একুশে জুলাই উপলক্ষে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রস্তুতি মিছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক, মেদিনীপুর: করোনা সংক্রমণের জন্য গত দু’বছর কলকাতায় ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশ করা যায়নি। দু’বছর পর ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ হবে কলকাতার ভিক্টোরিয়া হাউজের সামনে। এই সভার প্রধান বক্তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একুশে জুলাই উপলক্ষে দিকে দিকে প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একুশে জুলাই উপলক্ষে করা হচ্ছে দেয়াল লিখন ও প্রস্তুতি সভা।

    পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সোনাখালী চক্রের উদ্যোগে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়ে নিয়ে একটি বিশাল মিছিল ও মিছিল শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত ছিলেন ঘাটালল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আশীষ হুদাইত,পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু বিশুই, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান শান্তুনু দে, অনিরুদ্ধ আলম প্রমুখ

    তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের দ্বিতীয় কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয় ঘাটাল বাস স্ট্যান্ডে। উপস্থিত ছিলেন ঘাটাল পৌরসভার চেয়ারম্যান তুহিন কান্তি বেরা, ভাইস চেয়ারম্যান অজিত দে, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দু বিশুই, পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা চেয়ারম্যান শান্তুনু দে প্রমুখ। সকল বক্তাই একুশে জুলাইয়ের গুরুত্ব ও আবেগ তুলে ধরেন।

    প্রসঙ্গত, সাল ১৯৯৩। তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। তখন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের ‘আগুনে নেত্রী’ তথা সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে জ্যোতি বসুর সরকার। এ সময় সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিং-এর অভিযোগ নিয়মিত শোনা যায় বিরোধিদের মুখে। এমন আবহেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচি দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই। কিন্তু সে বছর ওই সময় প্রাক্তন রাজ্যপাল নুরুল হাসানের প্রয়াণের জন্য কর্মসূচি পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়। ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার ডাকে মহাকরণ অভিযানের জন্য কলকাতার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার যুবকংগ্রেসকর্মী। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক সচিবালয়ে এই অভিযান রুখতে তৎপর হয় পুলিশ। বিভিন্ন ক্রসিং-এ গড়া হয় ব্যারিকেড। এরপরই হঠাৎ চলতে থাকে গুলি। সেই গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুবকংগ্রেস কর্মী। এই ‘শহিদ’রা হলেন- বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেক, ইনু। এই ১৩ যুবকংগ্রেসকর্মীর মৃত্যুতে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কার নির্দেশে গুলি চালাল পুলিশ, এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। উল্লেখ্য, সেসময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে পরবর্তীকালে এ ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্নিনচিট দেয় সিবিআই।

    ১৯৯৩ সালের এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। পরবর্তীকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন এবং ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবসে’র মর্যাদা দেওয়া হয়। আজও এই দিনে পৃথকভাবে সমাবেশ করে কংগ্রে। কিন্তু, তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে এ রাজ্যে প্রশ্নাতীতভাবে বৃহত্তর শক্তি হয়ে ওঠায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।