দৌড়ানোটা যেন নেশা, ডোমজুড় ডাসির রাজকুমার এবার দৌড়ে পৌছবে দার্জিলিং

নিজস্ব সংবাদদাতা : দৌড়ানোটা যেন নেশা, ডোমজুড় ডাসির রাজকুমার এবার দৌড়ে পৌছবে দার্জিলিং। দরিদ্র পরিবার কোনো মতে চলে সংসার, অদম্য ইচ্ছা ২০ বছর বয়সী হাওড়া ডোমজুড় ডাসী সাঁতরাপাড়ার বাসিন্দা রাজকুমার গৌড়। সমস্ত প্রতিকূলতাকে পিছনে ফেলে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে অবিচল যুবক! কিশোর বয়স থেকেই স্বপ্ন দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে সে।

    স্কুল পড়তে পড়তেই দৌড়ে একাধিক পুরস্কার শৈশব থেকেই ক্যারাটে প্রশিক্ষণ শুরু, ক্যারাটেতে ব্ল্যাকবেল্টও অর্জন করে, দৌড় ও ক্যারাটেয় অসংখ্য মেডেল ট্রফি তার একচিলতে টালির ঘরে। অলিম্পিকে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে চায় রাজকুমার, সেই লক্ষ্য রেখেই প্রতিদিন নিয়মিত চলে কঠোর অনুশীলন। এর মাঝেই সে বেরিয়ে পড়ে লম্বা সফরে। কখনো হাওড়া থেকে দীঘা, হাওড়া থেকে তারাপিঠ, আবার কখনোবা হাওড়া থেকে ঝাড়খন্ড।এবার দৌড়ে লক্ষ্য স্থির করেছে প্রায় ৭০০ কিমি পাড়ি দেবে,সে বেরিয়ে পড়েছে হাওড়া থেকে দার্জিলিং এর উদ্দেশে। সেখান থেকে ফিরে অগ্নিবীরে আবেদন পত্র জমা করবে। রাজকুমারের মা মীরা দেবী জানান, ছোটবেলা থেকেই দৌড় ও খেলাধুলার প্রতি দারুণ আগ্রহ বহু পুরস্কারও জিতেছে।ছেলে স্বপ্ন দেখে দেশের সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে। ছেলের স্বপ্ন কবে পূরণ হবে জানিনা। দিন এনে দিন খাওয়া পরিবার, কোনোমতে চলে সংসার। যতটা সম্ভব ছেলের পাশে থাকার চেষ্টা করি।দৌড়ে কেন? রাজকুমার গৌড় কে জিজ্ঞেস করায় সে জানায়,যেভাবে পেট্রোল ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষকে এবার হয়তো নিজের পায়ের উপরই বেশি ভরসা করতে হবে।অন্যদিকে সে জানায় বাংলার মানুষ কতটা ফিট! তা তুলে ধরতে, সাইকেল বা হেঁটে নয় দৌড়ে দেখাতে চাই। আমার লক্ষ্য অলিম্পিক এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান করা প্রতিদিন অনুশীলন করি আর এই দৌড়ানো মানে সেই দিকেও আমার অনুশীলন বজায় থাকবে।

    সকালে কয়েক ঘণ্টা অনুশীলন, ক্যারাটে প্যাকটিস এবং নিজের ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ক্লাস। এভাবেই প্রতিদিন পার হয় রাজকুমারের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাজকুমার গৌড় স্থির করে দৌড়ে দার্জিলিং যাবে। দৌড়ে দার্জিলিং যেতে সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় হাজার ছয়েক টাকা, একটু একটু করে কয়েক হাজার টাকা সঞ্চয় করে, মে মাসের শেষে দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে বেরোবে। মে মাসের শুরুতেই ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন খেলতে শিলিগুড়ি যেতে হয়।

    সেখানেই তার সঞ্চয়ের টাকার প্রায় পুরোটাই খরচ হয়ে যায়। দার্জিলিং যাত্রায় কিছুটা অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে এক ব্যক্তি আশ্বাস দিয়েছিলেন, সেটাও অনিশ্চিত হয়! টাকার অভাবে এক প্রকার দার্জিলিং সফর বন্ধ হয়ে যায় রাজকুমারের। ‘ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়’ বাংলার প্রবাদই যেন সত্যি হল রাজকুমার এর ক্ষেত্রে।নতুন করে প্রস্তুতি রাজকুমার গৌড়ের, সে জানায়, এক দাদা(আব্দুল মন্ডল) দার্জিলিং যাওয়ার জন্য রজকুমারকেকে একটা ভালো জুতো উপহার দেয়। কিন্তু দার্জিলিং যাওয়া হবে কি করে, তার কাছে নেই যে কোন টাকা। সেটাও কিছুটা সামাল দেবার আশ্বাস দেন তার ক্যারাটে প্রশিক্ষক মনোরঞ্জন বাবু।

    এদিকে রাজকুমারের ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবক এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ৪২০০ টাকা জোগাড় হয়েছে। রাজকুমারের বাবা ১০০ দিনের কাজের শ্রমিক। সে জানায় বাবার একাউন্টে কোন টাকা নেই। তবে বাবার এটিএম কার্ডটা সঙ্গে নিয়েছি,ক্যারাটে স্যার মনোরঞ্জন বাবু বলেছেন অসুবিধা হলে জানাতে তিনি টাকা পাঠাবেন। তাই বিলম্ব না করে বাবার এটিএম (ATM) কার্ড সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে রাজকুমার (Rajkumar Gour- 91 90626 50691) সে জানায়, প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ কিলোমিটার পথ দৌড়োবে ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত, রাত্রে বিশ্রাম নেবে।তার সঙ্গে এক বন্ধুর যাবার কথা ছিল বন্ধু থাকলে রাত্রিতেও দৌড়ানোর কথা ছিল। প্রথম দিন নগরদীপ স্টেশনে রাত কাটায়, সেখান থেকে ভোর ৩.৩০ বেরিয়ে পড়ে এরপর সে বিশ্রাম নেবে বহরমপুরে, মালদা মুর্শিদাবাদ শিলিগুড়ি হয়ে দার্জিলিং পৌঁছবে। এর আগে কখনো পাহাড়ে যায়নি সে, পাহাড়ের পথ কতটা তার পক্ষে অনুকূল তা জানা নেই। তবে ৬-৭ দিনে মধ্যে দার্জিলিং পৌঁছবে আশা করছে, সেখানে এক দু’দিন বিশ্রাম নিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবে।