দেশ তালা বদ্ধ – পেট কিন্তু নয়- দু:স্থের ছায়া

নিজস্ব প্রতিবেদক,মেদিনীপুর:ঘড়ির দিকে তাকিয়ে একটা একটা করে ঘন্টা গুনছি সবাই। চূড়ান্ত আতঙ্কে গৃহবন্দী, একটা ভয় তাড়া করে বেড়াচ্ছে। একটু গলা ব্যাথা বা একবার কাশি হলেই মনের ভিতরে প্রশ্ন জাগছে, তাহলে কি লড়াইটা শেষ! এক অজানা আতংক নিয়ে প্রতিটা মুহুর্ত বাঁচা। কেমন একটা অন্ধকার, থমথমে, বদলে যাওয়া অজ্ঞাত সময়। দিনের চব্বিশটা ঘন্টায় অবসরে কাটানোর মধ্যেও ভাল করে শ্বাস নিতে না পারা এক একটা দিন।

     

    এসবের মাঝে আরও কিছু জিনিস তাড়া করে বেড়াচ্ছে অসংখ্য মানুষকে! যেমন অসহায়তা, যেমন দারিদ্র্যতা। স্বাভাবিক জীবনবৃত্তি বলে, বিপদে ঘেঁষে এসো, অন্ধকারে হাতটা ধরো। কিন্তু এই সময়টা বলছে ঘেঁষে এলেই বিপদ, হাত ধরলেই বিপত্তি। মৃত্যু! মৃত্যু! মৃত্যু! কিন্তু এভাবে মানুষ বাঁচে তো বাঁচে কেমন করে! বিশেষ করে ওরা, যাদের অসহায়তা-দারিদ্র্যতা সবসময় তাড়া করে বেড়াই?
    উপরের প্রশ্ন চিহ্নকে সামনে রেখে চার দিন আগে দুঃস্থের ছায়ার পক্ষ থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে সকলের কাছে আবেদন করা হয়েছিল, দেশ বদ্ধ অবস্থায় অসহায়-দরিদ্র পরিবারের উনুন না বন্ধ হয়ে যায়। দুঃস্থের ছায়ার সেই আবেদনে দারুন ভাবে সাথ দিয়েছেন আপনারা। আপনাদের সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে গত দুই দিন ও আজ নিয়ে কেশপুর, পঞ্চমী, ধর্মা, মেদিনীপুর শহর, শালবনী, রোড চন্দ্রকোনা, টাউন চন্দ্রকোনা, কুয়াপুর, ঝাঁকরা, নেড়াদেউল এবং মুগবসানের তিনশো চুয়াত্তরটি পরিবারের কাছে তিন কেজি চাল, দুই কেজি আলু, এক প্যাকেট মুড়ি, একটা সাবান, আড়াইশো গ্রাম তেল, আড়াইশো গ্রাম ডাল এবং পাঁচশো গ্রাম সবজি পৌঁছাতে পেরেছে দুঃস্থের ছায়া। প্রতিবারের মতো এবারও দুঃস্থের ছায়ার আবেদনে সাড়া দিয়ে আপনারা প্রমাণ করলেন, ফেসবুকের আলোকরশ্মিও মানুষকে বাঁচাতে পারে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয় যখন চারপাশ থেকে ভেঙে দিচ্ছে মানুষকে, আপনারা প্রমাণ করলেন এই ভয়ই চারপাশ থেকে জুড়ে দিচ্ছে সকলকে। হ্যাঁ, আপনাদের জন্যই তিন দিন ধরে এই বিশাল এলাকা পাড়ি দিয়ে মানুষের দরজায় দরজায় কয়েকদিনের খাদ্য সামগ্রী পৌঁছাতে পেরেছে দুঃস্থের ছায়া।

    এ তো গেল তিনশো চুয়াত্তরটি পরিবারের তিন কি চার দিনের সামান্য আহার। কিন্তু এখানেই কি থেমে যাওয়া যায়? উত্তর নিশ্চই না। সরকার থেকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে, তবে তা এখনও সব জায়গায় পৌঁছায়নি। আর যেখানে পৌঁছেছে, তা খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্টও নয়। আমাদের চারপাশ থেকে অগণিত এলাকার খোঁজ আসছে, যেখানে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছায়নি।