|
---|
নতুন গতি, মালদা: বাবা টোটো চালক, মা গৃহবধূ।পরিবারে সামান্য আয়ের উৎসে চলে নৌরিনদের সংসার। আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করে এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৮৮ নম্বর পেয়ে রাজ্য মেধা তালিকায় দশম রেঙ্ক করে শিরোনামে ওঠেছে ও মালদায় নজর কাড়ল বুধিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী নৌরিন খাতুন। খুশির উচ্ছ্বাস বুধিয়া হাই মাদ্রাসায়, সমগ্র জেলা তথা বুধিয়ার গ্রামে ও। নৌরিন খাতুন মালদা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিমি দূরে এলাকার ঐতিহ্যবাহী বুধিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। সে এবার মাদ্রাসা থেকে আর্টস বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। সোমবার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের জন্য সকাল থেকেই টিভি পর্দায় চোখ রেখেছিল নৌরিন খাতুন। মা তাজমিরা বিবি ও ফলাফলের আশায় প্রহর গুনছিলেন। ছাত্রীর বাড়ি এলাকার বুধিয়া স্ট্যান্ডে। বাবা ফিরোজ হোসেন তখন টোটো নিয়ে উপার্জনের আশায় বেরিয়েছেন। টিভিতে নৌরিন দেখে রাজ্যে মেধা তালিকায় অষ্টম হয়েছে। এই ঘোষণা নিজের চোখে দেখেও নৌরিন প্রথমে বিশ্বাস করেনি।নৌরিন কার্যত আনন্দে বিগলিত হয়ে পড়ে। পলকের ঘোর কাটিয়ে বিশ্বাস করেন নৌরিন। নৌরিন খাতুন ফলাফলে উচ্ছ্বসিত হয়ে মা তাজমিরা বিবি ও বাড়ির সবাইকে জানান। সে ছুটে যায় মাদ্রাসায়। ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৮৮ নম্বর পেয়েছে। তার বাংলা- ৯৬ ইংরেজি- ৯৪, এডুকেশন ৯৭, ভূগোল ৯৭, সোসিওলজী ১০০, ইতিহাস-৯৮ , , ভীষণ খুশি বাবা ফিরোজ হোসেন বলেন, আমি প্রতিদিন সকালে টোটো নিয়ে বেরিয়ে যায়। কাজে ব্যস্ত থাকি। সময় দিতে পারিনা। ওর মা ও আমার মেয়ে নিজের মনের জোর ফলাফলের পিছনে বড় অবদান। আমি পড়াশোনা ভালোবাসি। আর্থিক প্রতিকূলতা পড়াশোনা বাঁধা না হয় সচেষ্ট রয়েছি। মেয়ের ফলাফলে ভীষণ খুশি হয়েছি।আমি সচেষ্ট থাকি কিভাবে মেয়ে পড়াশোনায় উন্নতিলাভ করবে। ছাত্রী নৌরিন খাতুন বলেন, ভালো রেজাল্ট হবে আশা করেছিলাম। কিন্তু এমন ফল হবে কখনো ভাবিনি। সারা দিনে ৬/৭ ঘন্টা পড়াশোনা করেছি। দুটি বিষয়ে টিউশনি ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নমাজ পড়ে জানান নৌরিন। ভবিষ্যতে ভূগোল অনার্স নিয়ে পড়ব। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। আমার গল্পের বই পড়তে ভালো লাগে ও প্রিয় লেখক কাজী নজরুল ইসলাম। আমার সাফল্যের পেছনে মাদ্রাসার শিক্ষক শিক্ষিকা, বাবা মা, টিউশনি শিক্ষক সকলের অবদান রয়েছে। অভাবের জন্য মাধ্যমিক পাশের পর সায়েন্স নিয়ে পড়তে পারেনি কথায় আক্ষেপের সুর ফুটে ওঠে নৌরিনের। প্রধান শিক্ষিক মোহা আজিজুর রহমান বলেন, এবার মাদ্রাসা থেকে ১০২ জন ছাত্র ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিক দেয়। ফলাফল ভালো হয়েছে। মোট ৯১ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। নৌরিন রাজ্যে অষ্টমস্থান অধিকার করে গোটা বাংলায় নৌরিন নিজের নাম ও মাদ্রাসার গৌরব বৃদ্ধি করেছে। আমরা ভীষণ খুশি। আর অন্যান্যদের মধ্যে মাদ্রাসায় ৪৬২ নম্বর দ্বিতীয় হয়েছে মাহিনূর বেগম , ৪৬১ নম্বর পেয়ে সামিনা সিদ্দিকা তৃতীয় হয়েছে। চতুর্থ হয়েছে মোশারফ হোসেন, ৪৩৩ পেয়ে। কার্যত এখানে ছেলেদের টেক্কা দিয়ে ছাত্রী তথা নারী শক্তির জয় ঘটেছে , মাদ্রাসার ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে জেলার বুকে মেধা তালিকায় স্থান অর্জনের ফলে স্মরণাতীতকালে এই প্রথম মেধাতালিকা নাম ওঠল বলে খুশি প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান।