মছলিখোর’ বাঙালীকে কোন ঠাসা করে দিয়ে উড্ডিন করবে হিন্দি ভাষীদের বিজয় পতাকা : শ্রমজীবী লেখোয়াড়

নতুন গতি নিউজডেস্ক: এটা এখন আর কোনো কষ্ট কল্পনা নয়, নির্মম ও কঠিন সত্য যে বাংলায় এন আর সি নিয়ে আসা হচ্ছে । বিজেপি ক্ষমতায় আসা মাত্রই ওটা লাগু করে দেবে ।
আমার যে টুকু জানা বোঝা তাতে দেখেছি সারা ভারতের কোন ‘জাতি’ বাঙালীর পক্ষে নয় । কেউই বাঙালীকে সহ্য করতে পারে না । দলমত যাই হোক েই একটা ব্যাপারে কোন ভিন্নতা নেই । সবাই বাঙালীকে দাবিয়ে রাখতে চায় । সেই যে কথিত স্বাধীনতার নামে ‘বাংলা ভাগ’ এটাও হয়েছিল বাঙালীর শক্তিক্ষয় করার জন্যই। ‘মুসলমানরা হিন্দুদের সঙ্গে থাকতে চাইছে না’ বা দাঙ্গা যদি অজুহাত হয় তবে সেটা তো বিহারেও হয়েছিল । প্রচুর লোক মারা গিয়ে ছিল ওখানে দাঙ্গায়- তাহলে এই কারনে তো বিহারকেও ভাগ করা উচিৎ ছিল । কই বিহারকে তো ভাগ করা হলোনা ?
বাংলাকে ভাগ করা হয়েছিল কারন বাঙালী চিন্তা চেতনায় বুদ্ধিমত্তায় অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে । যাদের শিল্প সাহিত্য জ্ঞান বিজ্ঞান সারা পৃথিবীতে সমাদৃত । নোবেলের মত সাহিত্যের শ্রেষ্ট পুরস্কার অবলীলায় পেয়ে যায় এই বাঙালী ।
এই বাঙালী- ভাত মাছ খাওয়া বাঙালী- একদিন সূর্য না ডোবা বৃটিশ শাসকদের বুকে ত্রাস সঞ্চার করে দিয়েছিল। বিপ্লবী আন্দোলনের আগ্নেয়ভূমি হয়ে উঠেছিল বাংলা। আগুনখোকো যুব জনতা কাপিয়ে দিয়েছিল বৃটিশ শাসনের ভীৎ । সেলুলার জেলের অর্ধেকের বেশি ভরে গিয়ে ছিল এই বাঙালীদের জন্য । এই বাঙলার আছে মানবেন্দ্রনাথ রায়, রাসবিহারী বোস , সুভাষ বোস, ক্ষুদীরাম , বাঘাযতী্ন, বিনয় বাদল দীনেশের মত বীর সন্তান । হাসতে হাসতে যারা মৃত্যুকে বরন করে নেয় দেশের জন্য ।
বুঝেছিল বাঙালীর শত্রুরা- যদি বাঙালীকে খন্ড বিখন্ড করে না দেওয়া হয়, শক্তিক্ষয় করে না দেওয়া হয় ভারতবর্ষে তাদেরই জয় জয়কার হবে । অন্যরা যার ধারে কাছেও আসতে পারবে না । বাংলা অখন্ড থাকলে আজ তাদের নাগালে থাকতো প্রায় ১২০ টার মত লোকসভার সিট । অন্য কোন প্রদেশের এত সিট নেই । সেই সিটের জোরে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থ , রেল- সবকটি মন্ত্রীত্ব থাকতে পারতো তাদের কব্জায় । এটা তারা অংক কষে বুঝে গিয়েছিল । তাই উতলা হয়েছিল বাংলাভাগের জন্য । ঠিক এই জন্য ওপার বাংলা থেকে আসা বাঙালীদের এপার বাংলায় রাখা হয়নি । বাংলার কিছু ‘রাজাকার দালাল চামচা’দের সমর্থনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে । ছিন্ন ভিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বাঙালীর ঐক্য । সেখানে তারা কষ্ট সৃষ্টে বেঁচেবর্তে তো থাকবে কিন্ত হারিয়ে যাবে তাদের ভাষা সংস্কৃতি বাঙালীর জাত্যাভিমান । পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের তারা আর কোন সহায়তায় আসবে না ।
