সোমা মাইম থিয়েটারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উৎসব

সম্প্রীতি মোল্লা : সম্প্রতি কলকাতার আগরপাড়ায় পশ্চিম পল্লীতে সোমা মাইম থিয়েটারের নিজস্ব বাসভবনে তিন দিনব্যাপী তৃতীয় মাইন্ড ফিয়েস্তা গ্লোবাল উৎসব পালিত হলো মহাসমারোহে।মূকাভিনয় শিল্পের অলিন্দে মূকঅভিনেত্রী দের সম্মান জানানোর প্রয়াসে এই উৎসব এর সূচনা শুরু হয় প্রথম দিন প্রদীপ প্রজ্জ্বলন দিয়ে। সোমা মাইম থিয়েটার এর নির্দেশক ও স্রষ্টা সোমা দাস মাননীয় অতিথিদের নিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করলেন।বিশিষ্ট অতিথিদের মধ্যে ওইদিন ছিলেন শ্রী চন্দন সেন, অঞ্জন দেব, সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত, আশিষ চট্টোপাধ্যায়, দীপা ব্রহ্ম ও আরও অনেকে।এরপর অতিথিদের সংবর্ধনা ও বরণ এর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় প্রথম দিনের অনুষ্ঠান। অথিতিবর্গরা তাদের মূল্যবান বক্তব্য রাখেন।

    তারপর অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ চার জন বিশিষ্ট মূকাভিনেত্রী দের মূকাভিনেত্রী সন্মান প্রদান । সংবর্ধিত করে নেওয়া হয় তাদেরকে । সেই চারজন যথাক্রমে শ্রীমতি বন্দনা রায়, শ্রীমতি শিপ্রা চক্রবর্তী ও শ্রীমতি আহেলি গুহ ও জান্নাতুল কাউসার প্রত্যাশা । তাদের হাতে সম্মান তুলে দেন বিশিষ্ট নাট্য নির্দেশক ও অভিনেত্রী শ্রীমতি সুরঞ্জনা দাশগুপ্ত ও শ্রীমতি দীপা ব্রহ্ম মহশয়াদ্বয় । এই সম্মানে আপ্লুত সমস্ত মূকঅভিনেত্রীই। তাদের কথা মনে রেখে ঢাক বাদ্যি সহযোগে এই সম্মানে তখন সকলেই অভিভূত।

