|
---|
নিজস্ব সংবাদদাতা: কোলকাতা মিনার্ভা থিয়েটার হলে হয়ে গেলো “আলোমুখ, হাওড়া ” পরিবেশিত একটি অন্যরকমের মনস্তাত্ত্বিক নাটক “শেষ বিকেলের আলো”। একটি পরিচ্ছন্ন পরিপাটি পরিবেশনা যার রেশ শেষ হওয়ার পরেও দর্শকের মধ্যে রয়ে যায়।
নাটকটির আখ্যানে আছে এক কবির (সুকল্প) অন্তর্জগতে থাকা মানস প্রতিমাকে বাস্তবে, এক খোলা স্টেশনে এক বিবাহিতা নারীর ( কৌনি) মধ্যে খুঁজে পাওয়া ও তাই নিয়ে পার্থিব বা বস্তু পৃথিবীর সংকট। ক্রমশ জানা যায় কবি সুকল্প আসলে রাত্রী নামক এক কল্পনার নারীর মধ্যে লুসিড ড্রীমে ডুবে থাকে। সঙ্গে সুকল্পের মধ্যে অল্প বিস্তর সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষনও আছে। এখন যেটা উপভোগ্য বিষয় হয়েছে এ নাটকে তা হলো লুসিড ড্রীম বা সিজোফ্রেনিয়া সংক্রান্ত জটিলতা বাদ দিয়ে নাটকটির মধ্যে অদ্ভুত ভাবে সুতীব্র কঠিন বাস্তবের মুখে দাঁড়িয়েও কি নিবিড় ও নরম অনুভূতি নিয়ে এক জন মানুষ তার নিজস্ব যাপনকে আগলে থাকতে থাকতে হঠাৎ পথ হারিয়ে ফেলে এবং যখন সে পথ হারিয়ে ফেলে তখন অন্য চরিত্রগুলোর মধ্যে বোনা হয়ে গেছে কবি সুকল্পের ব্যক্তিক যাপন ও কোমল অনুভূতিগুলো। ফলে কৌনি কখন হয়ে আসে রাত্রি, উঠে আসে নব্য প্রজন্মের ভোরাই। তারা আবার জাগিয়ে তোলে কবির মধ্যে হারিয়ে গিয়েও জেগে ওঠার শক্তি এবং সুকল্প চিৎকার করে বলে ওঠে ” সব বাধা ভেঙে, বাঁচো সুকল্প। বাঁচো!” সুকল্পের ব্যক্তি মনের স্বপ্নের উড়ান তখন যেন নাটকের পাত্র পাত্রীর মন ছুঁয়ে দর্শকের মনে গভীরে অবতারণ করেছে। খুব ভালো বিষয় নির্বাচন এবং তেমন ভালো নাটকের সংলাপ এবং কবিতার ব্যবহার।
এ নাটকে সুকল্প চরিত্রে নাট্যকার, নির্দেশক মনসিজ বন্দ্যোপাধ্যায় এর অভিনয় ছাড়াও বাড়তি পাওনা তাঁর অসম্ভব সুন্দর কন্ঠের আবৃত্তি। পুলিশ চরিত্রে গৌরব মুখার্জী মন ছুঁয়ে গেছে যেমন মনে দাগ কেটেছে ভোরাই চরিত্রের অভিনেত্রী ঊর্ণিশা ব্যানার্জী। মুখ্য চরিত্রে কৌনি ওরফে রাত্রি চরিত্রের অভিনেত্রী মনীষা দত্ত চেষ্টা করেছেন খুব কিন্তু চরিত্রটির গভীরতার কাছাকাছি পৌঁছে থমকে দাঁড়িয়ে গেছেন। মাঝেমাঝেই শরীরী ভাষা ও সংলাপ তার পক্ষে ভারি হয়ে গেছে বলেই ছন্দপতন ঘটেছে। কখনো কখনো। চোখে পড়েছে কারণ গোটা নাটক জুড়েই তিনি। বৌদি চরিত্রে সংহিতা চক্রবর্তী একদমই চরিত্রের দাবী পূরণ করতে পারেননি। তিন জন স্টেশন যাত্রী ভালো করলেও ঠিক মাখোমাখো হয়নি বোঝা পড়া। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে ( সুপান্থ) অনল মান্না যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন এবং অবশ্যই বলতে হয় সাইক্রিয়াটিস্ট চরিত্রের অভিনেতার (শুভাশিস মুখোপাধ্যায়) কথা। ভালো করেছেন। তাঁর সাথে পুলিশ ( গৌরব মুখার্জী) অংশগুলো ফলত খুবই টানটান হয়েছে।
এ নাটকে খুব ছিমছাম মঞ্চ সজ্জার মধ্যেও স্টেশন উপস্থাপনার জন্য ভবেশ পাত্রকে কৃতিত্ব দিতেই হয়।
বাবলু সরকারের আলো ও অসাধারণ আবহ এ নাটকে দু’টি স্বতন্ত্র চরিত্র হয়ে উঠেছে।
সব মিলিয়ে আলোমুখের ” শেষ বিকেলের আলো”য় অভিনয় করা কিছু নতুন ছেলে মেয়ে যেন নতুন দিনেরই ইঙ্গিত রেখে গেলো। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর একটু প্রযত্নের যথেষ্ট অবকাশ থাকলেও ” শেষ বিকেলের আলো ” একটি সফল প্রযোজনা এবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।