এই যে আজ এন আর সি আনা আনা হচ্ছে এর পিছনেও সেই বাঙালী সমাজ জীবন চুর্ন বিচুর্ন বিধ্বস্ত করে দেবার শয়তানী চক্রান্ত চলছে । সর্বশক্তি নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে বঙ্গ সমাজকে শেষ করে দেবার খেলায় । হিন্দিভাষী শাসকদের এর আগে এত আক্রামন হতে কোনদিন দেখা যায়নি । ভাষা খাদ্য সংস্কৃতি ধর্মাচারন সব কিছুর উপরে এত সর্বাত্মক আক্রমন কোনদিন হয়নি । আজ বাংলায় সেই যে- ডিভাইড এন্ড রুল, ‘বিভেদ করে শাসন করো’ সেটাই এরা সুচতুর ভাবে প্রয়োগ করছে আর সফলতা পাচ্ছে ।
পাচ বছরের অধিক সময় এরা শাসন ক্ষমতায় । খাদ্য বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা কর্মসংস্থান- পাচ বছরে এমন কোন নজির নেই যাতে এই সব ক্ষেত্রে সামান্যতম কোন উন্নতি করেছে । উল্টে হাজার হাজার কর্মী ছাটাই হচ্ছে, সরকারি কর্মীদের পেনশন ব্যবস্থার বিলোপ ঘটানো হচ্ছে । গ্যাসের ভর্তুকি তুলে দেওয়া হয়েছে । জিনিস পত্রের দাম আকাশ ছোয়া , ব্যাংকের টাকার সুদ কমে যাচ্ছে, ব্যাংক খালি করে চোরেরা টাকা নিয়ে পালাচ্ছে । এমন যে রেল তাকেও বেসকারি হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত চলছে ।
এই পাচ বছরে সারাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন আগের চাইতে শতেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে । মাত্র গরুর মাংস খাবার অপরাধে সাপ মারার মত পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে । যারা মারছে সাজা তো হচ্ছেই না উল্টে বীরের সম্ভর্ধনা দেওয়া হচ্ছে । দলিত আদিবাসী মহিলা সবার উপর ভয়ানক বেড়ে গেছে আক্রমন অত্যাচার । কিন্ত মজার ব্যাপার এটাই যে এত কিছু করার পরেও কী সংখ্যালঘু আর কী আদিবাসী দলিত মহিলা- সবার মধ্যে দিনকে দিন এদের গ্রহনযোগ্যতা বেড়েই চলেছে । সেই যেমন ধুর্ত শেয়ালকে বোকা হাঁস নিজের ত্রানকর্তা ভাবে- এরা এদের চরম শত্রুকে আপন ভেবে গলায় জড়াচ্ছে ।
আর এই এত কিছু হতে পারছে এদের বিভেদ নীতির সফল ভাবে প্রয়োগের জন্য । এরা ভারতীয় মানব সমাজকে খুব ভাল ভাবে চিনেছে । সমাজের গভীরে লুক্কায়িত যে লোভ লালসা স্বার্থপরতা পরশ্রী কাতরতা – বুদ্ধ জৈন কবীর নানক শ্রীচৈতন্য হরিচাঁদ যাকে বিনাশ বিলুপ্ত করার জন্য সারাজীবন ধরে প্রানপাত করে ব্যর্থ হয়ে গেছে, এরা সেটাকেই খুঁচিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে । বাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে । আর কিছু নয় এরা মাত্র লোভের চাষ করে চলেছে । তারই ফসল ঘরে তুলেছে ।
আমি বাঙালী, বাংলায় বাস করি । এখানকার বাঙালী মানুষকে আমি হাড়ে হাড়ে চিনি। অন্যপ্রদেশ থাক , আসুন একটু বাংলার মন মানসিকতা দেখে নেওয়া যাক। এখানে কোথাও কিছু ছিলো না হঠাৎ একটা দল এসে প্রায় অর্ধেক লোকসভা সিট জিতে নিল কোন মন্ত্র বলে ?
