সাইবার প্রতারণা সংক্রান্ত এক অভিযোগের তদন্তে নেমে শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা : সাইবার প্রতারণা সংক্রান্ত এক অভিযোগের তদন্তে নেমে শহরের এক প্রবীণ বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল হায়দরাবাদের রাচাকোন্ডা পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানা। সেই অভিযোগ শুনে হায়দরাবাদ পুলিশকে আইনি নোটিস পাঠিয়েছিলেন সোনারপুরের বাসিন্দা, বিশ্বকল্যাণ চৌধুরী নামে ওই প্রবীণ ব্যক্তি। এর পরেই নির্দেশ প্রত্যাহার করে পুলিশ জানায়, বিশ্বকল্যাণবাবুর সঙ্গে ওই অভিযোগের সরাসরি কোনও সম্পর্কই নেই! গোটা ঘটনায় স্তম্ভিত বিশ্বকল্যাণবাবু ও তাঁর আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায়।

    সোনারপুরের কুমোরপাড়া সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা বিশ্বকল্যাণবাবু জানান, ঘটনার সূত্রপাত গত নভেম্বরে। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের রাজপুর শাখায় তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৬ নভেম্বর টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। কিন্তু এটিএম থেকে টাকা না উঠলে ব্যাঙ্কে যান তিনি। কিন্তু কেন এই বিপত্তি, তা ব্যাঙ্ক তাঁকে জানায়নি। ১৫ নভেম্বর তিনি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠিয়ে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা না তুলতে পারার কারণ জানতে চান। দু’দিন পরে ব্যাঙ্ক চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে জানায়, রাচাকোন্ডা পুলিশ কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম থানার নির্দেশেই তাঁর অ্যাকাউন্টে লেনদেন ফ্রিজ় করে দেওয়া হয়েছে। এর পরে ৪ ডিসেম্বর ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে আরও একটি আইনি নোটিস পাঠিয়ে অ্যাকাউন্টটি ব্যবহারের অনুমতি চান বিশ্বকল্যাণবাবু। কারণ, চিকিৎসার জন্য তাঁর ওই অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ব্যাঙ্ক জানায়, পুলিশ নির্দেশ ছাড়া সে কাজ কোনও ভাবেই করা যাবে না।এর পরেই গত ৬ জানুয়ারি রাচাকোন্ডা পুলিশকে আইনি নোটিস পাঠিয়ে বিশ্বকল্যাণবাবু দাবি করেন, তাঁর অ্যাকাউন্টে কোনও অবৈধ লেনদেন হয়নি। কিন্তু তাতেও কোনও ফল মেলেনি। শেষে কলকাতা হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন তিনি। বিশ্বকল্যাণবাবুর কথায়, ‘‘গত ১৬ মার্চ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ইমেল করে রাচাকোন্ডা পুলিশ ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু আদৌ কেন তা জারি করা হয়েছিল, তা নিয়ে একটি শব্দও লেখা ছিল না। অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ে আমার ব্যাখ্যা যে পুলিশকে জানিয়েছিলাম, শুধু সেটাই জানানো হয়।’’ এর পরে ওই মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন তিনি। এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি ব্যবহারও করতে পারছেন তিনি।

     

    তবে এ নিয়ে গত কয়েক মাসের টানাপড়েনে মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন বিশ্বকল্যাণবাবু। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিনা কারণে কোনও নির্দোষকে এ ভাবে হেনস্থা হতে হলে পুলিশের উপরে মানুষ ভরসা করবেন কী ভাবে?’’ তাঁর আইনজীবী বিভাস বলছেন, ‘‘পুলিশের ভুল তদন্তের ফলে এক জনকে কী ভাবে ভুগতে হয়, এটাই তার প্রমাণ।’’কিন্তু কেন ফ্রিজ় করা হয়েছিল ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি? ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার, রাচাকোন্ডা কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিক নরেন্দ্র গৌড় বলেন, ‘‘মামলার তদন্তভার প্রথমে যাঁর হাতে ছিল, তিনি বিশ্বকল্যাণবাবুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি ফ্রিজ় করেছিলেন। আমি তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পরে দেখেছি, ওই অভিযোগের সঙ্গে বিশ্বকল্যাণবাবুর কোনও যোগ নেই। তাই তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টটি ফের চালু করে দেওয়া হয়েছে।’’