খনি অঞ্চলে শোনপুর-বাজারি এরিয়ার উদ্যোগে ইন্দ্রধনুষের বিপ্লবী আজাদ ও লোকমান্য তিলকের জন্মদিবস পালন

স্টাফ রিপোর্টার : প্রয়াগরাজের (অধুনা লুপ্ত এলাহাবাদ) আলফ্রেড পার্ক ঘিরে ফেলে ব্রিটিশ পুলিশ। দিনটি ছিল ১৯৩১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি। সুকদেব রাজ ও নিজেকে বাঁচাতে পুলিশের সঙ্গে প্রানপণ লড়াই চালালেন তিনি। তিনজন পুলিশকে মেরে সুকদেবকে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা করে দিলেন। কিন্তু নিজেকে রক্ষা করার কোনও পথ বের করতে পারলেন না। পালন করলেন বিপ্লবীর ধর্ম। নিজের বুলেটে নিজেকে শেষ করে দিলেন। আরেক বিপ্লবী ভগৎ সিংয়ের আদর্শ এই মহান বিপ্লবী হলেন চন্দ্রশেখর তেওয়ারি। যিনি চন্দ্রশেখর আজাদ নামে খ্যাত। আজাদ আজকের দিনে ২৩ জুলাই ১৯০৬ সনে মধ্যপ্রদেশের আলিরাজপুর জেলার ভাওরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আজাদের পৈতৃক নিবাস উত্তর প্রদেশের কানপুরের কাছে উন্নাওয়ের বদারকা’তে। মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহৃত হলে আজাদ বিপ্লবী আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠেন। যার ফলশ্রুতি ছিল তাঁর এই আত্ম উৎসর্গ।
আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন আরও এক মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী লোকমান্য গঙ্গাধর তিলক (২৩ জুলাই ১৮৫৬- ১ অগাস্ট ১৯২০)। তিলকের আসল নাম ছিল কেশাভ গঙ্গাধর তিলক। তাঁকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম নেতা বলা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ রাজশক্তি তাঁকে ‘অস্থিরতার পিতা’ বলে অভিহিত করে। স্বাধীনতাকামী মানুষের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন লোকমান্য। অর্থাৎ নেতা হিসাবে মানুষের মান্যতা প্রাপ্ত । আবির্ভাব দিবসে মহান এই দুই স্বাধীনতা যোদ্ধাকে স্মরণ করল পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ- আসানসোল খনি-শিল্পাঞ্চলের শোনপুর-বাজারি এরিয়ার উদ্যোগে ইন্দ্রধনুষ সংস্থা। ভারতবর্ষের ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে ভারত কা ‘অমৃত মহোৎসব’ পালন করে চলেছে ইন্দ্রধনুষ।
শোনপুর-বাজারি এরিয়া অফিসের কনফারেন্স হলে বেলা এগারোটার সময় শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের প্রথমে মাল্যদান করা হয়। তিলক-আজাদের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন এরিয়া জেনারেল ম্যানেজার আর কে শ্রীবাস্তব, এরিয়া প্যারস্যানেল (Personnel) ম্যানেজার আবীর মুখোপাধ্যায়, ফিন্যান্স ম্যানেজার ভাষ্কর মুখোপাধ্যায়, সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব কাজী মোশারফ হোসেন ও অন্যান্য আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহাপ্রবন্ধক আর কে শ্রীবাস্তব বলেন, লোকমান্য তিলকের আত্মত্যাগ ও বিপ্লবী আজাদের আত্মবলিদান ছিল ভারত নির্মাণের জন্য। আমরা যাঁরা এই শিল্পের কাজে যুক্ত আছি তাঁরাও দেশ নির্মাণের কাজে নিয়োজিত রয়েছি। একজন সাধারণ শ্রমিকও এই নির্মাণ যজ্ঞ থেকে পৃথক নন। বক্তব্য রাখেন ইন্দ্রধনুষের অভিষেক দুদেয়াল। তিনি বলেন, লোকমান্য তিলক ও চন্দ্রশেখর আজাদ যে ভারতের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা সাকার করার দায়িত্ব নিতে হবে ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষকে। দেশে বিকাশধারা যাঁরা অব্যাহত রেখেছেন, শিল্প শ্রমিক গণ পালন করে চলেছেন তার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবী ও সংস্কৃতি অনুরাগী কাজী মোশারফ হোসেন । তিনি বলেন, বহু শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। চন্দ্র শেখর আজাদ তার অন্যতম। লোকমান্য তিলকের আন্দোলনে ভারতবর্ষের মানুষ বুঝতে পারেন ব্রিটিশ শাসকদের হঠাতে আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। আজ তাঁদের পূণ্যতিথিতে আমরা তাঁদের ত্যাগের মহিমা স্মরণ করতে এসেছি। কাজের মধ্যে এই অনুষ্ঠান হচ্ছে দেশকে নিয়ে একটু ভাবার সময়।
ঘন্টা খানেক সময় ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বহু আধিকারিক, শ্রমিক – কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন সুকন্ঠের অধিকারী কাজী মোশারফ হোসেন।