ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে দশগ্রাম হাইস্কুলের প্রয়াত জনপ্রিয় প্রাক্তন শিক্ষক বিশ্বরঞ্জন দাস অধিকারীরকে স্মরণ করলেন গুণগ্রাহীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা,  মেদিনীপুর* : প্রযুক্তির সাহায্যে অনুষ্ঠিত হলো স্মরণ সভা। বিশ্ব জুড়ে করোনা সংকট। ঘরে বাইরে সংক্রমণের ভ্রুকুটি, মৃত্যুর আশংকা। এই সংক্রমণের শিকার বিশ্বের বিভিন্ন পেশার ও কর্মের মানুষ। বিভিন্ন বয়স তাদের, দেশকালের সীমা নেই। এইরকম সংকটময় মুহূর্তে এক জনপ্রিয় শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে। স্ত্রী ছেলে কলকাতা তে থাকলেও মেয়ে জামাই থাকে আমেরিকায়।
আর শিক্ষার্থী, আত্মীয় স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ও বিদেশে। শেষ শ্রদ্ধাটুকু জানাতে পারেনি কেউই। তা বলে স্মরণ করতেও পারবেন না কেউ । উদ্যোগী হলেন আমেরিকা নিবাসী কন্যা। সর্বতোভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তাঁর বিদ্যালয়ের প্রধান আচার্য ও পরিচালন সমিতি। তিনি দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদেন রসায়ন বিভাগের প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষক বিশ্বরঞ্জন দাস অধিকারী। করোনা আবহে নিজের জীবন বিপন্ন করে দুঃস্থ নিরন্ন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন যিনি, সেই বিশ্বরঞ্জনবাবু নিজের প্রাণ হারালেন করোনা রোগে আক্রান্ত হয়ে উনসত্তর বছর বয়সে। তিনি দশগ্রাম স্কুলের স্বনামধন্য শিক্ষক। দীর্ঘ তাঁর সফল ও সুপ্রতিষ্ঠিত ছাত্রের তালিকা। দীর্ঘ তিরিশ বছর শিক্ষকতা জীবনে তিনি অসংখ্য কৃতী ছাত্র উপহার দিয়েছেন। প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মেলবন্ধন হলো তার স্মৃতি চারণায়।সূচনা হলো বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে। তারপর প্রধান শিক্ষকের মুখবন্ধ। আমেরিকা থেকে কন্যা দীপার হৃদয় বিদারক উপলব্ধি। একে একে সহকর্মী ও আত্মীয় দীপক পট্টনায়েক , ইম্পিরিয়াল কলেজ, লন্ডন এর অধ্যাপক বিকাশ পাল, বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অধ্যাপক অনুপম পরিয়ারী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক নিখিল গুছাইত, তার শিক্ষকমহাশয় পরিতোষ পরিয়ারী । তাছাড়া অসংখ্য চিকিৎসক ,ইঞ্জিনিয়ার, প্রধান শিক্ষক,সহকারী শিক্ষক , সরকারী পদাধিকারী কে নেই সেই তালিকায়।

    প্রত্যেকেই ছাত্র অথবা আত্মীয় অথবা গুণমুগ্ধ ।সবার কথাতে তাঁর অকাল মৃত্যুতে আক্ষেপের পাশাপাশি শিক্ষক হিসেবে কতটা হিতৈষী ও ছাত্রবৎসল ছিলেন তার তথ্য উঠে আসে।তাঁর সহযোগিতায় দেশে বিদেশে কত শিক্ষার্থী সুপ্রতিষ্ঠিত। এই আয়োজনের অন্যতম উদ্যোক্তা অধ্যাপক বিকাশ পাল, ট্রাস্ট গঠন করে বিশ্বরঞ্জনবাবুর স্মৃতি রক্ষার্থে বিদ্যালয়ে  রসায়ন গ্রন্থাগার সংস্কার, মেধা বৃত্তি প্রদান, ও অন্যান্য পরিকল্পনার কথা জানান।  আয়োজক ও  ব্যবস্থাপক শিক্ষাসদনের প্রধান আচার্য যুগল প্রধান জানান, বিশ্বরঞ্জনবাবুর অকাল প্রয়াণে বিদ্যালয় তথা অনেক দরিদ্র মেধাবী ছাত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হলো।
    তাৎক্ষণিকভাবে এই স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করায় কিছু ত্রুটি থাকলেও অনলাইন এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে বহু মানুষের অভাবনীয় সাড়া মিলেছে। তাঁর এই প্রয়াণ বহু মানুষকে একই প্লাটফর্মে এনে দিল। মৌপাল দেশপ্রাণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা দশগ্রাম স্কুলের কৃতি প্রাক্তনী ড.প্রসূন কুমার পড়িয়া জানান বর্তমান পরিস্থিতির নিরেখে, এই ধরনের একটি স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজের শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাতে পেরে তাঁরা স্বজন হারানোর দুঃখ কিছুটা হলেও লাঘব করেছেন।