যা দেখলাম জানলাম তা হচ্ছে – এদের যারা প্রচারক, প্রচারের প্রশিক্ষন প্রাপ্ত, তাদের নীরবে নিঃশব্দে বাংলার অলিগলিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ওই বিভেদের বিষবৃক্ষ বপন করার জন্য । এরা যেখানে যেমন সেখানে তেমন কথা বলে সরল সোজা বোকা আর লোভসর্বস্ব মানুষকে দলে টানতে সক্ষম হয়ে গেছে । এরা দেখেছে ওপার বাংলা থেকে আসা বাঙালদের মনের মধ্যে আছে জন্মজনিত মুসলমান বিদ্বেষ । তাদের কাছে গিয়ে এরা বলেছে- আমাদের সঙ্গে এসো, আমরা মুসলমান বিদ্বেষী । দেখেছো তো গুজরাটে মুসলমানদের কী রকম কচু কাটা করেছি । কেমন করে গরুর মাংস খায় বলে সাপ মারার মত পিটিয়ে পিটিয়ে মেরে দিচ্ছি । আমাদের সঙ্গে এলে মোল্লাদের মেরে তাড়িয়ে তাদের ঘর বাড়ি জমি জিরেত সব তোমরা দখল করে নিতে পারবে । কেউ বাঁধা দেবে না ।
আদিবাসীদের কাছে গিয়ে বলছে- তোমাদের অঞ্চলে দেখো বাঙালিরা এসে কী ভাবে জাঁকিয়ে বসে গেছে । এদের জন্য আজ তোমাদের সমাজ সংস্কৃতি বিপন্ন । আমাদের সঙ্গে এসো । আমরা এদের এন আর সি করে তাড়িয়ে দেব ।
মুসলমানদের কাছে গিয়ে বলছে তোমরা তো এখানকার আদি বাসিন্দা ! তোমাদের কাছে তো পুরাতন কাগজ আছে । কে তোমাদের তাড়াবে ? আমরা মুসলমান বিদ্বেষী হলে মুসলমানদের এত বড় বড় নেতা আমাদের দলে থাকে কী করে ? তোমাদের আমরা তাড়াবো না, তাড়াবো যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছে- সেই সব বাঙালদের । ওঁরা এসে তোমাদের প্রাপ্যতে ভাগ বসাচ্ছে । ওদের তাড়িয়ে দিলে তো তোমাদেরই ভালো হবে । এটা কথায় বিশ্বাস করেছে বলেই তো মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জামায়তে উলেমা হিন্দ এন আর সি সমর্থন করেছে ।

    এই বাঙাল আর বাঙালী বিভাজন এটা এরা খুব কায়দা করে সমাজ দেহে চারিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে । যা আগে কোনদিন এত প্রকট ছিল না । জাতপাত তো ছিলই না । সেই মাত্র মোহনবাগান ইষ্টবেঙ্গল ফুটবল নিয়েই কিছু মাতামাতি হতো যা খেলার মাঠে শুরু হয়ে খেলার মাঠেই শেষ হয়ে যেতো । এখন সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যাপক ভাবে জাগিয়ে তোলা হচ্ছে ।
    খবর পেলাম- আমরা আগে বাঁকুড়ার শিরোমনীপুর ক্যাম্পে ছিলাম । ওই ক্যাম্পের কিছু রিফিউজিকে ওই জেলার নানা জায়গায় পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছিল । এই রিফিউজিরা একেবারে অন্ধ মুসলমান বিদ্বেষী । আর সেই অন্ধত্ব থেকে তীব্র বিজেপি প্রেমী । ফলে এরা দলে দলে বিজেপিকে ভোট দিয়েছে । ভেবেছিল বিজেপির সহায়তায় মুসলমান তাড়াবে কিন্ত এখন হয়ে গেছে উল্টো । ওখানকার যারা আদি বাসিন্দা তারা দেখছে বাঙালরা এসে এখানকার জমি জায়গা পেয়ে গেছে আর তারা আমাদের চেয়েও ভালো আছে । আমরা এদেশের মানুষ, আমাদের অনেকের এক কাচ্চা জমি নেই । আগের সরকার আমাদের কিছু দেয়নি দিয়েছে বাঙালদের । আজ আমাদের বাঙালদের জমিতে মজুর খাটতে যেতে হয় । সেই রাগ থেকে স্থানীয় মানুষ এখন বাঙাল খেদাবার জন্য প্রস্তত হচ্ছে । মজার ব্যাপার এটাই যে সেই রাগ উস্কে তোলার পিছনেও বিজেপির প্রচারকদের বিশেষ ভুমিকা আছে ।
    আসামের বাঙালরাও- বলে না যে লোভে পাপ আর পাপে মৃত্যু । আমি এমন কোন বাঙাল দেখিনি যে এই বুলি আওড়ায় না । ছোটবেলা থেকে শুনে শুনে কান পচে গেছে । সেই লোভের ফাঁদে পা দিয়ে আজ সব জেলে যাবার দরোজায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে । নিজের পাঁছায় নিজে আঁছোলা ঢোকায় এমন নির্বোধ জাত জগতে আর আছে কিনা কে জানে !
