|
---|
মোল্লা জসিমউদ্দিন : সাম্প্রতিক সময়কালে কলকাতা হাইকোর্টে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।শিক্ষা বিষয়ক একের পর এক মামলায় যেভাবে নির্দেশ জারি করে চলেছেন। তাতে সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের কাছে তিনি যেন ‘দেবদূত’। নির্দেশ জারি পরবর্তীতে যেভাবে প্রথম পর্বে ডিভিশন বেঞ্চে একের পর এক স্থগিতাদেশ জারি হচ্ছিল।তাতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছেও দারস্থ হয়েছিলেন নির্দেশদানে মুক্তহস্ত পেতে।তিনি জানিয়েছিলেন – তাঁর মাথায় বন্দুক রাখলেও তিনি পিছপা হবেন না।আসলে তিনি সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের যোগ্য হওয়া সত্বেও চাকরি না পাওয়ার মানসিক যন্ত্রণা বুঝেছেন। তাইতো বাবুঘাটে তাঁর সমর্থনে পোস্টারও দেখা গেছে। । এসএসসি মামলায় তাঁর একের পর এক নির্দেশ, কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে সমস্ত বেনিয়ম, দুর্নীতির ভিত্তি। হাজার হাজার চাকরি প্রার্থীর কাছে এখন তিনি নায্য বিচারদানের প্রতীক । সাধারণ মানুষ বলছেন, -‘এমন বিচারপতি সাহস বাড়ায়, বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা বাড়ায় আস্থা।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি একদা ডব্লুবিসিএস অফিসার ছিলেন। জানা যায়, দুর্নীতির কারণেই সেখান থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।। এরপরই আইনজীবী হিসাবে ‘প্র্যাকটিস’ শুরু। এরপর এখন তিনি বিচারপতি। কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনের মেইন ব্রাঞ্চে পড়াশোনা করেছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। গ্র্যাজুয়েশনের পর পাঁচ বছর ল’ পড়েছিলেন। এরপর ডব্লুবিসিএস পরীক্ষার জন্য বসেন, ‘এ’ গ্রেডের অফিসার ছিলেন তিনি। সে সময় উত্তরবঙ্গে পোস্টিং অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের। উত্তর দিনাজপুরে। জমির পাট্টা বিলি নিয়ে চরম দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে পঞ্চায়েত সদস্যর বিরুদ্ধে। রুখে দাঁড়ান তিনি। সেই সময় এক গ্রামপঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে চোখ রাঙিয়েছিলেন। এক ডব্লুবিসিএস অফিসারের এভাবে অপদস্থ হওয়া কোনওভাবেই মানতে পারেননি তিনি। গত ২০০৯ সাল থেকে এসএসসির ল’ অফিসার ছিলেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। সারা রাজ্যের যত মামলা রয়েছে, সমস্ত তথ্য তাঁর কাছে আসত। তাই এসএসসির নাড়ির খবর জানেন তিনি! সেই অভিজ্ঞতাই তাঁর বিচারব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয় বলেই মনে করেন আইনজীবীরা। প্রথমদিকে অন্য মামলা দেখতেন। পরে তিনি শিক্ষাসংক্রান্ত মামলাগুলি দেখতে শুরু করেন। সেখান থেকেই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলা এসে পৌঁছয় তাঁর এজলাসে। অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় সেই বিচারপতি, যিনি দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলেন, ‘আমার মাথায় বন্দুক ধরতে পারেন। আমি মরতে রাজি, কিন্তু কোনও দুর্নীতি দেখে আদালত কখনও চুপ করে থাকবে না।’ বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন শিক্ষকদের দুর্নীতি দেখলে মেনে নিতে পারেন না, আবার তিনিই শিক্ষকরা বিপদে পড়লেও সহ্য করতে পারেন না। আইনের হাত ধরে রায়গঞ্জ করোনেশন স্কুলের শিক্ষিকার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এই বিচারপতিই। আবার ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত বীরভূমের নলহাটির সোমা দাসের প্রাপ্যও ফিরিয়ে দেওয়ার রায়ও তাঁরই দেওয়া। এদিকে তাঁর নির্দেশেই সিবিআই নিজাম প্যালেস অবধি টেনে নিয়ে গিয়েছে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ম পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীদের।আর তাকে কেন্দ্র করেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে এই বিচারপতি।বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় একসময়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনেরই আইনজীবী ছিলেন। তিনি অবশ্য কেরিয়ার শুরু করেছিলেন ডাবলুবিসিএস অফিসার হিসেবে। তারপর চাকরি ছেড়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। ২০১৮-র ২ মে কলকাতা হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০২০-র ৩০ জুলাই হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। যেভাবে একের পর নির্দেশ জারি করে চলেছেন এই বিচারপতি , তাতে সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের কাছে সুবিচার পাওয়ার সেরা এজলাস হিসাবে উঠে আসছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস।