মোদী ঝড়ে নয়, মমতার ভুলেই তছনছ মমতার স্বপ্ন

মোদী ঝড়ে নয়, মমতার ভুলেই তছনছ মমতার স্বপ্ন

    জাকির হোসেন সেখ, ২৩ মে নতুন গতি, কলকাতা: মোদি ঝড়ে নয় বরং মমতার ভুলেই চুরমার হয়ে গেল মমতার নিজের এতদিনকার স্বপ্ন। কারণ সত্যি সত্যিই মমতা বুঝতে পারেননি যে, তাঁর ৪২ এ ৪২ আসনে জয়ের স্বপ্ন চুরমার করে দেবে তাঁর‌ই নিজের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত। তাঁর ধারণা ছিল, কেন্দ্র থেকে মোদীর শাসন দুর করতে গেলে শুধুমাত্র “দু’হাজার উনিশ-বিজেপি ফিনিশ” স্লোগান তোলাটাই যথেষ্ট ছিল।
    এক তো লোকসভা নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক ময়দানে নামেন পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টা লোকসভা আসনের মধ্যে ৪২ টাতেই জয়ের বার্তা নিয়ে। এমনতর ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে মমতা নিজেই বারবার ঘোষণা দিয়েছেন যে, এই রাজ্যের ৪২টি আসনেই জিতবে তৃণমূল। বিরোধীদের জন্য এবার একটি আসনও ছাড়া হবে না। এমনকি এবছরের শুরুতে ১৯শে জানুয়ারি ব্রিগেডের সমাবেশে তথাকথিত ২৩ দলের তথাকথিত ইউনাইটেড ইন্ডিয়া নামক তথাকথিত বৃহত্তর জোট গড়লেও আশ্চর্যজনকভাবে পশ্চিমবঙ্গে কোনো দলের সঙ্গেই আসন ভাগাভাগি করতে রাজি হননি। একা লড়ার একগুঁয়েমি মানসিকতায় ব্রাত্য রেখেছিলেন কংগ্রেসকেও। একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দাঁড় করাতে না পারলে যে সারাদেশে মোদী ব্রিগেড কে পরাস্ত করা সম্ভব নয়, একথা মুখে স্বীকার করেও চন্দ্রবাবু নাইডুর প্ররোচনায় বাস্তব থেকে সহস্র যোজন দুরে থেকেছেন। নিজের রাজ্যের ৪২ আসনে ভাগ বসাতে দেননি কোনো দলকে। কারণ তাঁর ভ্রান্ত ধারণা ছিল যে, পশ্চিমবঙ্গে তাঁর দল ছাড়া বিকল্প নেই। ফলে একদিকে নিজের অহংকারের দাপটে রাজ্যে একা লড়ে ৪২ আসন ছিনিয়ে নিতে গিয়ে যেমন ধরা পড়েছেন মানুষের কাছে, তেমনি অবশিষ্ট ভারতে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে তথাকথিত ফেডারাল ফ্রন্ট করে মোদী ব্রিগেডকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে রাখার পথ পরিস্কার করে দিয়েছেন।
    পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে এসে বিজেপি নেতা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, মমতার অহংকার‌ই মমতাকে ডোবাবে। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা গেল, মোদীর কথাই সত্যি হয়েছে।
    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃনমূল কংগ্রেস ৪২ আসনের মধ্যে সম্ভবত ২৩ টা আসনে জিততে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর যে বিজেপিকে তিনি শূন্য আসন দিয়েছিলেন, সেই বিজেপিই এবার ছিনিয়ে নিতে চলেছে ১৮টা আসন।
    তবুও ভালো, অনেক রাত পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে যে কংগ্রেস এবার দু’টো আসনে জিততে চলেছে। যদিও চূড়ান্ত ফলাফল জানা যাবে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের কমকরেও পাঁচটি ভিভিপ্যাটের ভোট গণনার পর। তার মানে চূড়ান্ত ফল পেতে আগামীকাল শুক্রবার সকাল হয়ে যেতে পারে।
    রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বেশিরভাগই বলছেন যে, মমতার ৪২ এ ৪২ আসন জেতার ঘোষণা শিক্ষিত শ্রেণীর মানুষ মোটেও মেনে নিতে পারেননি। অনেকেই বলেছেন, এটা গণতন্ত্রের ভাষা হতে পারে না। উপরন্তু প্রতিটা নির্বাচনী সভায় গিয়ে মুসলিম ভোট ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভুল ভাল মাশাল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, লাইলাহা ইত্যাদির শব্দোচ্চারণ করাকেও অসাম্প্রদায়িক মানুষ ভালো ভাবে নেননি। এসব কারণেই এবার ভরাডুবি হয়েছে মমতার।