হাওড়া শহরের রাস্তা সঙ্কীর্ণ তার মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পথ জি টি রোডের দু’পাশ হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা

নিজস্ব সংবাদদাতা : একটি শহরের মাত্র তিন শতাংশ রাস্তা যান চলাচলের যোগ্য! কারণ, শহরের অধিকাংশ রাস্তাই হকারের দখলে। কিংবা গাড়ি চালানোর উপযুক্তই নয়। এই তথ্য দিচ্ছে হাওড়া পুলিশ। সেই সামান্য পথেই আবার চলে ৩৫ হাজার অবৈধ টোটো, জানাচ্ছে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। প্রাচীন হাওড়া নগরীর জীবনরেখা কতটা সচল, তা বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে এই দুই তথ্যই বোধহয় যথেষ্ট।একেই হাওড়া শহরের রাস্তা সঙ্কীর্ণ। তার মধ্যে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পথ জি টি রোডের দু’পাশ হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় যানবাহন ও মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। অভিযোগ, ভেঙে পড়েছে ট্র্যাফিক ব্যবস্থাও। বেলাগাম পরিস্থিতিতে অনুঘটকের কাজ করেছে পথে নামা হাজার হাজার বেআইনি টোটো। আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের হিসাবে, হাওড়ায় বৈধ টোটো চলে ১৮০০। কিন্তু অবৈধ টোটো? সেই সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার! বড় রাস্তায় টোটো চলার নিয়ম না থাকলেও পুলিশের সামনেই সে সব সারা দিন দাপিয়ে বেড়ায় বলে অভিযোগ।

    হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রের খবর, শিবপুরের কাজীপাড়া থেকে বালি পর্যন্ত জি টি রোডের ফুটপাত সম্পূর্ণ হকারদের দখলে চলে গিয়েছে। বহু জায়গায় রাস্তা দখল করে গুমটি গজিয়ে ওঠায় পথ আরও সঙ্কীর্ণ হয়েছে। অভিযোগ, এ সবের কারণে ট্র্যাফিকের করুণ চেহারা দেখা যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র হাওড়া ময়দান চত্বরে গেলে। সেখানে মল্লিকফটক থেকে হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত জি টি রোডের এক ধারের ফুটপাতের পুরো দখল নিয়েছেন হকারেরা। অভিযোগ, পথও তাঁরাই শাসন করছেন। বাধ্য হয়ে মানুষকে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। ফলে যানবাহনও থমকে থমকে চলে।

    যাবতীয় অভিযোগ মেনে নিয়ে হাওড়া সিটি ট্র্যাফিক পুলিশের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘এটা ঠিকই হাওড়ার রাস্তা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ হওয়ায় যানজট লেগেই থাকে। তার সঙ্গে হকারের আধিক্যের কারণে ওই সমস্যা মিটছে না। অবৈধ টোটো সেই যন্ত্রণা কয়েক গুণে বাড়িয়েছে। হকারের বিষয়ে আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি। বেআইনি টোটোও মাঝেমধ্যে আটক করা হয়।’’ আটক করে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই উত্তর অবশ্য মেলেনি।

    হাওড়া শহরে পথের দুরবস্থা নিয়ে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, কলকাতা পুলিশ ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণে পারদর্শী। প্রয়োজনে হাওড়ার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের ভার তাদের দেওয়া হোক। চিঠিতে সুভাষবাবু অভিযোগ করেছেন, প্রচুর অটো-টোটো হাওড়ার রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং করা থাকে। পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না। তাঁর আরও অভিযোগ, দিনের ব্যস্ত সময়ে যাত্রী তুলতে বাসও যেখানে সেখানে দাঁড়ায়।

    হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তীর আশ্বাস, ‘‘খুব শীঘ্রই শহরে মেট্রো চালু হবে। ফলে যানজট, হকার-সহ অন্যান্য সমস্যা নিয়ে মেট্রো রেল, সিটি পুলিশ এবং রাজ্য সরকারের অন্যান্য দফতরের সঙ্গে বৈঠকে বসা হবে। সেখানেই সমাধানের পথ খোঁজা হবে।’’

    হাওড়ার নাগরিকদের বড় অংশের মত, এ বার মেট্রোর কথা মাথায় রেখে প্রশাসন অন্তত গুরুত্বপূর্ণ স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিক। মানুষের পথের দাবি না মেটালে মেট্রো চালু করেও সমস্যা মিটবে না।