হরিশ্চন্দ্রপুর কৃষি মেলায় জৈব পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে পুরস্কৃত হলেন সামিম

 

    হরিশ্চন্দ্রপুর,মহ: নাজিম আক্তার,২৭ ডিসেম্বর: জৈব পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে পুরস্কৃত হলেন মহ: সামিম। বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নং ব্লকের মহেন্দ্রপুর জিপির রামপুর গ্রামে। জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সারা রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে কৃষি মেলা। হরিশ্চন্দ্রপুর-১নং ব্লকের তুলসিহাটায় ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় কৃষি মেলা শুক্রবার নানা অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।এদিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত করা হয় কৃষিদ্রব্য প্রদর্শনী চাষীদের। কৃষি দ্রব্য প্রদর্শনীতে টবে ফুলকপি চাষ করে প্রথম হয়েছে নাদেরুল ইসলাম, খরিফ মরসুমে পেঁয়াজ চাষ করে দ্বিতীয় হয়েছে সাকির আলম ও জৈব পদ্ধতিতে বেগুন চাষ করে তৃতীয় হয়েছে মহ:সামিম। এছাড়াও বাকি প্রতিযোগী চাষীদের কোদাল দেওয়া হয়। পাশাপাশি কৃতি কৃষক সম্মান ও অর্থ দেওয়া হয় শক্তোল গ্রামের জানে আলম, পেমা গ্রামের জুবের আলী ও ডাঙি এভারগ্রীন ফার্মার ক্লাবকে।

    এডিএ পলাশ শিদ্ধ, কৃষি প্রযুক্তি সহায়ক আশরাফ আলি ও কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মঞ্জুর ইকবালরা জানান,জলবায়ুর পরিবর্তনে বিশ্ব পরিবেশ বিপর্যস্ত। আর সে কারণে পরিবেশ এখন সবার দুশ্চিন্তার খোরাক। প্রয়োজনীয় দুইমুঠো খাবারের জন্য পুরো বিশ্বে পরিবেশবান্ধব কৃষি এখন সময়ের জ্বলন্ত ইস্যু, পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য এক অংশ জৈব কৃষি। জৈব কৃষি এমন এক কৃষি ব্যবস্থা যেখানে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার না করে জৈব পদার্থের পুনঃচক্রায়ন যেমন কম্পোস্ট ও শস্যের অবশিষ্টাংশ, ফসল আবর্তন ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জমি চাষাবাদের মাধ্যমে মাটি ও ফসলের উত্তম অবস্থা বজায় রেখে সুস্থ সবল বিষমুক্ত উৎপাদন নিশ্চিত করা হয়। আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন বেড়েছে অথচ মাটির উর্বরতা ও উৎপাদিকা শক্তি কমছে, উচ্চমাত্রায় রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মাটিতে ও কৃষিপণ্যের কুপ্রভাব পড়েছে। এ কারণে মাটির উর্বরতা ও উৎপাদন ক্ষমতা ঠিক রাখতে, বালাইনাশকের প্রভাবে যাবতীয় স্বাস্থ্যহানী কমাতে, পরিবেশকে সংরক্ষণ করে পরবর্তী বংশধরদের জন্য উপযোগী করতে, বালাইনাশকের মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হওয়া রোধ করতে, পৃথিবীর বুকে নিরাপদ জীবনযাপন পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির গুণাগুণ বজায় রাখার জন্য জৈব কৃষি ব্যবস্থার একান্ত প্রয়োজন। মোট কথা আমাদের নির্মল পৃথিবীতে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য পরিবেশবান্ধব কৃষি আবশ্যকীয়ভাবে দরকার। আর এ জৈব কৃষির মূলনীতি হলো উদ্ভিদ ও প্রাণী পুষ্টির পুনঃচক্রায়ন, বিষমুক্ত উর্বর ও উৎপাদিকা শক্তি সম্পন্ন মাটি তৈরি করা, প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি অনুসরণ করে বালাই ব্যবস্থাপনায়, ব্যাপকহারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উৎপাদন ও উন্নয়ন। জৈব কৃষিতে বিভিন্ন ব্যবস্থা অনুসরণ করে ফসল উৎপাদনের প্রয়োজনীয় জৈব পদার্থ খাদ্য উৎপাদন ও পানি ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। বংশানুগতভাবে সমন্বিত ও সুষ্ঠু হয় এমন গাছপালা ফসল নির্বাচন করা। এ ধরনের কিছু পদ্ধতি হলোÑ সারিবদ্ধ ফসল, বেড়া ফসল, মিশ্র বা আন্তঃফসল, সাথী ফসল, শস্য পর্যায়, আচ্ছাদন ফসল, সবুজ সার, মালচিং বা আচ্ছাদন, কৌশলী ফসল, প্রতিরোধী ফসল, সহায়ক ফসল এসব।

    জৈব কৃষিতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈবসার ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের জৈবসারের উৎস হচ্ছে খামারজাত সার, কম্পোস্ট সার, আবর্জনা সার, জৈবিক নাইট্রোজেন সংযোগকারী বা বিএনএফ উদ্ভিদ ও জৈব উৎস হতে পাওয়া অন্যান্য বর্জ্য পদার্থসমূহ, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, শুকনো রক্ত, হাড়ের গুঁড়া, সবুজ সার, অ্যাজোলা, ছাই। তাছাড়া পচানো তরল গোবর ও কিছু পচা সবজি জমিতে প্রয়োগ করা হয়। জৈব কৃষিতে কিছু কিছু পাতা, কা-, ডাল, মূল বা বাকলের রস কীটনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের কিছু গাছ হলো ধুতরা, ভেন্নার তেল, রেড়ি, বন্যতামাক, পেঁপে, শিয়ালমুথা, আফ্রিকান ধৈঞ্চা, বিশকাটালি, নিম, নিশিন্দা, অড়হর, তুলসীপাতা, ডোলকলমি, টমেটো-গাছপাতা, ল্যান্টানা, মেক্সিকানগাঁদা, পাটের বীজ, নিম, মেহগনি এসব। ভেষজ গাছপালার আছে বহুবিধ ব্যবহার। অনেক প্রকার গাছ-গাছড়া আছে যেগুলো পশুপাখির নানা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। যেমন পশুর চর্মরোগে বন্য তামাকের পাতা ঘষে দেয়া, গ্লিরিসিজিয়া পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সে পানি গরুর উকুন ও আঠালি দমনে ব্যবহার করা যায়। তুলসীপাতা দিয়ে আমের পোকা দমন করা যায়।