রথযাত্রা যাত্রী পুণ্যার্থীদের মিষ্টি ও জল

মো: নাজমুস সাহাদাত, নতুন গতি: গতকাল বিকেলে টুপি-দাড়ি ওয়ালা কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ডাকঘর কালীমন্দিরের সামনে। আশেপাশের এলাকার ঘরোয়া ও বারোয়ারি রথগুলো ঠিক এই জায়গাতেই এসে জমায়েত হয়। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছেলেগুলো হাফ লিটারের পানির বোতল আর লাড্ডু বিতরণ করছে! কেউ আবার ট্রাফিক পুলিশের সাথে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণের কাজটাও করে দিচ্ছে।
কারণ কি?! মানবসেবা। রথ টেনে মানুষগুলো খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বোধহয়! অনেক ছোট ছোট বাচ্চারা এসেছে মায়ের হাত ধরে,অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এসেছে কাঁপা কাঁপা পায়ে, একদল টগবগে তরুণও এসেছে, ‘দাদা একটা জলের বোতল দিন না, বাচ্চাটা খাবে’ হ্যা দিদিভাই, শুধু জল কেন? দুটো লাড্ডু নিন, এক ছোট্ট ছেলে লাড্ডু পেয়ে দৌড় দিয়ে তার সঙ্গীসাথীদের ডেকে আনে, ‘চল চল ওখানে খাবার দিচ্ছে’ বলে। টুপিওয়ালা ছেলেটির হাত থেকে লাড্ডু হাতে নিয়ে পরম ভক্তির সাথে মাথায় ঠেকিয়ে খাওয়া শুরু করে কাঁপা কাঁপা পায়ে রথের মেলায় আসা বৃদ্ধ দাদু।
এরকম আরও সুন্দর সুন্দর দৃশ্যের সাক্ষী হয়েছে গতকাল। চোখে পড়েছে অদ্ভুত এক সম্প্রীতির মিলন উৎসব।
একধারে জয় জগন্নাথ স্লোগান দিয়ে রথের দড়িতে টান পড়ছে, পাশাপাশি তাদেরই সেবার জন্য টুপি দাড়ি ওয়ালা ছেলেগুলোর উপস্থিতি। বিদ্রূপ বিদ্বেষ নয়,হিংসে নয়। এ এক অপূর্ব সহাবস্থানের চিত্র।
বর্তমানে যেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিংসা, বিদ্বেষ, ব্যঙ্গ বিদ্রুপের চাষাবাদ চলছে, সেখানে এই ধরনের উদ্যোগ, এই ধরনের কর্মকান্ড সমাজে খুবই ইতিবাচক বার্তা দেয় বটে। ধর্মীয় উৎসবগুলো যেন রাজনৈতিক কর্মসূচীতে পরিণত না হয়ে যায়, এটাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে। পানির বোতল বিতরণকারী ছেলেগুলোর বক্তব্য- “আমরা মানুষের সেবা করতে এসেছি,প্রতি ধর্মেই মানুষকে সেবা করার কথা বলা হয়েছে, আমরা নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস রেখে ও অনুগত থেকেও অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো, মানুষের সেবা করবো,মানবতার সেবা করবো” বাংলাই অতীতে সম্প্রীতির উদাহরণ হয়ে পুরো দেশকে পথ দেখিয়েছে বারবার, আগামীতেও পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।