শিশু দিবসের তাৎপর্য এবং মুর্শিদাবাদের শিশুদের বাস্তব চিত্র !

মোহাম্মদ রাইহানুল হক, নতুন গতি : সারাদেশ যখন আজ ‘শিশু দিবস’ পালন করছে, শিশুদের অধিকার আদায়ের জন্য কথা বলছে, শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে শিক্ষাঙ্গনে আনার কথা বলছে, তখন মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক শিশুরা এভাবেই নিজেদের শৈশবকে বিসর্জন দিয়ে পেটের তাগিদে সকাল হতে না হতেই বিড়ির কুলো নিয়ে বসে পড়েছে ।

    এ লজ্জা কার? দেশ না সমাজের? টক-শোয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনার কচকচানি চলতেই থাকবে। কিন্তু এরা যেই তিমিরে আছে সেখানেই পড়ে থাকবে! যখন দেশের আর পাঁচটা শিশু অ আ ক খ শেখে, তখন জন্মের পর থেকেই এরা জীবনের মর্মজ্বালা বুঝে যায়। তাই শ্লেট-পেনসিল বা রঙ তুলি ভুলে এরা তুলে নেয় বিড়ি বাঁধার পাতা, সুতো, গজাল আর কুলো। কেননা এদের একটাই লক্ষ্য পেটের ভাত জোগাড় করা।

    স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত মিড-ডে-মিল দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরে? তারপরের ভবিষ্যৎ যে আরো অন্ধকারের! এরপরে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, কলেজ। অনেক বাবা মা খরচের ভয়ে বাল্যবিবাহ দিতে বাধ্য হন।খবরে প্রকাশ, ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ মুর্শিদাবাদে ব্যাপক কাজ করেছে। কিন্তু বছরে ৫০০/৭০০ টাকা আর এককালীন ২৫০০০ টাকায় কি আর লেখাপড়ার খরচ সামলানো সম্ভব? বাড়ির আশেপাশে পর্যাপ্ত সংখ্যায় গার্লস স্কুল, গার্লস কলেজে না থাকা বা যেগুলো আছে সেগুলোর উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে সাধ আর সাধ্য থাকলেও অনেকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভাবে এরা নিজেদের লক্ষ্যস্থির করতেও পারেনা।আবার বেশি পড়াতে গেলে বিড়ি বাঁধায় অপটু হয়ে যায় ও সময় থাকে না, বাড়ি খরচার অর্থ কমে যায়।

    নিরাপত্তা ও বাড়িতে বসে কাজের জন্য শিশু – মেয়েরা বিড়ি শ্রমিক। ছেলে – শিশুরা বাড়ির অর্থনেতিক উন্নতি জন্য রাজমিস্ত্রি কাজ, কৃষিকাজ, দৈনিক শ্রমিকের কাজ, বিভন্ন কাজ রাজ্যে এবং ভারতের বিভন্ন প্রদেশে চলে যায়। বাড়িতে যারা থেকে পড়াশুনা করে তাদের অধিকাংশ বিড়ি শ্রমিকের কাজ করে, ফ্রী ভাবে পড়াশুনা করতে পারে না।

    শিক্ষিত সচেতন মানুষের অভিযোগ,স্বাধীনতার ৭২ বছরেও সরকার মুর্শিদাবাদের ছেলেদের করে রেখেছে রাজমিস্ত্রি আর মেয়েদের বিড়ি শ্রমিক।