বিশ্বকাপ ২০২৩: কাপ জিতলো অস্ট্রেলিয়া

দেবজিৎ মুখার্জি: তিনের বদলা নেওয়া হল না এই তেইশে। উলটে  তিনেরই পুনরাবৃত্তি হল আহমেদাবাদে।

    জোহানেসবার্গ ও আহমেদাবাদ একই বিন্দুতে এসে মিলে গেল। টানা ১০ ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠা ভারতের অশ্বমেধের ঘোড়া থেমে গেল মেগাফাইনালে এসে। রোহিত শর্মার স্বপ্ন ভাঙল। বদলাল না পরম্পরাও। কাছে এসেও বহু দূরে থেকে যেতে হল টিম ইন্ডিয়াকে। আইসিসি টুর্নামেন্টে সেই ব্যর্থতাই সঙ্গী হল ভারতের।

    এবারের বিশ্বকাপে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর বাসিন্দা ছিল। ভারতের জার্নিটা যেমন পাপড়ি বিছানো ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ পরিক্রমা ছিল কাঁটায় বিছানো। প্রথম দুটো ম্যাচে হেরে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। সমালোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল অজিদের নিয়ে। দুই ম্যাচে হারের ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে দারুণ ভাবে টুর্নামেন্টে ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে ট্রাভিস হেড ভারতীয় বোলারদের বিষ শুষে নেন। সেঞ্চুরি হাঁকান হেড। অস্ট্রেলিয়ার তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ফাইনালে সেঞ্চুরি করলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত হেড ফিরলেন ১৩৭ রানে। লাবুশেন অপরাজিত থেকে গেলেন ৫৮ রানে। শুরুতে ভারতীয় বোলাররা যে চাপটা তৈরি করেছিলেন, সেই চাপটাই ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেল। ম্যাচের উপরে ক্রমাগত চেপে বসল অস্ট্রেলিয়া। ধীরে ধীরে ম্যাচ থেকে হারিয়ে গেল ভারত।

    রবিবার নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে শেষ হাসি হাসল অস্ট্রেলিয়া। এভাবে যে টিম ইন্ডিয়াকে হার মানতে হবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। কুড়ি বছর আগের বিশ্বকাপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া পাহাড়প্রমাণ রান করেছিল। শুরুতে জাহির খানের স্লেজিং তাতিয়ে দিয়েছিল অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও ম্যাথু হেডেনকে। পরে রিকি পন্টিং একাই ম্যাচ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া শিবিরে। রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই ফিরে যান শচীন তেণ্ডুলকর। ভারতও থেমে যায় ২৩৪ রানে। কাট টু আহমেদাবাদ।

    এদিন টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাটিং করতে পাঠায় অস্ট্রেলিয়া। রোহিত শর্মা শুরু করেছিলেন অন্যান্য দিনের মতোই। কিন্তু ট্রাভিস হেডের দুরন্ত ক্যাচে ফিরতে হয় ভারত অধিনায়ককে (৪৭)। শুভমান গিল (৪) ম্যাজিক চলল না। দারুণ ছন্দে থাকা শ্রেয়স আইয়ার এদিন মাত্র চার রানেই ফিরলেন। বিরাট আর লোকেশ রাহুল ভরসা জোগাচ্ছিলেন। কিন্তু কামিন্সের বলে কোহলি (৫৪) বোল্ড হওয়ায় দেশের শ্বাসরোধ হয়ে গেল। লোকেশ রাহুলও বেশিক্ষণ টিকলেন না। ৬৬ রানে ফিরতে হল রাহুলকে।

    সূর্যকুমার যাদব টি-টোয়েন্টিতে যতটা ভাল, পঞ্চাশ ওভারের ম্যাচে ঠিক ততটাই খারাপ। ম্যাচের উপরে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারলেন না সূর্য (১৮)। ২৪০ রানে থেমে যায় ভারত।

    রানের পুঁজি কম। এই অবস্থায় ম্যাচ জিততে হলে শুরু থেকেই উইকেট তুলতে হতো। মহম্মদ শামি শুরুতেই আঘাত হেনেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারকে (৭) তুলে নিয়ে। অন্য প্রান্তে বুমরাহও আগুনে বোলিং করছিলেন। মিচেল মার্শ (১৫) ও স্টিভেন স্মিথকে (৪) ফেরান বুমরাহ। ভারত যখন ক্রমশ ম্যাচের উপরে জাঁকিয়ে বসতে শুরু করে, ঠিক তখনই ট্রাভিস হেড ও লাবুশেন চাপটা প্রশমিত করে নেন। ধীরে ধীরে বিষ শুষে নেন তাঁরা। হেড ও লাবুশেন জুটি ভারতীয় বোলারদের উপরে মায়াজাল বিস্তার করে ম্যাচের রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেন। ম্যাচে ফিরতে হলে দ্রুত উইকেট তোলার দরকার ছিল ভারতের। কিন্তু দুই অজি ব্যাটারের জন্য তা আর সম্ভব হল না। ট্রাভিস হেড ঠান্ডা মাথার পরিচয় দিয়ে ব্যাট করে গেলেন। আহমেদাবাদে স্বপ্নভঙ্গ হল রোহিতের। তীরে এসে তরী ডুবল টিম ইন্ডিয়ার।