টেন্ডারে বেনিয়মকে ঘিরে তৃণমূলেরই প্রধান ও সদস্যদের মারপিট, ভাঙচুর পঞ্চায়েত দফতরে উত্তপ্ত মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর 

নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের ভিতরেই তৃণমূলের প্রধান ও দলেরই কয়েকজন সদস্যের সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়াল। দুপক্ষের অনুগামীরাই একে অন্যের উপরে লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। এমনকি গলায় চাদর, মাফলার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টাও হয় বলে একে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে। লোহার রডের আঘাতে প্রধান ও এক সদস্যের মাথা ফেটেছে বলেও অভিযোগ। সদস্যদের অভিযোগ, টেন্ডারে বেনিয়ম হচ্ছে কেন, প্রধানের কাছে সেই অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন দলেরই তিন সদস্য। ওই সময় প্রধান দলবল নিয়ে তাদের উপরে হামলা চালান বলে অভিযোগ। যদিও সদস্যদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা ও ভাচুরের অভিুযোগ তুলেছেন প্রধানও। এক সদস্যের নেতৃত্বে তার অনুগামীরা পঞ্চায়েতে ঢুকে তার উপরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। ঘটনায় জখম হয়েছেন উভয়পক্ষেরই কয়েকজন। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বৃহস্পতিবার ওই ঘটনাকে ঘিরে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা ছড়ায়। আর ওই ঘটনাকে ঘিরে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসে পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর এ। ঘটনার জেরে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় হরিশ্চন্দ্রপুর থানার  পুলিশ। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসে।

    পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, সদস্যদের অন্ধকারে রেখে প্রধান একতরফাভাবে সব কাজ করছেন বলে বৃহস্পতিবার বিডিওর কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়েছিলেন দলেরই সদস্য রফিকুল ইসলাম ও আরোও দুই সদস্য। বিডিও অফিস থেকে তারা সোজা পঞ্চায়েত দফতরে যান। সেখানেই প্রধান ও সদস্যদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে বচসা শুরু হয়। বচসার সময়েই দুপক্ষের অনুগামীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ।

    দুপক্ষেরই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এদিকে দলেরই প্রধান ও সদস্যদের বিবাদ নির্বাচনের মুখে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল। পাশাপাশি কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা।

    তৃণমূল সুপ্রিমো বারবার বলছে দলের মধ্যে কোনো গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। মিলেমিশে কাজ করতে হবে সবাইকে। জনগণকে সঠিক পরিষেবা দিতে হবে। দুয়ারে সরকার, পাড়ায় পাড়ায় সমাধান একাধিক কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে রাজ‍্য সরকার। তবে  পঞ্চায়েত স্তরে দলেরই প্রধান, সদস্যদের এহেন ঘটনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে রয়েছে দল বলাই বাহুল্য। জেলা নেতৃত্ব ঘটনা নিয়ে কতটা তত্পর হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়।

    পঞ্চায়েত সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, “আমরা পঞ্চায়েতে কোনো ভাঙচুর করিনি। বিডিওর সাথে মিটিং সারার পর পঞ্চায়েতে গিয়ে উঠেছিলাম, বসার আগেই প্রধান গালাগালি করা শুরু করলো।বেআইনি ভাবে পঞ্চায়েতের টেন্ডার লোককে পাইয়ে দিচ্ছে, এই অভিযোগ নিয়ে গেছিলাম আমরা। এরপর তার লোকজন নিয়ে আমাদের উপর মারধর শুরু করেন।

    পঞ্চায়েত প্রধান তফাজ্জল হকের বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, “আমি পঞ্চায়েতে বসে ছিলাম এমন সময় পাঁচ ছয়জন মিলে আমার উপর হামলা করে। তারা বলছে বেআইনিভাবে টেন্ডার দিতে হবে। আমি রাজি না হওয়ায় অফিস ভাঙচুর করে। আমায় প্রচুর মারধর করেছে। আমার কিছু কাগজপত্র ছিল সেগুলো নিয়েছে। তারা কংগ্রেসের মেম্বার এখন তৃণমূল হয়েছে।”

    অন্যদিকে আরেক পঞ্চায়েত সদস্য রফিকুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন ,”প্রধান এবং ঠিকাদার মিলে লেবারদের টাকা লুটপাট করে আমাকে ধমক দেয়। তারা বলে আমরা যা ইচ্ছে তাই করব। আরো লোকজন ডেকে আমাদের মারধর করে। চাদর দিয়ে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে।” পঞ্চায়েত ভাঙচুরের প্রসঙ্গে তিনি জানান আমরা পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছি পঞ্চায়েত ভাঙচুরের জন্য নয়। এগুলো ভিত্তিহীন মিথ্যা আরোপ।

    তৃণমূল নেতা জেলা মুখপাত্র শুভময় বসু জানিয়েছেন, “দৌলতপুরের ঘটনা সম্পর্কে ব্লক সভাপতিকে অবগত করা হয়েছে। প্রধান ও মেম্বারদের মধ্যেকার সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এবং প্রসাশনকেও বলা হয়েছে যাতে সঠিক ঘটনার তদন্ত করা হয়।

    বিজেপি নেতা অজয় গাঙ্গুলী তৃণমূলকে সরাসরি কটাক্ষ করে বলেন, “কাল হরিশচন্দ্রপুরের প্রধানকে অন্য সদস্য এবং তৃণমূলের কিছু দুষ্কৃতী মিলে মারধর করেছে। এটা তো দিদির অনুপ্রেরণায় হচ্ছে, এখন প্রধান ভোটের আগে নিজের ইমেজ ভালো করার জন্য একটু ভালো হতে গেছিল। নিজেদের মধ্যে মারপিট,তোলাবাজি ,সামাজিক কাজকর্মের টাকা তুলতে তুলতে এমন অবস্থা হয়েছে এখন আর প্রধাণের কথা শুনছে না। ২০২১ এ ভারতীয় জনতা পার্টি আসছে এবং মানুষ সেই দিকে তাকিয়ে বসে আছে। গোষ্ঠী-দ্বন্দের জেরে জর্জরিত আগেই ছিল শাসকদল, এবং ভোটের আগে ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। মালদায় এই গোষ্ঠী দ্বন্দের জেরে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এই ঘটনার পর আক্রমণ করতে ছাড়ছেনা বিরোধীরা।