীন ব্যক্তিত্ব হলেন ড. রমজান আলি, তপন কুমার দে, অধ্যাপক সেখ আসাদ আলি, সাংবাদিক মোল্লা সফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক কাজী নুরুল হামিম প্রমুখ। মঞ্চাসীন ব্যক্তিত্বগণ সহ বেশ কয়েক জন গুণী ব্যক্তিকে বিশেষ সন্মাননা প্রদান করা হয়। এছাড়া উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য বিশেষ স্মারক,প্যাড,কলম, তোজাম্মল হোসেন স্মারক পুস্তিকা সহ কভার ফাইল প্রদান করা হয়। আয়োজনে বঙ্গীয় সাহিত্যিক অনুসন্ধান ট্রাস্ট এর পক্ষ থেকে ছিলেন, কাজী জুলফিকার আলি, সেখ মহম্মদ আমিন ও সেখ মাসুদ করিম । এই চার তরুণের অক্লান্ত পরিশ্রম করে সংস্থার অগ্ৰগতির প্রয়াসে ব্রতী হয়েছেন, তাঁদের এই মহতী প্রয়াস সার্থকতা লাভ করে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কবি সুফি রফিকুল সাহেব ও মাসুদ।