অযোধ্যা রায়ের পর সবার নজর ছিল শবরীমালা রায়ের দিকে

নতুন গতি প্রতিবেদক: বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শুরু হয় রায়দান প্রক্রিয়া। কিন্তু সেখানেই থাকতে হল। বাবরির মতো এক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারলেন না বিচারপতিরা। ফলে মামলাটি আপাতত গেল বৃহত্তর বেঞ্চে। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আগের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিল সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায়দানের কথা ছিল। এখন মামলাটি পাঠানো হল ৭ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চে। এখানে পুনরায় মামলার শুনানি হবে। জানিয়েছে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ।
গতবছর শবরীমালায় সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেই সুপ্রিম রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে শীর্ষকোর্ট জমা পড়েছিল ৬০টি আবেদন। এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, আবেদনকারীরা ধর্ম এবং বিশ্বাস নিয়ে বিতর্ক উসকে দিতে চেষ্টা করেছিল। এ দিন প্রধান বিচারপতি বলেন, সব পক্ষকেই নতুন করে সুযোগ দেওয়া হল। এ দিন শীর্ষকোর্ট এও বলে দেয়, কেবল শবরীমালা মন্দির নয়, মসজিদেও মহিলাদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এর আগে হাজী আলি দরগাহে মহিলা প্রবেশাধিকার নিয়ে কম হইচই হয়নি। হাজী আলি দরগাহ কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছিল নির্দেশ। সেখানে মহিলা প্রবেশে নতুন করে কোনও বিতর্ক তৈরি হয়নি। কিন্তু শবরীমালা মন্দির কর্তৃপক্ষ মহিলাদের প্রবেশাধিকারে নারাজ। অথচ তাদের পাশেই দাঁড়িয়েছিল বিজেপি ও আরএসএস। ময়দানে নেমেছিলেন স্বয়ং অমিত শাহ। এ দিন আদালত জানায়, কেবল শবরীমালা মন্দিরেই নয়, অন্য ধর্মের উপাসনা-স্থানেও মহিলাদের প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেবল শবরীমালায় হিন্দু মহিলাদের প্রবেশাধিকার নয়, মসজিদে মুসলিম মহিলাদের প্রবেশ এবং দাউদি বোহরা সম্প্রদায়ের মহিলাদের লিঙ্গচ্ছেদ বিষয়ক মামলাও শুনবে আদালত।
সুপ্রিম কোর্ট সব বয়সি হিন্দু মহিলাদের শবরীমালায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মামলা পুনর্বিবেচনার দাবি ওঠে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ বলেন, এ বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আরও বিতর্কের প্রয়োজন। এ দিন ৫ সদ্যসের সাংবিধানিক বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি ইন্দু মালহোত্রা এবং বিচারপতি খানউইলকর শবরীমালা মামলা বৃহত্তর বেঞ্চে পাঠানোর ব্যাপারে রায় দেন। অন্যদিকে, বিচারপতি নরিম্যান এবং বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় সব মহিলাদের মসজিদে প্রবেশের রায় বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। ফলে গরিষ্ঠ রায়ের বিচারে মামলাটি যায় বৃহত্তর বেঞ্চে।
উল্লেখ্য, মুসলিম মহিলাদের মসজিদে প্রবেশ কোথাও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। দেশের বহু মসজিদে মহিলারা নামায পড়েন– সে নজিরও রয়েছে। শবরীমালার সঙ্গে মসজিদের বিষয় জুড়ে অযথা রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। ২০১৮-র ২৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের বেঞ্চ রায়ে জানিয়েছিল, সব বয়সের মহিলারাই শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে। এমনকী ঋতুমতীরাও। ১০-৫০ সব বয়সের মেয়েদেরই শবরীমালায় প্রবেশে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট।