|
---|
নতুন গতি নিউজ ডেস্ক: সারদা-কাণ্ডে নাম জড়ানোর পর থেকে তৃণমূল পার্টিতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ক্রমশ দূরত্ব বাড়তে থাকে বর্ষিয়ান নেতা মুকুল রায়ের তাকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি।শেষমেষ সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি বিজেপিতে যুক্ত হন এবং তার পথ অনুসরণ করে বিজেপিতে যুক্ত হয় বহু তৃণমূল নেতা তারমধ্যে অর্জুন সিং সহ আরও অন্যান্য তৃণমূল নেতা। লোকসভায় মুকুল রায় রাজনৈতিক কুশলতা দেখালেও পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে ফিকে পড়ে যায় ফলে তার রণকৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে বিজেপির অন্দরে আর সেটাই ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে এবং প্রকট হয়ে উঠছে দূরত্ব।
তাঁকে নিয়ে নানা সময় নানা জল্পনা ছড়ালেও এখনো বাস্তব হয়নি কিছুই। যা নিয়ে বেশ হতাশ তাঁর অনুগামীরাও। এহেন মুকুলকে দলে নিলেও কেন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দিচ্ছে না বিজেপি? তিন বছর ঘুরতে চললেও বিজেপিতে এখনো কোনও বড় পদ পাননি তিনি। ফেরা হয়নি রাজ্যসভায়। জোটেনি মন্ত্রিত্বও। রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও নামমাত্র। পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করলেও মুকুল রায়ের ঘাঁটি এখনো সেই নয়া দিল্লি। তাঁকে নিয়ে নানা সময় নানা জল্পনা ছড়ালেও এখনো বাস্তব হয়নি কিছুই। যা নিয়ে বেশ হতাশ তাঁর অনুগামীরাও। এহেন মুকুলকে দলে নিলেও কেন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ দিচ্ছে না বিজেপি? মমতাকে রুখতে কেন পুরোদমে ময়দানে নামাচ্ছে না তাঁর ‘রাজদার’ মুকুলকে?রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পিছনে রয়েছে নানা কারণ।
১. বিজেপি একটি মতাদর্শ চালিত দল। গোটা ভারতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু প্রধান শাসনব্যবস্থা কায়েম তাদের প্রধান লক্ষ্য। ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়াও অন্যতম লক্ষ্য দিল্লির শাসক দলের। আর এই লক্ষ্যে তাদের মূল চালিকাশক্তি RSS. মতাদর্শের প্রতি কঠোর আনুগত্য প্রমাণ না করতে পারলে তাই বিজেপিতে হালে পানি পাওয়া মুশকিল। যা বিপরীত রাজনৈতিক শিবির থেকে গিয়ে এত কম সময়ের মধ্যে করা মুশকিল।
২. সংগঠক হিসাবে সুনাম থাকলেও মুকুলের জনসমর্থনের ভিত্তি স্পষ্ট নয়। এখনো পর্যন্ত কোনও দিন জনতার ভোটে দিতে আইনসভার সদস্য হননি তিনি। হয়েছেন রাজ্যসভার সদস্য। যা দিয়ে জনভিত্তি প্রমাণ করা যায় না।
৩. মুকুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে ভুরিভুরি। তৃণমূল নেতাদের অনেকেই দাবি করেন, দলের তরফে চিটফান্ডের সঙ্গে বোঝাপড়ার দায়িত্ব ছিল মুকুলেরই ওপরে। ফলে ভবিষ্যতে চিটফান্ড কাণ্ডে তৃণমূলকে চাপে ফেলতে গেলে মুকুলের গায়েও হাত দিতে হবে বিজেপিকে। আগে থেকে তাঁকে বড় পদ দিয়ে রাখলে তখন নিজের হাত নিজেই পোড়াবে বিজেপি।
৪. লোকসভা নির্বাচনের পর মুকুলের সাংগঠনিক দক্ষতাও প্রশ্নে মুখে পড়েছে বিজেপির অন্দরে। লোকসভা নির্বাচন মিটতেই বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে পুরসভা ও পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের ঝাঁকে ঝাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিজেপিতে যোগদান করিয়েছিলেন মুকুল। সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই সেই সব জনপ্রতিনিধিরা ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলে। আর সেজন্য জবাবদিহি করতে হয়েছে দিলীপ ঘোষদের। রাতারাতি দক্ষতা প্রমাণের জন্য মুকুলের এহেন হঠকারী কাজ মোটেও ভাল ভাবে নেয়নি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
৫. শুধু তাই নয়, নিজের এলাকাতেও বিজেপির সংগঠন তেমন চাঙ্গা করতে পারেননি মুকুল। মুকুলের খাসতালুক কাঁচরাপাড়ায় বিজেপির যেটুকু সংগঠন রয়েছে তা অর্জুন সিংয়ের দৌলতে।
৬. বিজেপির অন্দরের খবর, তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে যে নতুন প্রশাসন দেওয়ার কথা বলছে বিজেপি মুকুল রায় তার সঙ্গে মানানসই নন। মুকুলকে সামনে আনলে বিরোধীরা পুরনো মদ নতুন বোতলে পরিবেশন করা হচ্ছে বলে দাবি করতে পারে। সেক্ষেত্রে ভেস্তে যেতে পারে বিজেপির পরিকল্পনা।
৭. মুকুলের বয়সও এক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। ৬৫ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সাধারণত পিছনের সারিতে পাঠিয়ে দেয় বিজেপি। মুকুলের এখনই বয়স ৬৬ বছর। ফলে তার দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কম।
৮. মুকুলকে যোগদান করিয়ে তৃণমূলে যতবড় ভাঙন ধরানো যাবে বলে মনে করা হয়েছিল তেমনটা হয়নি। সব্যসাচী দত্ত, সৌমিত্র খাঁ আর হাতে গোনা বিধায়ক ছাড়া এখনো দল ছাড়েননি কেউ। এমনকী একদা তাঁর ছায়াসঙ্গী শিউলি সাহাও এখনো বহাল তবিয়তে তৃণমূলে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে মুকুলের দায়িত্ব বাড়িয়ে চিটফান্ড কেলেঙ্কারির কুশীলবদের ঠাঁই দেওয়ার অভিযোগ ঘাড়ে নিতে রাজি নয় বিজেপি।
৯. গত প্রায় ১০ বছর ধরে লাগাতার পড়ে থেকে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক নেতা তৈরি করে ফেলেছে বিজেপি। ফলে রাজ্যে তাদের নেতৃত্বের অভাব নেই। মুকুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৃণমূল থেকে জনপ্রতিনিধিদের বিজেপিতে আনতে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের মতে, করোনা ও আমফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে গণরোষ তৈরি হয়েছে তাতে এমনিতেই বিজেপিতে নাম লেখাতে হবে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রী-বিধায়কদের। মুকুল রায়ের আর দরকার নেই।