” নীল আকাশের নীচে, বিস্তীর্ণ রকমারি ফুলের উপত্যকা যেন ক্ষিরাই।

শরীফুল ইসলাম। নতুন গতি : শহরের ঘিঞ্জি বসতি কর্মব্যাস্ত জীবনে কখনো কখনো মন বিষন্ন হয়ে পড়ে। অবসাদের হাত থেকে  মুক্তির স্বাদ পেতে তখন একটা খোলা আকাশ, চাই বিশুদ্ধ বাতাস। ক্ষনিকের নীরব নির্জনতা।

    তবে, আর দেরী কেন ? উইকেন্ডে চলে আসুন ক্ষিরাই। লালমাটির রঙিন ফুলের দেশ আপনাকে স্বাগত জানায়। হ্যাঁ। মাত্র এক দিনের ট্যুর। সাধ্যের মধ্যে সাধ পূরণ হবেই নিশ্চিত। হাওড়া  থেকে খরগপুর বা মেদিনীপুরগামী যে কোনো লোকাল ট্রেনে উঠে বসুন। পাঁশকুড়ার ঠিক পরবর্তী স্টেশন। পরিপাটি করে সাজানো- গোছানো ছোট্ট একটি  স্টেশন ক্ষিরাই। লাল কাঁকরের চাদরে মোড়া রাঙা মাটির পথ ধরে একটু এগোলেই ক্ষিরাই নদী। বর্ষার জলে পুষ্ট ক্ষিরাই নদী না বলে একে  বরং  লম্বা খাল বলাই ভালো। সারা বছর রুখা- সুখা বর্ষা কাল এলেই দুকূল ছাপিয়ে এঁকে বেঁকে চলে নিজের গতি নিয়ে।

    দুই ধারে চর পড়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে মাঠ। এইখানেতেই আপনার সেই কাঙ্খিত লাল-নীল- হলদে একরাশ ফুলের  ভুবন। রামধনু রঙের মতন সাত রঙে রঞ্জিত বিঘার পর বিঘা ফুলেল শোভাই সেজে উঠেছে যতদূর চোখ যায় ততদূর। তারপর মিশে গেছে আকাশের ঘন নীল সীমানায়।

    সেই রং বাহারি রকমারি ফুলের মেলায় কী নেই ? মাঠ ভরে আছে রজনীগন্ধা , চন্দ্র মল্লিকা, চেরি,মরোগঝুটি, গোলাপ, গাঁদা, আরো কত শত শত বিচিত্র বর্ণের ফুল। মনে হবে দাঁড়িয়ে আছি ভূসর্গ কাশ্মীরের কোনো এক ফুল বাগিচায়। কোলাহলহীন শান্ত পরিবেশে রং-বেরঙ্গীন ফুলের সৌন্দর্য্য ও সুঘ্রানে ভরে যাবে মন-প্রাণ। এখানে এলে রবি ঠাকুরের মতন মনে হতেই পারে,

    “বহু দিন ধরে , বহু ক্রোশ  দূরে, বহু ব্যয় করি, বহু দেশ ঘুরে , ….. দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া,ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া  একটি ধানের শিসের  উপরে,একটি শিশির বিন্দু ! “শীতের পিকনিক হলে তো কথাই নেই। তবে একা কিংবা দোকা আর ভেতো বাঙালি হলে বা রাত-বিরেতে থাকার কথা ভাবলে এখান থেকে এক স্টেশন পিছিয়ে আসতে হবে পাঁশকুড়া।   এখানে  টিফিনের জন্য শুকনো কিছু খাবার কাছে রাখলেই কেল্লাফতে।