আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। নির্বাচনের আগে শুধু মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাই না।- অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

জাহির আব্বাস, পূর্ব বর্ধমান : পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুরে বর্ধমান পূর্বের তৃণমুল কংগ্রেসের লোকসভা প্রার্থী ডাক্তার শর্মিলা সরকারকে জয়ী করার উদ্দেশ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার একটি জনসমাবেশ করেন। সভায় হাজারো মানুষের মধ্যে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এই জনসমাগম দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, তীব্র দাবদাহ কে উপেক্ষা করে যেভাবে আপনারা আমাদের সভায় এসে পৌঁছেছেন বিশেষ করে যে সংখ্যায় মায়েদের দিদিদের বোনেদের বৌদিদের উপস্থিতি আমি লক্ষ্য করছি এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের জয় শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা।এই ভালোবাসা এই আশীর্বাদ ভোটে জেতার পর আমরা উন্নয়ন করে পরিশোধ করব। আমি কথা দিয়ে যাচ্ছি আমরা কথা রাখার পার্টি। আমরা হওয়ায় কথা বলিনা আমরা কথা দিয়ে কথা রাখি। নির্বাচনের আগে শুধু মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাই না। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলায় জনজোয়ারের বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর সময়কালীন বিভিন্ন মানুষের অভাব অভিযোগ শুনেছেন। সেসব শুনে কষ্ট পেয়েছেন। তার কথা শোনান ও দিল্লিতে কেন্দ্রের সাথে তাদের অধিকার ছিনিয়ে আনার লড়াই এর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।বর্ধমান পূর্বের কৃষিজীবী মানুষদের উদ্দেশে বলেন, এই বর্ধমান জেলা বাংলার শস্য ভান্ডার। আর আলু চাষের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে জামালপুর আর মেমারি। আজকে আলু চাষী যারা রয়েছেন বলুন,আজকে চাষ করতে গিয়ে আপনাদের কী অবস্থা হয়! পাঞ্জাব থেকে তিন চার হাজার টাকা দিয়ে আপনাদের বীজ কিনতে হয়, তারপর তার উপর সারের দাম আরো বেড়েছে, তার সাথে ইউরিয়া। কেন্দ্রে ১০ বছর আগে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছিল বলেছিল আচ্ছে দিন আসবে । এ প্রসঙ্গে ব্যাপক হারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির কথা বলেন। তাঁর কথায়,দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন , ১০ বছর আমরা খালি ট্রেলার দেখিয়েছি। সিনেমাটা যদি এবার জিতে তাহলে দেখাবো। এই প্রসঙ্গ ধরে যে আগত মা- ভাই-বোনেদের উদ্দেশ্যে বলেন, জিজ্ঞাসা করতে চাই ১০ বছরে আপনারা ট্রেলার কি দেখলেন ,৪০০ টাকার রান্নার গ্যাস ১০০০ টাকা, ৪০ টাকার ডিজেল ৯০ টাকা, ৫০ টাকার পেট্রোল ১০০ টাকা , ১৭ টাকার কেরোসিন তেল ৭৫ টাকা,১১০ টাকার চা পাতা ২৮০ টাকা কেজি, ৭০ টাকার রসুন ৪৩০ টাকা কেজি , ৫৫ টাকার সরষের তেল দুশো টাকা লিটার,কুড়ি টাকার দুধ ৫৫-৬০ টাকা লিটার। তিনি মহিলাদের উদ্দ্যেশে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়লক্ষ্মীর ভান্ডার করে আপনাদের এক হাজার টাকা প্রতিমাসে আপনার ব্যাংকে দিচ্ছে, আরেকদিকে, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার আধার প্যান কার্ডের লিঙ্ক করে দেওয়ার নাম করে আপনার থেকে সেই হাজার টাকা তুলে নিয়ে দিল্লিতে চলে যাচ্ছে। এভাবে মানুষকে নিপীড়িত বঞ্চিত-শোষিত অত্যাচারিত করে রেখেছে।

