|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক : কলকাতা পুরসভায় গঠিত করা হচ্ছে ‘বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর’। ‘রিমুভাল অফ ডিফিকাল্টিজ’ আইন অনুযায়ী প্রশাসক হিসেবে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব ভার নিচ্ছেন বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম। বুধবার নবান্ন থেকে জারি হয়ে গেল এই নির্দেশিকা। ১৪ জন সদস্যকে নিয়ে এই প্রশাসক বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সেই বোর্ডের চেয়ারপারসন হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমকেই। এছাড়াও ওই বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ। অন্যান্য মেয়র পারিষদরাও।
এই প্রথম কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে প্রশাসক বসানো হল। আগামীকাল অর্থাৎ ৭ মে শেষ হচ্ছে কলকাতা পুরসভার বর্তমান বোর্ড। আগামীকালই মেয়র পদ থেকে ইস্তফা দেবেন ফিরহাদ হাকিম। এরপর দিনই অর্থাৎ ৮ মে থেকে কলকাতা পুরসভার দায়িত্ব চলে যাবে প্রশাসক বোর্ডের হাতে। কিভাবে কাজ করবে এই প্রশাসক বোর্ড, সে বিষয়ে চূড়ান্ত বৈঠক হবে ৮ মে। কলকাতা পুরসভার ৬৩৪ ধারা অনুযায়ী, ‘রিমুভাল অফ ডিফিকাল্টিজ’ আইনে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক হিসেবে কমিটির নেতৃত্ব দেবেন ফিরহাদ হাকিমই।
West Bengal: Firhad Hakim has been appointed as the Chairperson of the board of administrators of Kolkata Municipal Corporation with effect from 8th May 2020 till the first meeting of the Corporation is held after election. #CoronavirusLockdown pic.twitter.com/ProzDghTCP
— ANI (@ANI) May 6, 2020
নবান্নের এদিনের নির্দেশিকায় পুরআইনের ৬৩৪ ধারার উল্লেখ করা হয়েছে। পুরআইনের ৬৩৪ ধারায় বলা আছে, কোন আপৎকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। করোনা আবহে পরিস্থিতিও আপৎকালীন পরিস্থিতির সমান। তাই এই মুহূর্তে বিধানসভা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সেই অনুযায়ী এই প্রথম বর্তমান পুর বোর্ডের মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রীকে কলকাতা পুরসভার প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করা হল।
এই পদক্ষেপের কারণ হিসেবে নবান্নর নির্দেশিকায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, করোনা মোকাবিলায় জেরে শুরু হয়েছে লকডাউন। তার ফলেই পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুরভোট। এই পরিস্থিতিতে কবে আবার নির্বাচন করা সম্ভব হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না কিছুই। তাই এই মুহূর্তে পুরসভার মাথায় প্রশাসক বসানো ছাড়া আর কোন উপায় দেখছেন না আইন বিশেষজ্ঞরাও।
প্রসঙ্গত, কলকাতা পুরসভায় শেষ বোর্ড গঠন হয়েছিল ২০১৫ সালের ৮ মে। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত এই পুরবোর্ড গঠন হয়েছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে। এই বোর্ডের সময়সীমা শেষ হচ্ছে আগামী ৭ মে। নিয়ম অনুযায়ী, যেদিন থেকে বোর্ড গঠন হয়, আর পাঁচ বছর পরে নির্দিষ্ট দিনে বোর্ড গঠন করতে হয়। এদিকে করোনা সতর্কতায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো ভোট। এদিকে বোর্ডের মেয়াদ শেষ হলে বেঙ্গল মিউনিসিপাল অ্যাক্ট অনুযায়ী, নিদৃষ্ট পৌরসভায় বা পুরো নিগমের দায়িত্ব চলে যায় প্রশাসকের হাতে। যদিও এই নিয়ম কার্যকর নয় কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে।
কলকাতা কর্পোরেশন act ১৯৮০’র আইনানুযায়ী, বোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে, সেখানে প্রশাসক বা বিশেষ আধিকারিক বসানো যাবে না। নিয়ম অনুযায়ী, ৭ মে র আগে কলকাতা কর্পোরেশনের পুরভোট না হলে তালা ঝোলাতে হবে কলকাতা কর্পোরেশনে। এর ফলে কলকাতা কর্পোরেশনের তরফ থেকে বন্ধ হয়ে যাবে সমস্ত পরিষেবা। সাংবিধানিক সংকটে পড়বে কলকাতা পুরসভা। যদি একান্তই প্রশাসক বসাতে হয় সে ক্ষেত্রে বর্তমান পুরবোর্ডের অদক্ষতাকে প্রমাণ করতে হবে। সেই কারণে ৭ মের আগে পুরসভার নির্বাচন করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল নির্বাচন কমিশন। এদিকে লকডাউনের জেরে পিছিয়ে যায় পুরোভোট।
কলকাতা কর্পোরেশন অ্যাক্ট ১৯৮০’র ১১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কলকাতা পুর প্রশাসন অদক্ষ হিসেবে প্রমাণিত, কাজের ক্ষেত্রে সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজ্য সরকার মনে করলে পুর প্রশাসনকে শোকজ করতে পারে। সেই শোকজের উত্তর দিতে হবে পুর প্রশাসনকে। তারপর যদি মনে করে, তাহলে কলকাতা পুর প্রশাসনকে ভেঙে দিয়ে ছ’মাসের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে অথবা কোনও নির্দিষ্ট কমিটি দায়িত্ব নিতে পারবে।
অন্যদিকে, ১১৮ ধারা অনুযায়ী কলকাতা পুর প্রশাসনের বোর্ড ভেঙে দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে মেয়র এবং মেয়র পারিষদদের ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে। কলকাতা পুরসভার শীর্ষ আমলাদের কথায়, এই দু’টি ধারার কোনওটিই পুর প্রশাসনে আরোপ করা যাবে না। কারণ, কলকাতা পুর প্রশাসনের বোর্ড ভেঙেও দেওয়া হচ্ছে না অথবা সেটি অদক্ষ হিসেবেও প্রমাণিত হয়নি। তাই আইনে দু’টি ধারা থাকলেও এক্ষেত্রে তা লাগু হবে না। সে ক্ষেত্রে অর্ডিন্যান্স এনে নতুন আইন করতে হবে। এবং সেই আইনকে ছয় মাসের মধ্যে বিধানসভায় পাশ করাতে হবে। যদিও এই প্রক্রিয়া সময় সাপেক্ষ। তাই ‘রিমুভাল অফ ডিফিকাল্টিজ’ আইনের ৬৩৪ ধারা অনুযায়ী, বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘আপৎকালীন পরিস্থিতি’ বিবেচনা করে কলকাতা পুরসভার মাথায় প্রশাসক বসানো সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার।