মণিপুরের ননি জেলায় বিধ্বংসী ধসে মৃত্যু হয় গোর্খা টেরিটরিয়াল আর্মির ১০৭নং ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান প্রীতম কুমার দত্তের

নিজস্ব সংবাদদাতা : গত ২৯ জুন মণিপুরের ননি জেলায় বিধ্বংসী ধসে মৃত্যু হয় গোর্খা টেরিটরিয়াল আর্মির ১০৭নং ব্যাটেলিয়ানের জওয়ান প্রীতম কুমার দত্তের। বাড়ি মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের বালিয়া গ্রামে। সোমবার রাতে মণিপুর থেকে প্রীতম দত্তের কফিনবন্দি দেহ ফিরল খড়গ্রামের বালিয়াতে। মঙ্গলবার বালিয়া পরেশনাথ সিংহ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে গান স্যালুটের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাঁর। গ্রামের সকলের প্রিয় প্রীতমকে শেষ বিদায় জানাতে উপস্থিত ছিলেন হাজার-হাজার মানুষ।
মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামের বালিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রীতম কুমার দত্ত। কান্দি রাজা বীরেন্দ্র চন্দ্র কলেজ থেকে ভূগোল অনার্স নিয়ে পাশ করার পর সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন প্রীতম। ছোট থেকেই পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ও মিশুকে স্বভাবের প্রীতম গ্রামের সকলের খুব প্রিয় ছিল। বাবা প্রভাত কুমার দত্তের মুদিখানার দোকান রয়েছে। মা সোমা দত্ত গৃহবধূ। একমাত্র সন্তান প্রীতম চাকরি পাওয়ার পর পরিবারে স্বচ্ছলতা ফেরে। মণিপুরে গোর্খা টেরিটরিয়াল আর্মির ১০৭নং ব্যাটেলিয়ানে কর্মরত ছিলেন প্রীতম। গত ২৯ জুন মণিপুরের ননি জেলায় বিধ্বংসী ধসের ঘটনার পর আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর। জানা যায়, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয় তাঁর। তারপরেই ডিউটি জয়েন করেন। ঘটনার সময় এক বন্ধুর সঙ্গে ফোনে কথাও বলেছিলেন প্রীতম। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ধসের কথাও জানান বন্ধুকে। কিন্তু তারপরেই ফোনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি প্রীতমের।এদিকে চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল প্রীতমের পরিবার। অবশেষে ঘটনার ৫দিন পর রবিবার প্রীতমের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয় তাঁর বাড়িতে। মৃত্যুর খবর পেতেই কান্নায় ভেঙে পরেন বাবা, বলেন, ” আমার একমাত্র অবলম্বন আর থাকল না। ও যেখানেই থাকুক, ভাল থাকুক।” ছেলের কফিনবন্দি দেহ আগলে ঠাঁই বসেছিলেন মা সোমা দত্ত। তিনি বলেন, ” আমার সঙ্গে ফোনে কথা বলে ও সেদিন ডিউটি জয়েন করেছিল। বলেছিল,, ছুটি পেলেই এবার বাড়ি আসবে। কিন্তু এ’ভাবে আসবে ভাবিনি। আমরা এবার কার ভরসায় বেঁচে থাকব।”প্রীতমের শিক্ষক অজয় রায়ও প্রীতমকে শেষ বারের মত দেখতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ” ছোট থেকেই প্রীতমের খেলাধুলায় খুব আগ্রহ ছিল। হরিণকে টেক্কা দেওয়ারা মত দৌড়ানোর ক্ষমতা ছিল ওর। যখনই আসত আমার সঙ্গে দেখা করত। সেই ছেলেটাই এ’ভাবে মারা গেল। প্রীতমের স্মৃতি চিরদিন মনে আগলে রাখব।”