    তিনি স্মরণ করিয়ে দেন , ২০১১ সালে সিপিএমের ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে প্রথমবার আপনাদের আশীর্বাদ নিয়ে মা-মাটি-মানুষ সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই বাংলার মাটিতে ১৩ ই মে। তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এবং তাকে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী করার ক্ষেত্রে বাংলায় কটা জেলা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমান অন্যতম। ষোল শূন্য করে আপনারা ২০২১ সালে ওদের সাফ করেছিলেন তৃণমূলের পক্ষে প্রত্যেকটা বিধানসভা থেকে। তিনি দেশ জুড়ে আদিবাসী, দলিত, তফসিলি ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গে বলেন, এটা তৃণমূলের কোন নেতার কথা নয়,কেন্দ্রের সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিজেপির আমলে পাঁচ বছরে দেশে তপশিলি জাতির মানুষের উপর অপরাধের হার বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় কুড়ি শতাংশ।যার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে, বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকার উত্তর প্রদেশ। এক বছরে ১৩১৪৬ টি ঘটনা ঘটেছে। বাংলায় তপশিলি দের উপর ঘটে ১০৮ টা। আর আমরা চেষ্টা করব আগামী দিন যাতে ১০৮ টাও শূন্যে পরিণত হয়। তপশিলি দের উপর অত্যাচার আক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম পাঁচ টি রাজ্যই বিজেপি শাসিত। দ্বিতীয় স্থানে রাজস্থান। তিন নম্বরে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ। চারে মহারাষ্ট্র আর পাঁচে বিহার। অভিষেক ব্যানার্জি জানান, বিজেপির নেত্রীর কথা অনুযায়ী লক্ষ্মীর ভান্ডার বেশিদিন চলবে না। আগামী তিন মাসের মধ্যে বন্ধ হবে। গত নির্বাচনে বাংলায় বিজেপি হারার পর একশ দিনের টাকা, আবাসের টাকা বন্ধ করেছে। আমি মায়েদের জিজ্ঞেস করতে চাই, আপনারা চান লক্ষীর ভান্ডার বন্ধ হোক ? তিনি তাঁদের আশ্বস্ত করে বলেন, আমি আপনাদের বলছি আপনারা নিজের অধিকার কে সামনে রেখে লড়াই করুন যতদিন আমরা বেঁচে আছি আপনার লক্ষীর ভান্ডার কেউ বন্ধ করতে পারবে না। যতদিন আমাদের সরকার আছে আপনারা লক্ষীর ভান্ডার যেভাবে মাসের শুরুতে পাচ্ছেন সেভাবে পাবে। আগে ৫০০ টাকা দিত এখন ১০০০ টাকা দিচ্ছে তপশিলি মায়েদের এখন বারো শ টাকা ।
    এই লোকসভায় বিজেপির ফল নিয়ে বলতে গিয়ে জানান, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, কেন্দ্রে পরিবর্তন হতে চলেছে। এই সরকারের পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা। ইন্ডিয়ার সরকার হবে এবং সেখানে চালিকা শক্তি হিসেবে বাংলার ভূমিকা থাকবে। বিজেপি ও সিপিএম কে কটাক্ষ করে বলেন, সিপিএমের আগে রাজনৈতিক দর্শন ছিল, এলোমেলো করে দে মা/ লুটেপুটে খাই। আর বিজেপির রাজনৈতিক দর্শন হচ্ছে , গরীব করে রেখে দে মা/ ভোটটা যেন পাই।
    স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী ও কেন্দ্রের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের জন্য বলেন , যদি আয়ুষ্মান ভারত বাংলায় আমরা করতে দিতাম তাহলে বাংলায় ১০ কোটি লোকের মধ্যে খালি ৮০ লক্ষ মানুষ এই আয়ুষ্মান ভারত এর সুবিধা পেত। আপনার পরিবারে যদি মোবাইল ফোন থাকে আপনি আয়ুষ্মান ভারত এর সুযোগ সুবিধা পাবেন না। বাড়িতে যদি টি ভি থাকে আপনি আয়ুষ্মান ভারত এর সুযোগ সুবিধা পাবেননা ,রেডিও থাকলে পাবেন না, দু চাকা থাকলে পাবেন না, মোটরসাইকেল থাকলে পাবেন না। আর আমাদের সরকারের “স্বাস্থ্যসাথী”তে বাড়িতে মোটরসাইকেল থাকলেও পাবেন, না থাকলেও পাবেন। টিভি থাকলেও পাবেন, না থাকলেও পাবেন। হাতে ফোন থাকলেও পাবেন, না থাকলেও পাবেন।
    ১০০ দিনের কাজের টাকা আবাস যোজনা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা আটকে রাখা প্রসঙ্গে তিনি কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলার এক লক্ষ ৬৪ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে যারা তাদের উচিত শিক্ষা দেওয়ার বার্তা দেন। জন সমাবেশে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান।কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, পূর্ব বর্ধমান লোকসভা কেন্দ্রের দায়-দায়িত্ব , উন্নয়ন তাই এবার আমি আমার কাঁধে আজ থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছি কথা দিয়ে গেলাম এবং ভালোবাসা উন্নয়নের মাধ্যমে পরিশোধ করব । শুধু আগামি ৪ তারিখ যখন ফল বেরোবে তখন পদ্মফুলের নেতারা যেন চোখে সর্ষেফুল দেখে এটা নিশ্চিত করতে হবে।