মিড-ডে মিলে মুসলিমদের হাতের রান্না এবং সাথে খাওয়া যাবে না! আলাদা আলাদা রান্না স্কুলে, ঘটনা সুতি

সাইফুদ্দিন মল্লিক : শিক্ষাকে আলোর প্রদীপ বলা হয়। কিন্তু সেই শিক্ষা মন্দির বিদ্যালয়ে চলছে জাত পাত ধর্মের বিভাজন। ধর্মের কারনে মিড – ডে মিলের খাবার একসাথে বসে খাওয়া হয়না এমনকি রান্নাও আলাদা হয়। দীর্ঘ নয় বছর ধরে চলছে শিক্ষাকেন্দ্রে এই বিভাজন। ঘটনা মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহাকুমার সুতি থানা এলাকার রামডোবা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রের।

    সুতির আইরন ব্লকের প্রত্যন্ত রামডোবা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে দু’টি আলাদা ঘরে রান্না হয় মিড ডে মিল। হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের পড়ুয়ারা সেই খাবার নিয়ে আলাদা আলাদা বসে খায়। সহকারী শিক্ষক অসিত কুমার দাস বলেন ঘটনার শুরু ২০১০ সালের, হটাৎ বসন্তপুরের ছাত্র ও অভিভাবকরা (উনারা হিন্দু সম্প্রদায়ের) এসে বলেন আমরা মুসলিমদের হাতের রান্না এবং ওদের সাথে বসে খাবো না। বেশ কয়েকমাস মিড – ডে মিল বন্ধ থাকে, স্কুল শিক্ষা অধিকারিক, বিডিও সকালে আমাদের চাপ সৃস্টি করতে থাকে। প্রশাসনিক অধিকারির মাতিন সাহেব বলেন মিড – ডে মিল বন্ধ রাখা ও বাতিল করা যাবে না, চালু করতে কোন যে কোন পথে চালু করতে হবে। অধিকারিক, অভিভাবক, পরিচালন কমিটি সকলে বসে সেই দশ সাল থেকে উক্ত ভাবে রান্না করে এবং আলাদা আলাদা ভাবে খাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা। তিনি আরো বলেন আমি খুব দুঃক্ষিত, মর্মাহত, এটা মানতে কোন ভাবেই কাম্য নয়। এক রাঁধুনি সুতিরকা মন্ডল বলেন, হিন্দুদের আপত্তি হওয়ার পর আমরা আসলাম তার পর থেকে রান্না করছি আর এই ভাবে আলাদা আলাদা ভাবে খাওয়া হচ্ছে। রামডোবা মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্রে প্রায় ৩৩০ জন ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। দুই গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা, রামডোবা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম। বসন্তপুরের বেশির ভাগ মানুষ হিন্দু। গ্রামবাসীরা মূলত বিড়ি তৈরি করে সংসার চালান। বাকিরা ভিনরাজ্যে মিস্ত্রির কাজ করেন। দুই গ্রামেই সাক্ষরতার হার খুবই খারাপ।

    খাওয়ার সময় বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় একটি আলাদা ঘর থেকে হিন্দুদের রাঁধুনির থেকে খাবার নিয়ে হিন্দু ছাত্রছাত্রীরা একসাথে খাবার খাচ্ছে এবং মুসলিমরাও একটি ঘর থেকে খাবার নিয়ে আলাদা খাচ্ছে। সুতি-১ ব্লক আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ বারুই বলেন, ‘আমি আগে শুনেছিলাম। তখনই প্রধান শিক্ষককে ডেকে বলেছিলাম, বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য। একসঙ্গে যাতে রান্না হয়, সে ব্যবস্থাও করতে বলেছিলাম। তার পর আর খোঁজ নেওয়া হয়নি। এ বার খোঁজ নিয়ে দেখছি।

    স্কুলের প্রধান শিক্ষক পশুপতি ঘোষ বলেন, ‘অনেকবার চেষ্টা করেও সমস্যার সমাধান হয়নি। সেই কারণেই একসঙ্গে রান্না করা হয় না। তবে যাতে হয় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
    রাজ্যের মন্ত্রী জাকির হোসেনের বাড়ি সুতি এলাকাতেই। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি স্কুলে গিয়ে সমস্ত অভিভাবকদেরকে সঙ্গে নিয়ে বসে আলোচনা করে, যাতে একসঙ্গে রান্না হয়, সে ব্যবস্থা করব। আজকালকার দিনে এ জিনিস মানা যায় না। সমাজসেবী এবং রঘুনাথগঞ্জের এক স্কুলের শিক্ষক পীযূষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘স্কুলের মধ্যেও যদি এই ভেদাভেদ থাকে, তা লজ্জাজনক। প্রশাসনের উচিত এ সব কঠোর ভাবে বন্ধ করা।’ শিক্ষক অসিত দাস বলেন মাস দুয়েক আগে আবার এক সাথে রান্না ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের রাঁধুনি ও অভিভাবকরা রাজি হচ্ছে না।