    দেখা যাচ্ছে বাংলার বাঙালরা আসাম থেকে কোন শিক্ষা নেয়নি । এখানেও সেই বাঙালারাই পাছায় বাঁশ নেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে । বিজেপির মোটাভাই হুঙ্কার দিচ্ছে বাংলায় এন আর সি করার , আর দিলিপ ঘোষ বলে দিচ্ছে দু কোটি লোককে তাড়াবে । আপনি আপনার চার পাশে তাকিয়ে দেখে বলুন তো বাংলাদেশ থেকে আসা মুসলমান বাংলায় কী দেখতে পাচ্ছেন ? একজন দুজন পেলেও দু কোটি কী আছে ? তাহলে এই দুকোটি কারা ? কাদের তাড়াবে ঘোষ বাবু ? তাড়াবে বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালদের । যারা মুসলমানদের খুব ঘৃনা করে । মুসলমানদের তাড়াতে পারবে না , এটা জানে বলেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন জামায়তে উলেমা হিন্দ এন আর সি সমর্থন করেছে । তারা এত বোকা নয় যে নিজের পাছায় নিজে বাঁশ নেবে !
    আমাদের বুদ্ধিমান বাঙালদের অনেককে বলতে শুনছি– ধুস ভাই , এই সব কিছু না । কাউরে জেলে নেবে না । কিছু হবে না আমাগো । এত লোকেরে জেলে নিয়া খাওয়াবে কী !
    কী করে তাদের বোঝাই যে বসিয়ে বসিয়ে তোমাদের মোটেই খাওয়ানো হবে না । জেলে কাজ করতে হবে। দরকার পড়লে ডাণ্ডা মেরে কাজ করাবে বন্দীদের দিয়ে -। মজার ব্যাপার যারা চোর ডাকাত খুনি তারা সাজা নিয়ে জেলে গেলে কাজ করলে মাইনে পায় । তুমি সেটাও পাবে না । জেলে যারা গেছেন তারা দেখেছেন- ফালতু নামে একটা পোষ্ট আছে জেলখানায় । মাত্র কয়েকটা বিড়ি সামান্য একটু খাবার বেশি , এই জন্য লোকে ফালতুর কাজ করতে বাধ্য হয় । এই সব বন্দীদের সেই রকম ফালতু কাজে লাগানো হবে । মোমবাতি সাবান ধুপকাঠি দেশলাই– কারখানা মালিকদের নানা জিনিস ট্রাক ভরে পৌঁছে দেওয়া হবে জেলে । বলা হবে যে একশো প্যাকেট দেশলাই বানাতে পারবে সে একটা গামছা পাবে । যে একশো মোমবাতি বানাতে পারবে এক ডাব্বু ভাত বেশি পাবে । এই রকম সস্তার শ্রমিক বানিয়ে দেওয়া হতে পারে তাকে । শেকল বেঁধে নিয়ে যাওয়া হতে পারে দূর দুর্গম খনি খাদানে –ক্রীতদাসদের মত ।
    কি হবে আর না হবে সে সব পরের কথা কিন্ত যা হবে তাতে বাঙালদের মোটেই ভাল হবেনা এটা বলাই যায় । আর যেদিন সব বাঙাল খতম হয়ে যাবে রেড ইন্ডিয়ানর মত- তারপর ওঁরা গলা টিপে ধরবে ঘটি বাঙালীদের । নব্বই লক্ষ বিহারী বাংলায় গত দুবছরে অনুপ্রবেশ করে গেছে । আগামী দু বছরে আরও দু কোটি আসবে । গোটা কলকাতা আগেই দখল করে ফেলেছে , এরপর দখল নেবে গোটা বাংলার । ‘মছলিখোর’ বাঙালীকে কোন ঠাসা করে দিয়ে উড্ডিন করবে হিন্দি ভাষীদের বিজয় পতাকা । সেদিন আসতে আর খুব বেশি বাকি নেই ।