দেওয়ান আব্দুল গনি কলেজ এর শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে এক দিনের রাজ্যস্তরের আলোচনা সভা

মো: নাজমুস সাহাদাত , মালদা: দেওয়ান আব্দুল গনি কলেজ এর শিক্ষা বিভাগের উদ্যোগে এক দিনের রাজ্যস্তরের আলোচনা চক্রের আয়োজন করা হয়। আলোচনা চক্রের বিষয়বস্তু ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে শিক্ষার গুরুত্ব। ভারতবর্ষ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নানা ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষ করে ভারতবর্ষে জাতপাত ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে।অথচ শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার্থে। ভারতবর্ষে প্রতি মাসে গড়ে 58 টি করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটে যার সিংহভাগ ধর্মীয় কারণে অথচ ভারতবর্ষে 75 শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। যাদের থেকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার কথা ভাবা যায় কিন্ত শিক্ষা বিস্তারের সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হচ্ছে। দাঙ্গা- ফ্যাসাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই বর্তমানে ভাবনার বিষয় শিক্ষার কি ভূমিকা ও প্রকৃত শিক্ষা থেকে আমরা কতদূরে সরে। অথবা সংকীর্ণ শিক্ষা লাভ করে ক্ষুদ্র স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য বৃহত্তর স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমাজকে ভুল পথে পরিচালনা করছি না তো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আজকের সেমিনারে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর দেবশ্রী ব্যানার্জি ও গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিভাগের প্রফেসর দেবব্রত দেবনাথ। আজকের আহবায়ক প্রফেসর রিম্পা সাহা ও ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইসমাঈল। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহির আলী মিয়া মহাশয়ের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনা চক্রের সূচনা হয়। অধ্যাপিকা রিম্পা সাহা আলোচনা চক্রের বিষয়বস্তু ও তার গুরুত্ব নিয়ে আ্লোকপাত করেন। প্রফেসার দেবশ্রী ব্যানার্জি তার আলোচনায় তুলে ধরেন বর্তমান শিক্ষার কথা এবং স্কুল-কলেজের পাশাপাশি পরিবার-পরিজন ও পরিবেশ থেকে শিক্ষা গ্রহনের কথা তুলে ধরেন। এছাড়া তিনি বলেন শিক্ষা ব্যবস্থা আমূল পরিবর্তন দরকার এবং শিক্ষা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এর শিকার এবং যে সরকার আসে না কেন প্রথমে তারা পাঠ্যক্রম পরিবর্তন করে নিজেদের মতো করে পাঠক্রম তৈরি করে নৈতিক শিক্ষা থেকে সমাজ কে দূরে রাখে। প্রয়োজনীয় পাঠ্যক্রম বাদ দিয়ে খেয়াল খুশি মতো পাঠক্রম তৈরি করেন, যার প্রভাব সমাজ জীবনে পড়ে, ফলে সমাজে নানা কুশিক্ষার প্রভাব বিস্তার হয়। প্রফেসর দেবনাথ দেবনাথ সামাজিক সম্প্রীতি নিয়ে বলেন দেশে আজ ও সম্প্রীতি অক্ষুন্ন, গুটি কয়েক বিচ্ছিন্ন ঘটনা দিয়ে বিচার করা যায় না এবং কিছু সংখ্যক মানুষের আচরণ দিয়ে বিচার করা যায় না। বর্তমানে দেশের বড় সমস্যা বেকারত্ব ও দূষণ তা নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ ও সতর্ক থাকা উচিত। না হলে ক্ষুদ্র স্বার্থের পেছনে সময় অপচয় করে আমরা বিলীন হয়ে যাব। অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইসমাইল ভারতবর্ষের বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, শিক্ষিত মানুষের মদদপুষ্ট ঘটনা। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা হওয়ার কথা ছিল কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই শুধুমাত্র অশিক্ষিত মানুষ কে দোষারোপ না করে শিক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি ও পাঠক্রম নিয়ে আলোচনা দরকার।অপরপক্ষে শিক্ষিত মানুষের মানসিক, নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ খাদ্যাভাস ও গবেষণা নিয়ে সরকারি হস্তক্ষেপ ও বিশেষ সংগঠনের দাপাদাপি নিয়ে সমালোচনা করেন।হিলি গভমেন্ট কলেজের অধ্যাপক অভিজিৎ সরকার বলেন আমরা সমাজবদ্ধ জীব বাড়িতে পোষ্য কুকুর,গরু ও ছাগলের জাত পাত দেখি না এবং আমরা কখনো জাতপাত দেখে তাদের ঘরে পালন করি না। তাহলে সমাজের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে নিয়ে জাতপাতের রাজনীতি কেন এবং জাতপাতের নামে ভোট ভিক্ষার চরম নিন্দা করেন। এছাড়াও আজকের আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন গাজোল মহাবিদ্যালয় এর অধ্যাপক দেবব্রত বাবুু, যামিনী মজুমদার মহা বিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা কেয়া সরকার, গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ, কলেজের অধ্যাপক-অধ্যাপিকাগন ও ছাত্র ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইংলিশ বিভাগের অধ্যাপিকা শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম শ্রেণির ধন্যবাদ সূচক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আলোচনাচক্রের সমাপ্তি হয়।