    এরপর অনুষ্ঠিত হয় পাঁচ টি মূকাভিনয় ও নাটকের দলের নাটক – সোমা মাইম থিয়েটারের নিজস্ব মূক নাটক Sophocles এর “Antigone” এর অনূদিত থিয়েট্রিকাল মাইম “আন্তিগনে” যা প্রথম বার মঞ্চায়িত হয় । প্রতিটি দর্শকের মন জয় করে নেয় এই নতুন প্রযোজনা । তারপর থিয়েট্রিক্স ঠাকুরণগর , ঐহিক সৃষ্টি সুখের উল্লাসী (কলকাতা) , অমিয় মেমোরিয়াল ক্রিয়েটিভ এক্ট (আসানসোল) ও সাইলেন্ট থিয়েটার এক্ট সোসাইটি (মধ্যপ্রদেশ) ইত্যাদি দলের নাটক ও মূকাভিনয় প্রদর্শিত হয় । প্রতিটা দর্শক এই অনুষ্ঠানের রসদে আপ্লুত হয়। দ্বিতীয় দিনে সকাল দশটা থেকে শুরু হয় মাস্ক তৈরি একটি কর্মশালা। যেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে ছোট ছেলে মেয়েরা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে এছাড়াও কামারহাটির সাথী ফাউন্ডেশন থেকে কিছু ছেলে মেয়ে এবং শিক্ষক শিক্ষিকারা অংশগ্রহণ করেন । এই কর্মশালার পরিচালনা করেন শ্রী দীপঙ্কর সমাদ্দার । মূকাভিনয় এর আঙ্গিনায় বিভিন্ন মুখোশ তৈরীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, শিশু কিশোরদের মনের বিকাশে তৈরী হওয়া মাস্ক আগামী সময়ে সোমা মাইম থিয়েটার এর প্রযোজনায় যথাযথ মর্যাদায় ব্যাবহার করা যাবে এটাই এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য।এছাড়াও চলেছে গ্লোবাল ইভেন্ট , ছয়টি দেশ থেকে থাইল্যান্ড , গ্রীস , জার্মানি , ইতালি, বাংলাদেশ ও ফ্রান্স দেশের অনলাইনের মাধ্যমে সোমা মাইম থিয়েটারের ফেসবুক পেজ থেকে অনুষ্ঠিত হয় তাদের মূকাভিনয় প্রদর্শন অনুষ্ঠান । সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় ঠাকুরণগর মাইম একাডেমির একটি মূকাভিনয় এবং এস এম টি এর গেছো সুমন বসাক , সমীরণ ঘোষের একটি একক মূকাভিনয় এবং সঙ্গীত প্রদর্শন করেন দীপ মান্না । সমাপ্ত ঘটে অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন ।তৃতীয় দিন অর্থাৎ কর্মকান্ডের শেষ দিন । এইদিনে সোমা মাইম থিয়েটার এর এবছর থেকে শুরু হয় “মনের মানিক সম্মান”। মূকাভিনেতা প্রয়াত মানিক মজুমদার এর স্মৃতি স্মারক। স্বর্গীয় মানিক মজুমদার এর স্ত্রী শ্রীমতি পাপিয়া মজুমদার এর হাত দিয়ে এই সম্মান তুলে দেওয়া হয় রঙ্গকর্মী নাট্য দলের অভিনেতা শ্রী অনিরুদ্ধ সরকার ও মধ্যপ্রদেশের সাইলেন্ট থিয়েটার অ্যাক্ট এর নির্দেশক শ্রী পুষ্পেন্দ্র ভার্মা র হাতে। উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য জন শ্রী প্রবীর গুহ, শ্রীমতি তৃপ্তি মিত্র (রানী দি), শ্রী অপূর্ব দে মহাশয়। এরপর পাঁচটি নাটক ও মূকাভিনয় অনুষ্ঠিত হয় । লাইনঅ্যাক্টিং লাইন এর শ্রী নিশীথ মন্ডল ( মালদা ), রংতাল থিয়েটার ( হালিশহর ) , লাকি গুপ্তা ( জম্মু ), সাইলেন্ট থিয়েটার এক্ট সোসাইটি ( মধ্যপ্রদেশ ) এবং অল্টারনেটিভ লিভিং থিয়েটার ( মধ্যমগ্রাম )। অনুষ্ঠানের প্রত্যেকটি অভিনয় প্রতিটি দর্শকের মন জয় করে । প্রশংসনীয় হয় সোমা মাইম থিয়েটার । এই দিন মাস্ক তৈরির ওয়ার্কশপ এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় মুখোশ তৈরীর জন্য সবাইকেই পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।১৭থেকে ১৯শে ডিসেম্বর এই তিনদিনে ভিন্ন ধারার শিল্পের চর্চাকে সম্মান জানিয়ে সমাপ্ত হয় এই বছরের মাইম ফিয়েস্তা 3 (2022)। এই আশা রেখেই ভবিষ্যতে তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠান সাফল্য লাভ করবে বিগত অনুষ্ঠান গুলির মতোই । কোনো আর্থিক সহায়তা ছাড়াই এই উৎসব বহু অতিথি ও সম্মানিত দর্শকদের উপস্থিতিতে সফল। তাদের দলের ভবিষ্যতের কাজ প্রদীপের নতুন আভার মতো জ্বলে থাকবে নতুন দিশার খোঁজে ।