শহর বর্ধমানে ব্যঙ্গচিত্রে বিজেপি বিধায়কের ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’

নতুনগতি ; আজিজুর রহমান, পূর্ব বর্ধমান : বর্ধমান শহরের কার্জন গেট চত্বর, পারবীরহাটা মোড় সহ তিনটি জায়গায় বসানো হয়েছে হোর্ডিং। তাতে রয়েছে বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর ব্যঙ্গচিত্র। ফলে সম্ভবত জেলা জুড়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। শিরোনাম করা হয়েছে ‘নিরুদ্দেশ সংবাদ’। কোনও নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধানে যেভাবে পোস্টার লেখা হয় ঠিক তেমনি ভাবে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেল-এর এই হোর্ডিং-এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য নাম উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া তার কোন ছবিও ব্যবহার করা হয়নি। তবে একটি ব্যঙ্গচিত্র রয়েছে। জেলার প্রান কেন্দ্রে হোর্ডিং প্রকাশ্যে আসতেই বিজেপির জেলার সহ সভাপতি শ্যামল রায়, যুব মোর্চার জেলা সভাপতি পিন্টু সাম সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতারা পারবীরহাটা এলাকায় ছুটে আসেন। প্রতিবাদে সরব হন তারা। সেখান থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ করে তৃণমূলের এই কাজকে রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি বলে সরব হন তাঁরা। শ্যামল রায় বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী যতদিন ওদের দলে ছিল তখন ভাল ছিল। এখন বিরোধী দলনেতা হয়ে তৃণমূলের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছেন। আর তাই এখন এমন কুৎসা করছে তৃণমূল। এরপরই তিনি পাল্টা হোর্ডিং টাঙানোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “অবিলম্বে এই হোর্ডিং খোলা না হলে বৃহস্পতিবার আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে পোস্টার দেবো। তখন সামলাতে পারবে তো তৃণমূল।” এদিকে, বর্ধমানের কলিগ্রামে সভাস্থলের জমি মালিকদের সম্মতিপত্র আদায় করতে না পারায় শুভেন্দু অধিকারীর বৃহস্পতিবারের সভা বাতিল হয়েছে বলে জানতে পারা গেছে।

    এদিকে হোর্ডিং এ লেখা হয়েছে, ‘রূপ: দেখতে গোলগাল, নাদুসনাদুস। মেরুদণ্ড নেই। গলায় গেরুয়া উত্তরীয়। ঠিকানা: বাড়ি কাঁথিতে।’ অসুখেরও উল্লেখ রয়েছে সেখানে। লেখা হয়েছে, ‘অসুখ: ভোট এলেই লাইট বন্ধ করে দেন। নিয়মিত দুশো দুশো চিৎকার করে মধ্যরাতে ঘুম থেকে উঠে পড়েন। অকারণ ভাট বকতে ভালবাসেন। ডিসেম্বরে সরকার ফেলে দেওয়ার হুমকি দেন। তারপর লজ্জাবতী হয়ে মুখ লুকান। ক্যামেরায় ঠোঙা মুড়িয়ে ঘুষ নিতে দেখা যায়।’ এই প্রষন্তই শেষ নয়। হোর্ডিংয়ে আরও লেখা হয়েছে, ‘বিশেষ চিহ্ন: অভিষেক শব্দটি শুনলেই দাঁত খিঁচিয়ে কামড়াতে আসেন। বেগম বেগম করে হেঁচকি তোলেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হলে বিরোধিতা করেন, কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়লে চুপ থাকেন।’ পাশে একটি কার্টুন বা ব্যঙ্গচিত্র দিয়ে নীচে লেখা রয়েছে, ‘এমন কোনও ব্যক্তিকে খুঁজে পেলে দ্রুত সন্ধান দিন।’ “ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি তো কলা খায়নি।” বিজেপির হোর্ডিং নিয়ে মন্তব্যকে এইভাবেই ব্যাখ্যা করছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস। তিনি বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেলের ওই হোর্ডিংয়ের কোথাও শুভেন্দুর নাম লেখা নেই। এমনকি তার ছবিও নেই। কিছু কথা লেখা আছে। বিজেপিই তো বলে দিচ্ছে যে কথা লেখা হয়েছে তা শুভেন্দুকে নিয়ে। তৃণমুল আইটি সেল কিছু কথা লিখে সন্ধান চেয়েছিল। তার সন্ধান বিজেপিই দিয়ে দিচ্ছে।” পাশাপাশি, বিজেপির পাল্টা কুরুচিকর হোর্ডিং দেওয়ার বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “ওরা মুখ্যমন্ত্রী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কুৎসা করতে বাকিটা কী রেখেছে। শুভেন্দু অধিকারী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট্ট শিশুর জন্মদিন নিয়েও কুৎসা করেছে।” গত ১ ডিসেম্বর দেবাংশু ভট্টাচার্যকে তৃণমূল সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি সেলের রাজ্যের ইনচার্জ করে দল। তার পর এই হোর্ডিং পড়লো শহর বর্ধমানে। সূত্রের খবর, কলকাতা থেকেই পাঠানো হয়েছে এই হোর্ডিং। তৃণমূলের আইটি সেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতাকে টার্গেট করেই প্রচারে ঝাঁপাচ্ছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

    এদিকে, বৃহস্পতিবার বর্ধমানের কলিগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর সভা বাতিল হওয়ায় তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিজেপি। দলের জেলার মুখমাত্র সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কাঁথিতে শুভেন্দু অধিকারীর সভা দেখে ভয় পেয়েছে তৃণমূল। পুলিশকে দলদাসে পরিণত করে সভার অনুমতি দেয়নি। তাই বাতিল হয়েছে।” তৃণমূল মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস ওই অভিযোগ উড়িয়ে বলেছেন, “যাদের জমি তারা সম্মতি দেয়নি তাই পুলিশের অনুমতিও মেলেনি। আর তৃণমূল পুলিশকে নিয়ে রাজনীতি করে না। ওটা বিজেপির স্বভাব। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে বিজেপি। আর কয়েকদিন আগে যেখানে সভা হওয়ার কথা ছিল তার পাশের গ্রামে কম্বল বিলি করতে গিয়েছিল ওরা। যতজন বিজেপি নেতা গিয়েছিল বিলি করতে নেওয়ার লোক তার থেকে কম ছিল।”