প্রতিবন্ধকতার বাধা মালদার চাঁচলে, দাবী সরকারি সাহায্যের


উজির আলী, নতুন গতি, মালদা: ১৫ বছর ধরে বদলেছে চেয়ার, বদলেছে নেতা, মন্ত্রী, প্রধান কিন্তু এত বছর ধরে কষ্টকর জীবন যাপন করে বদলায়নি জীবনের কোন অংশই। দারিদ্রতাকে সঙ্গী করে কেটে গেছে ১৫ টা বছর। দৈহিক, মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েটার চোখ ছাড়া নিজের বলতে কিছুই নেই। মিলেওনি কিছু, শুধু মিলেছে ভুরিভুরি প্রতিশ্রুতি।

    সে প্রতিবন্ধী মেয়েটার প্রতিবন্ধকতার প্রমাণ পর্যন্ত মিলেনি, সরকারি সাহায্য দূর কি বাত। হাজার চেষ্টা করেও পড়াশোনার মধ্যে শিখেছে ABCD তবুও শারীরিক অক্ষমতার কারণে স্পষ্ট ভাবে মুখ থেকে বেরোয় না কিছু। যার কারণে পড়াশোনার ইচ্ছে থাকলেও অধরাই থেকে গেছে সেই ইচ্ছা। চেষ্টা চালিয়েছে বারবার, কলম তুলেছে হাতে।

    কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা যার কারণে সেই হাত দিয়ে আর লেখা হয়ে ওঠেনি ABCD। তাই খুশবুর জীবনে হাত পা বলতে শুধুই তার মা, নিজের শুধু রয়েছে দেখার শক্তি তাছাড়া কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই তার মধ্যে। খুশবুর জীবনে তাই নায়িকা এবং ভগবান দুটোই তার মা। সংসারের সমস্ত কাজ ছেড়ে খুশবু কে নিয়ে ব্যস্ত তার মা। কারণ জন্ম থেকেই মানসিক ও দৈহিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মেছে খুশবু। তাই তার দিকে তাকানোর লোক নেই। তাই নেতা মন্ত্রী প্রধান বদলালেও সহযোগিতার হাত কেউ বালানি খুশবুর দিকে। মেলেনি কোন সহযোগিতা।

    মালদা জেলার চাঁচোল ১ ব্লকের প্রাণকেন্দ্র নজরুল-পল্লী এলাকায় নাহিদ হাসান, পেশায় দিনমজুর ও তার স্ত্রী গুড্ডি খাতুন গৃহীনী তাদের একমাত্র মেয়ে খুশবু খাতুন।

    জন্মলগ্ন থেকেই মানসিক ও দৈহিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে অভাবের সংসারে দরিদ্রতা কে সঙ্গী করে একচালা ঘরে দিন কাটছে তাদের। অন্যান্য দিন কোনভাবে চলে গেলেও লকডাউনের জেরে কর্মহারা হয়েছেন নাহিদ বাবু। যার কারণে স্ত্রী ও প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।

    লোকের কাছে চেয়ে মেয়ে যতটুকু হচ্ছে তা দিয়েই দু’মুঠো খাবার জোগাড় করে চলছে সংসার। কিন্তু সংসারের শত ব্যস্ততার মাঝেও ভুলে যাননি মেয়েকে। ঠিকমত কথা বলতে না পারা, হেঁটে ফিরে চলতে না পারা, নিজের হাতে খাবার তুলে খেতে না পারা, চুল বাঁধতে না পারা প্রতিবন্ধী মেয়েকে চোখে চোখে রাখছেন তার মা গুড্ডি খাতুন। একতরফা ঘরে বসে বসে আরো মানসিকভাবে ভেঙে পড়া মেয়েকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গুড্ডি দেবী।

    মেয়েকে খাওয়ানো, স্নান করানো, চুল বাধা, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া সবই করে যাচ্ছেন সংসারের কাজ শেষ করে। তবে শত কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত মেলেনি খুশবুর প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র, যার কারণে মিলছে না কোনো সরকারি ভাতা এমনকি কোনো সুযোগ-সুবিধা। এখনো পর্যন্ত তৈরি করা হয়নি আধার কার্ড। যার কারণে জন্ম শংসাপত্র ছাড়া খুশবুর কাগজপত্র হিসেবে নেই কিছুই।

    এব্যাপারে নাহিদ বাবু ও গুড্ডি দেবী জানান, জন্মলগ্ন থেকেই মানসিক ও দৈহিক ভাবে প্রতিবন্ধী তাদের মেয়ে।অভাবের তাড়নায় এখন মেয়ের চলাচল করার জন্য প্রতিবন্ধী গাড়ি কিনে দিতে পারছিনা ঠিকই তবে মেয়ের যখন ৫ বছর বয়স ছিল তখন তাকে একটি গাড়ি কোনমতে কিনে দেওয়া হলেও সেটি খারাপ হয়ে যাওয়ার পর আর কিনে দেওয়া সম্ভব হয়নি এবং সেটিকে ঠিক করাও সম্ভব হয়নি।

    বারংবার মেয়ের প্রতিবন্ধকতার শংসা পত্র, সরকারী ভাবে ভাতা ও একটি গাড়ির জন্য পঞ্চায়েত, ব্লক, বিধায়কের কাছে দরবার করেও মিলেনি কিছু তাই আর চাইতে যায়নি।

    স্থানীয় বাসিন্দারা জানান সত্যি তাদের খুব করুন অবস্থা। আমরা যতটা পারছি সাহায্য করছি।তবে সরকারের উচিত এই পরিবারের পাশে দাড়ানো।

    যদিও ঘটনার কথা স্বীকার করে চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েত উপপ্রধান উৎপল তালূকদার জানান, আমরা জানি ঘটনাটি। আমরা দেখছি কি করা যায়। এপ্রসঙ্গে চাঁচল ১ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক জানান সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকে তিনি খবরটি জানতে পেরেছেন।তবে ওই অসহায় পরিবার তার কাছে কোনদিন আসেননি। তবে তিনি সব রকম ভাবেই তাদের পাশে থাকবেন। মেয়েটিকে প্রতিবন্ধী গাড়ি, প্রতিবন্ধকতার শংসা পত্র প্রদান থেকে সরকারি ভাতা প্রদান করার ব্যাপারে তিনি সহযোগিতা করবেন।