জামাইবাবুকে মারার জন্য ছুরিতে শান, মা দেখা নেওয়াই মা কে খুন!

নিজস্ব সংবাদদাতা : নেশা ছেড়ে ভাল হওয়ার পরামর্শ দিতেন জামাইবাবু। তাতেই রাগ। গভীর রাতে ছুরিতে শান দিচ্ছিল শ্যালক। জামাইবাবুকে মারার জন্য। কিন্তু দেখে ফেলেন মা। জামাইকে বাঁচাতে গিয়ে ছেলের কোপে পড়েন । মাকে খুনের দায়ে বুধবার চুঁচুড়া আদালতে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হল ছেলেকে।

    চুঁচুড়া আদালতের সরকারি আইনজীবী সুব্রত গুছাইত জানান, ২০১৯ সালের ১৫ জুলাইয়ের ঘটনা। পান্ডুয়ার বোসপাড়ায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন হাজিরা বিবি ও তাঁর পরিবার। হাজিরার স্বামী করিম ও বড় ছেলে সুকুর মল্লিক রোজ নেশা করত। যার প্রতিবাদ করতেন সুকুরের জামাইবাবু আনোয়ার মল্লিক।

    তিনি বলেন, ‘‘জামাইবাবু সুকুরকে ভালো হওয়ার পরামর্শ দিতেন। যা কখনই পছন্দ করত না সুকুর। ঘটনার দিন নেশা করায় বন্ধুদের সামনে বারণ করেন আনোয়ার। রাগ পুষে বাড়ি ফিরে আসে সুকুর। কাটারি বের করে ধার দিতে থাকে। তখন রাত সাড়ে দশটা। অত রাতে কেন কাটারিতে ধার দিচ্ছে তার মা জানতে চাওয়ায় সুকুর জানায় জামাইবাবু তাকে বন্ধুদের সামনে অপমান করেছে। তাই জামাইবাবুকে মারবে। ছেলের কথায় ভয় পেয়ে তাকে বিরত করার চেষ্টা করেন হাজিরা বিবি। কাটারি কেড়ে নিতে গেলে মায়ের ঘাড়ে কোপ মারে সুকুর। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন হাজিরা। পান্ডুয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।’’

    আনোয়ার তাঁর শ্যালকের বিরুদ্ধে পান্ডুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল আনোয়ারের নাবালক এক শ্যালক ও শ্যালিকা। পরে পান্ডুয়া হাট থেকে সুকুরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। চুঁচুড়া আদালতে এই মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দেন।

    চুঁচুড়া আদালতের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অরুন্ধতী ভট্টাচার্য চক্রবর্তীর এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবার অভিযুক্ত সুকুর মল্লিককে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। আজ তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শোনায় আদালত। দু হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। অনাদায়ে আরও ছয় মাস পর চার্জশিট পেশ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

    আনোয়ার মল্লিক বলেন,‘‘অনেক চেষ্টা করেছি সুকুরকে ভালো করতে। হয়নি, উল্টে আমাকে মারার জন্য কাটারি ধার দিচ্ছিল। শাশুড়ি বাধা দেওয়ায় তাকে খুন করা হল। আমার স্ত্রীর আরও দুই ভাইবোন আছে। তারা ছোটো। এখন তাদের ভালো করে মানুষ করতে হবে।’’