|
---|
খায়রুল আনাম : বিশিষ্ট সাহিত্যসেবী, কবি, সম্পাদক সেখ আনসার আলি চলে গেলেন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।৩২ বছর ধরে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রমে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন তাঁর জিরো পয়েন্ট পত্রিকা। দীর্ঘ এই সময়ে বহু সাহিত্য প্রতিভা কে তুলে এনেছেন। সাহিত্যে- সমাজে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলা ও বাংলাদেশের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তিনি সম্মানিত করেছেন। নজরুল অনুরাগী এই মানুষটি প্রত্যেক বছর বিরাট আকারের নজরুল উৎসব করে স্মরণিকা প্রকাশ ও নজরুল পুরস্কার প্রদান করতেন।এপার বাংলা – ওপার বাংলার সাহিত্য জগতে তিনি অর্জন করেছিলেন সম্মান। পেয়েছেন বহু পুরষ্কার।২০১১ সালে নতুন গতি নজরুলজয়ন্তীতে সংবর্ধনা পেয়েছেন, সব আজ ইতিহাস।
সেখ আনসার আলি নদিয়া জেলার মানুষ। তবে পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারি শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা। ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিত প্রকাশ করেছেন পাক্ষিক জিরো পয়েন্ট পত্রিকা। সঙ্গে তাঁর জিরো পয়েন্ট প্রকাশনী থেকে প্রায় ১৫০টি পুস্তক তিনি প্রকাশ করেন। তাঁর সম্পাদিত ১০টি গ্রন্থের মধ্যে অচেনা মুখ, সেতু উল্লেখযোগ্য। শুধু মাত্র সংখ্যালঘু সমাজের মুখপত্র হিসাবে তিনি জিরো পয়েন্ট কে তুলে ধরেন নি। বরং বৃহত্তর সমাজের সামগ্রিক সচেতনতা এবং চেতনার সৃষ্টি কে পাথেয় করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অখ্যাত লেখকদের সমাজের উজ্জ্বল আলোয় উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে সেই মানসিকতা ও তৎপরতা ছিল অত্যন্ত সক্রিয়।
বিনয়ী, নম্র, ভদ্র এই মানুষটি সমাজের, দেশের এমনকি সম্প্রদায়ের যে কোনো সমস্যা কে একটু আলাদা ভাবে, আলাদা চোখে, আন্তরিকতা দিয়ে দেখতে চায়তেন। তাঁর সৃষ্টি ও ভাবনাকর্মে তার প্রতিফলন দেখা যেত। এই ভাবনা হয় তো তাঁকে অন্য মনস্ক করে তুলতো বারবার। এমনই অন্যমনস্ক ভাবে তিনি সপ্তাহ খানেক পূর্বে রেল লাইন পেরোতে গিয়ে পড়ে যান। শরীরের কাছে হার মানেন নি কোনো দিন, কোনও কাজে। দিন তিনেক আগে কর্তব্য পালন করতে বিয়েতে শ্যামসুন্দর চলে যান। সেখানে গিয়ে বমি শুরু হলে বর্ধমানের একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সমস্ত প্রচেষ্টা কে ব্যর্থ করে আজ সকাল সাতটায় মহা শূন্যে পাড়ি দেন জিরো পয়েন্ট এর কারিগর। বস্তুত, আব্দুল আজিজ আল আমানের কাফেলা যুগের সাহিত্য সৃষ্টির উন্মাদনায় প্রানিত এক নব্য তরুণের বর্ধমান জেলার এক ছোট্ট শহরে বসে রুটি রুজির কোনো নিশ্চিত পথ ছেড়ে অজানা অচেনা এক পথের সন্ধানে জীবন বাজি রাখা সতত: বিষ্ময়কর। বাংলার সাহিত্য সৃষ্টি- বিকাশের ইতিহাস সেখ আনসার আলির এই প্রচেষ্টা একদিন স্মরণ করবে, সন্দেহ নেই।
প্রয়াত সাহিত্য সাধক মৃত্যু কালে রেখে গেলেন অসংখ্য গুণমুগ্ধ ও তাঁর হাতে গড়া আগামী দিনের সাহিত্য প্রজন্ম। বিধবা পত্নী এবং একমাত্র পুত্র সন্তানকে। রেখে গেলেন একটা ভাবধারা। যা কোথাও না কোথাও অথবা কারো না কারো মাধ্যমে এগিয়ে যাবে মানব সভ্যতার চেতনার বিভিন্ন পথে। মেমারির ইছাপুরে শেষ আশ্রয়ে থাকবেন এই সাহিত্য পথিক। সৃষ্টি আর সময় এগিয়ে যাবে আপন নিয়মে।