|
---|
মহম্মদ শেখ আরেফুল , পূর্ব মেদিনীপুর: ছেলেটির নাম সোনু, ভালো নাম রণো সরকার, বয়স ২৩ বছর!কলকাতার টালিগঞ্জে একটি ছট্টো বাড়ি৷ পেশায়, একটি ওষুধের দোকানের এম্বুলেন্স চালক৷
গত বছরের মার্চ এ করোনার প্রথম ঢেউ এর সময় ১৫২ জন পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলায় এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে আমাদের গাড়ি করে নিজেদের জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।
এই দ্বিতীয় ঢেউ এ ওর সময়ের আকাল৷
দিনে এখন ৩/৪ ঘন্টার বেশি ঘুম হচ্ছে না। কারণ ও ফোন বন্ধ রাখে না।
একের পর এক করোনা আক্রান্তদের সাইরেন বাজিয়ে, এই আকালে অসংবেদনশীলতার অন্ধকার চিড়ে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছে।
ঘুমাতে বললে নিজস্ব ভঙ্গিতে বলে সবাই তো কানে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে’ই আছে। এই সময় আমরা কয়েকজন না জেগে থাকলে, মানুষ বাঁচবে, বল ?”
পয়সার অভাবে ১১ ক্লাস এর পরে পড়া বন্ধ করে দিতে হয়। বছর চার বয়স যখন, মা, বাবা দুজনেই মারা যান। ও আর ওর দাদা , বড় হয় দিদার কাছে!
দাদা ভিক্ষা করে আনলে পেট চলত।
মাঝে মধ্যে দাদার সাথে ও নিজেই ভিক্ষা করতে বের হত। তার মধ্যেই অবৈতনিক স্কুলে মাধ্যমিক পাস করে ১১ ক্লাস এ ওঠে।
এই সময় দিদা ও মারা যান৷
তখন সোনু ঠিক করে আর নয়, রোজগার চাই। সেই ইস্তক এম্বুলেন্স এর স্টিয়ারিঙ-এ হাত৷
গত কয়েক দিনে সোনুর জন্য আমরা ১৭ জন কোভিড আক্রান্ত মানুষকে হয় হাসপাতাল, নয় সেফ হোম , নয় টেস্ট করানো নিয়ে যেতে পেরেছি!
এই ১৭ জনই সুস্থ হয়ে উঠছেন!
এঁদেরই একজন , এক ষাটোর্ধ বয়স্কা শিক্ষিকা, আমাদের বললেন – “দেশ সোনু সুদ এর কথা জানে, কিন্তু আমাদের কাছে আমাদের সোনু’ই সব” !
বহু পরিযায়ী শ্রমিকের পরিবারের কাছে সোনু ওরফে রণো সরকারের খাওয়ার নেমতন্ন জমে আছে!
বললেই বলে – এই যাত্রা যদি বেঁচে যাই, এক মাস কাজ বন্ধ রেখে সবার বাড়ি খেতে যাবো। একসময় আমার কেউ ছিল না । বলো, আজ আমার কত বড়ো ফ্যামিলি”!
দায় এড়ানোর ধ্বস্ত সময়ের বধিরতা কে চিড়ে রনো’র এম্বুলেন্স ছুটে চলেছে! মানুষের পাশে থাকার অঙ্গিকার নিয়ে সনু ওরফে রণো সরকার ৷