|
---|
নতুন গতি ওয়েব ডেস্ক : অবশেষে JNU এর প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদ কেও গ্রেফতার করলো দিল্লী পুলিশ। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে লোকসভা ও রাজ্য সভায় পাশ হয় অসংবিধানিক – নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন CAA ( Citizenship Amendment Act) বিতর্কিত এই আইন পাস হওয়ার সাথে সাথে সম্পূর্ণ ভারত জুড়ে শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয় মূলত দিল্লির আন্দোলন গুলোর দিকে তাকিয়ে, দিল্লির জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটি, জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ও আলিগর মুসলিম ইউনিভার্সিটি সর্ব প্রথম আওয়াজ তোলে CAA আইনের বিরুদ্ধে। জোরালো ভাবে আন্দোলন শুরু হয়ে যায় এই তিনটি ইউনিভার্সিটিতে। ইউনিভার্সিটির ভিতরে আন্দোলন চলাকালীন এক রাতে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় হামলা করে দেই দিল্লী পুলিশ। ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে ছাত্র ছাত্রীদের মারধর করে রক্তাক্ত করে দেই, প্রকাশে ছাত্র ছাত্রীদের উপর গুলি চালায়, ক্যাম্পাসের ভিতরে থাকা মসজিদ ও লাইব্রেরি ভিতরে প্রবেশ করে সবার উপর আক্রমণ করে ও মসজিদকে রক্তাক্ত করে দেই দিল্লী পুলিশ। পুলিসের দ্বারা ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে অমানবিক নির্যাতনের অনেক ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় এক বিশাল বড় আন্দোলন।
দিল্লিতে যাওয়া ছোটো ছোটো আন্দোলন গুলো একত্রিত হয়ে দিল্লির শাহীন বাগে ধরনা মঞ্চ তৈরি হয়ে যায়। দিল্লির এই শাহীন বাগের দিকে তাকিয়ে হাজার হাজার শাহীন বাগ তৈরি হয়ে যায় সম্পূর্ণ দেশ ব্যাপী। CAA আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে দেশের ছাত্রকর্মী ও সামাজিক কর্মীরা। এই ছাত্রকর্মী ও সামাজিক কর্মীরায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন আন্দোলন গুলো। যখন করোনা ভাইরাস জন্য দীর্ঘদিন লকডাউন থাকে দেশ তখন শুধু মাত্র দিল্লির এই তিনটি ইউনিভার্সিটির হাজার হাজার ছাত্রদের যারা CAA আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের যুক্ত ছিল তাদের গ্রেফতার করেছে দিল্লী পুলিশ। প্রকাশ্য মুখ ছিল সার্জিল ইমাম, সার্জিল উসমান, ফারহান যুবাইর, ইকবাল তানহা, নাতাশা নারওয়াল, চাংগিস খান, সাফুরা জারগার সহ আরো অনেক প্রকাশ্য মুখ। অবশেষে গতকাল রবিবার দিল্লী পুলিশ গ্রেফতার করলো JNU এর প্রাক্তন ছাত্রনেতা উমর খালিদ কে।
দিল্লী দাঙ্গা মামলায় একাধিকবার পুলিশের কাছে জবাবদিহি করতে গিয়েছে উমর খালিদ, গতকাল কে ১১ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর দিল্লী মামলায় ষড়যন্ত্রকারি হিসেবে দিল্লী পুলিশ স্পেশাল সেল গ্রেফতার করে উমর খালিদ কে। ওনার মোবাইল টাও পর্যন্ত নিয়ে নেই পুলিশ। সংবাদমাধ্যমে PTI এই খবর প্রকাশ করেন।
নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিকের জাতীয় নিবন্ধক ( NRC) বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহ বিক্ষোভের পরে ২৩ থেকে ২৬ ফেব্রুয়ারি উত্তর-পূর্ব দিল্লির কিছু অংশে দাঙ্গা লেগে যায় , ৫০ জনেরও বেশি মারা গেছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন, অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন।
সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং স্বরাজ অভিযান প্রধান যোগেন্দ্র যাদবকে দিল্লির দাঙ্গার মামলার এক আসামির প্রকাশিত বিবৃতিতে নামকরণ করা নিয়ে রাজনৈতিক স্রোতের মধ্যে উমর খালিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের অভিযোগপত্র প্রকাশিত বিবৃতিতে অর্থনীতিবিদ জয়তি ঘোষ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অপূর্বানন্দ এবং ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা রাহুল রায়ের নামও রয়েছে।
জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দেবাঙ্গানা কালিটা এবং নাতাশা নারওয়াল এবং জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র গল্ফিশা ফাতিমা দিল্লির জাফরাবাদে হওয়া সহিংসতার সাথে জড়িত একটি মামলায় অভিযুক্ত, সেখান থেকে এটি ফেব্রুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তিনজনই বেআইনী ক্রিয়াকলাপ প্রতিরোধ আইনের ( UAPA) আওতায় অভিযুক্ত হওয়ারও মুখোমুখি। প্রকাশের বিবৃতিটি তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সাথে জড়িত।
গত মাসে দিল্লির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সহিংসতার পেছনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ওমর খালিদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। অভিযোগের মধ্যে, তিনি দুটি পৃথক স্থানে উস্কানিমূলক বক্তৃতা দিয়েছিলেন এবং মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফরকালে লোকজনকে রাস্তায় ও ব্লক রাস্তায় বেরিয়ে আসার আবেদন করেছিলেন।
দিল্লী দাঙ্গায় ৫২ জন নিহত নাগরিকের মধ্যে ৪০ জনই মুসলমান ছিলেন তার পরও দাঙ্গার সমস্ত অভিযোগ মুসলিমদের উপর দায়ের করে দিল্লী পুলিশ।bমুসলমানরা হামলার শিকার হয়েছিলো তার সত্ত্বেও, পুলিশ তদন্তে দাবি করা হয়েছে যে দাঙ্গাগুলি শাহীনবাগ এবং দিল্লির অন্যান্য অংশে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের সাথে জড়িত মুসলিম নেতাকর্মী এবং অন্যদের ষড়যন্ত্রের ফলস্বরূপ ছিল। অথচ কপিল মিশ্র, অনুরাগ ঠাকুর ও প্রবীণ ভার্মার মতো ভারতীয় জনতা পার্টির নেতাদের ভূমিকা প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, উস্কানি মূলক ভাষণ ও হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও অবধি কোনো ব্যবস্থা নেননি দিল্লী পুলিশ। তারা এখনও বিনা চিন্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।