জগতজোড়া ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান

জগতজোড়া ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান

     

     

    নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক: সাম্প্রতিক বিশ্বব্যবস্থা ও পরিকাঠামো ব্যর্থ হচ্ছে সংকট মোকাবিলায়। বিশেষত এই করোনা-অতিমারিকালে। এরই প্রেক্ষিতে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি ও নেতাদের মানসিকতা বদলানোর আহ্বান জানালেন। আঙ্কারায় অনুষ্ঠিত ১২তম অ্যাম্বাসাডর কনফারেন্স এই ডাক দিলেন রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। সাধারণ জনগণের বদলে গুরুত্ব পাচ্ছে কিছু ক্ষমতাধর মানুষ। গরিবের বদলে সুবিধা পাচ্ছে ধনীরা। জোর দিয়ে এমনই বললেন তিনি। রাষ্ট্রসংঘে ‘পাঁচের চেয়ে বিশ্বটা অনেক বড়’ স্লোগান তোলা এরদোগান চাইছেন এমন এক ব্যবস্থা যেখানে ক্ষমতার চেয়ে বড় হবে ন্যায়। আগামীদিনে মানুষের নিরাপত্তা ও সুস্থিরতাকে নিশ্চিত করবে এমন প্রতিষ্ঠান দরকার বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুকেন্দ্রিকতা ও আঞ্চলিকতার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। করোনা আবহে বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির চেহারার পরিবর্তন ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও ঠান্ডা যুদ্ধের পর তুরস্ক প্রশাসন নানা সম্ভাবনা হাতছাড়া করেছে। যাইহোক আঙ্কারা তার ঐতিহাসিক গৌরব ও ভূরাজনীতিকে কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর। তুরস্কের বিদেশনীতি জনকেন্দ্রিক। এমনটাই দাবি এরদোগানের। বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের মানুষ বিপদে সাহায্যের প্রার্থনা করলে তুরস্ক তার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত। জানিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে ১৪১টি দেশ থেকে ১ লক্ষেরও বেশি তুর্কি নাগরিককে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আরও ৬৭টি দেশ থেকে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি নাগরিককে ফেরানো হয়েছে। করোনা-অতিমারিতে নাজেহাল প্রায় ১৫৫টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তুরস্ক। দাবি এরদোগানের। সেবামূলক এজেন্সি টিআইকেএ,বিদেশে থাকা তুর্কি নাগরিক ও এই ধরনের মানুষদের জন্য কাজ করা তুরস্ক রেড ক্রেসেন্ট,তুরস্ক এয়ারলাইন্স,মারিফ ফাউন্ডেশন,ইউনুস এমার ইন্সটিটিউট ও অন্যান্য মন্ত্রক এই করোনা ক্রান্তিকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

     

    যে সব এলাকায় অস্থিরতা চলছে সেই বিষয়েও আলোকপাত করেছেন এরদোগান। ২০১১ সালের গৃহযুদ্ধের পর সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষ গৃহহারা এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ওয়াইপিজি বা পিকেকে ও দায়েশ বা আইসিস সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ৪ লক্ষেরও বেশি সিরিয়াবাসীকে উদ্ধার করেছে তুরস্কের সামরিক বাহিনী। উত্তর সিরিয়াতে তাঁদের অপারেশন সেখানকার মানুষদের নিরাপত্তাকে নিশ্চিতকরেছে। অনেক দেশের নাম না নিয়ে সমালোচনা করেছেন এরদোগান যারা সমৃদ্ধশালী হওয়া সত্ত্বেও সিরিয়ার সংকটের মুহূর্তে ।

     

    সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি। মানবাতার খাতিরে তুরস্ক পাশে দাঁড়িয়েছে সিরিয়ার। বলছেন এরদোগান। লিবিয়াকেও নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন তিনি। সেখানে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। রাজধানী ত্রিপোলি আক্রান্ত হওয়ার মুখে পড়েছিল। তুরস্কের সামরিক বাহিনী তা সামলেছে। এরদোগান বলেছেন‘লিবিয়ার মানুষের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া,স্বাস্থ্য,বাণিজ্য,অর্থনীতি,সামরিক সাহায্য প্রভৃতি দিকে সাহায্য করব আমরা।’ প্রসঙ্গত কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে তুরস্ক সন্ধান পেয়েছে ৪০৫ বিলিয়ন কিউবিক মিটার প্রাকৃতিক গ্যাসের। এতে নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে এই দেশ। পাশাপাশি তিনি আজারবাইজান প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন। এমআইএনএসকে ত্রয়ী আমেরিকা, ফ্রান্স ও রাশিয়া এখানকার দীর্ঘদিনের অশান্তি নিয়ে দৃঢ় কোনও পদক্ষেপ বা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। তবে তুরস্ক প্রশাসন চুপ করে বসে থাকবে না বলে স্পষ্ট ভাষায় বার্তা দিয়েছেন এরদোগান। এই সঙ্গে তিনি বলেছেন গোটা বিশ্বে ইসলাম-আতঙ্ক ও জেনোফোবিয়া যে হারে বাড়ছে তাতে বিদেশে থাকা লক্ষ লক্ষ তুর্কিরা বিপদে পড়ছে। কারণ তাদের মসজিদ-স্কুল ও দোকানগুলি নিয়মিতভাবে নিশানা করা হচ্ছে। এই জগতজোড়া ইসলামফোবিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দিয়েছেন তিনি।