বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের মাথার ব্রেন চুরি হয়ে গেছিল জানেন কি?

নতুন গতি নিউজ ডেক্স: ১৯৫৫ সালে বিশ্বের বিখ্যাত গনিতবিদ ও পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ৭৬ বছর বয়সে মারা যান। তিনি মারা যাবার পর তার ব্রেইনটি খুব তারাতারি আলাদা করেন আমেরিকার প্রিন্সটোন হস্পিটাল এর প্যাথোলজিস্ট ডঃ টমাস হার্ভে। কিন্তু তার পরে এই ব্রেইনের এর কি হল তা সবার কাছে অনেকটা রহস্য থেকে যায়।


    তারপরে ১৯৭০ সালে এই ব্রেইনের খোজের উদ্দেশ্যে মাসিক নিউজার্সি পত্রিকার একজন রিপোর্টার স্টিভেন লেভি ড. টমাস হার্ভের সাথে দেখা করতে তার নতুন কর্মস্থল ক্যানসাস যান। সেখানে গিয়ে স্টিভ লেভি দেখেন, আইনস্টাইনের ব্রেইনটি কাঠের দুটি বক্সে রাখা, যার উপরে লেখা ছিল “কোস্টা সাইডার”। তার ব্রেইনের সেরেবেলাম (মাথার একেবারে পিছনে গাড়ের কাছে থাকে) আর সেরেব্রাল কর্টেক্স (ব্রেইন এর উপরের পুরা অংশ) এর কিছু অংশ বাদে বাকি পুরো ব্রেইনটি কেটে পাতলা স্লাইস করা হয়েছিল গবেষণার জন্য। চলুন দেখা যাক কি পাওয়ে গেছিলও গবেষণায়…
    আইনস্টাইন মারা যাবার ৩০ বছর পরে তার ব্রেইন এর উপর ১৯৮৫ সালে একটি পেপার বের হয় যে পেপার এর সিনিয়র অথর ছিলেন সেই ড. টমাস হার্ভে। নিউরোসায়েন্টিস্ট রা মানুষের ব্রেইনকে টোটাল ৪৭ টি ভাগে চিহ্নিত করেছেন যাকে বলে ব্রডম্যান ম্যাপ। এ ম্যাপ অনুসারে মানুষের ব্রেইনের ৯ ও ৩৯ নাম্বার এরিয়া খুবি গুরুত্বপুর্ন। মানুষের প্ল্যানিং, স্মৃতি আর মনযোগ এর জন্য এরিয়া ৯ কাজ করে আর এরিয়া ৩৯ কাজ করে ভাষা আর জটিল সমস্যা নিয়ে। ড. টমাস হার্ভের এই দল গবেষণায় করেছিলেন এই দুই এরিয়ার নিউরন এবং গ্লিয়াল সেল এর অনুপাত নিয়ে। তারা আইনস্টাইনের ব্রেইনের এই অনুপাত তুলনা করেছিলেন আরো ১১ জনে মৃত ব্যাক্তির ব্রেইন এর সাথে যাদের গড় বয়স ছিল ৬৫। এ পেপারের ফলাফলটা ছিল এরকম “The results of the analysis suggest that in left area 39, the neuronal: glial ratio for the Einstein brain is significantly smaller than the mean for the control population (t = 2.62, df 9, p less than 0.05, two-tailed). Einstein’s brain did not differ significantly in the neuronal:glial ratio from the controls in any of the other three areas studied.” তার মানে দাড়ালো আইনস্টাইনের ব্রেইন এর একমাত্র বাম দিকের ৩৯ নাম্বার এরিয়াতে “একটি নিউরনের জন্যা একাধিক গ্লিয়াল সেল” ছিল যা অন্য ১১ টি ব্রেইন এ ছিল না। এই রেজাল্ট এর ব্যাখ্যাটা ছিল এরকম– যেহেতু এরিয়া ৩৯ এ বেশী গ্লিয়াল সেল, তার মানে বেশী আইনস্টাইনের ব্রেইন বেশি শক্তি ব্যায় করে–যার কারনেই হয়তো তার চিন্তা শক্তি ও তাত্বিক জ্ঞান সাধারনের চেয়ে বেশী ছিল। ২০০৬ সালে এরকমই আরেকটা পেপার পাব্লিশ হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে আইনস্টাইনের ব্রেইন এর গ্লিয়াল সেল এর গঠন (যেমন বড় এস্ট্রোসাইট প্রসেস) অন্যদের চেয়ে আলাদা ছিল।
    যদিও ড. হার্ভের এ ফলাফল আইনস্টাইনের মেধাবিত্বকে নিয়ে প্রথম ফোকাস করে ব্রেইন এর গঠন কে দায়ী করেন, তারপরেও গবেষক সমাজে এ নিয়ে কিছু সমালোচনে রয়েছে। যেমন, প্রথমত, এখানে ১ জন আইনস্টাইনের সাথে তুলনা করা হয়েছে ১১ জনের ব্রেইন। ১১ জন ওকে বাট ১জন কে নিয়ে পাওয়া গবেষণালব্দ ফলাফল অবশ্যই পারিসাংখিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ! দ্বিতিয়ত, যেই ১১ জনের ব্রেইন এর সাথে কম্পেয়ার করা হয়েছে তাদের গড় বয়স আইনস্টাইনের চেয়ে ১২ বছর কম ছিল, এবং কনিষ্ঠ ব্রেইনের বয়স ছিল ৪৭ বছর। যেহেতু ব্রেইন নিয়ে মোটামুটি সবই অজানা, তাই এটা বলা মুশকিল যে আসলেই অই বয়সে (৭৬) বয়সে গ্লিয়াল সেলঃ নিউরন বেড়ে যায় কিনা? তৃতীয়ত, ওরা অনুপাত দেখেছে কিন্ত নাম্বার কিয়ে কিছু বলেনি। তাছাড়াও এ বিষয়টি ক্লিয়ারভাবে ঐ পেপারে উল্লেখ করা হয় নি কিভাবে তারা সকল ব্রেইন এর ৩৯ আর ৯ নং এরিয়া স্লাইস করেছে, পিউরিটি কত পার্সেন্ট?
    আরেকটা কথা হল, ব্রেইন এর কোন এরিয়া যেকোন একটি কাজ ১০০% করতে পারেনা! ব্রেইন কাজ করে তার বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে। কিন্তু অন্য এরিয়া নিয়ে কিছু বলা হয়নি ঐ পেপারে।
    আইনস্টাইনের এর মস্তিষ্ক নিয়ে দ্বিতীয় যে পেপারটিবেশী আলোচনায় এসছিল তা প্রকাশ হয় ১৯৯৬ সালে। এ পেপারে বলা হয় তার ব্রেইন এর ওজন ১২০০ গ্রাম যা নরমাল মানুষের চেয়ে ওজনে কম (১৪০০ গ্রাম)। তার ব্রেইন এর এরিয়া ৯ অন্যদের (৫ জনের সাথে কম্পেয়ার) চেয়ে পাতলা ছিল এবং অনেক বেশী নিউরন ছিল। তার মানে অল্প যায়গায় খুব ঘেষাঘেষি করে অনেক বশী নিউরন ছিল।
    ১৯৯৯ সালে আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আইনস্টাইনের মগজের পেরিয়েটাল লোব (টোটাল ৪টি বড় ভাগে ব্রেইন বিভক্ত-পেরিয়েটাল লোব হল মাথার ঠিক উপরের লোবটি) খাজগোলু অন্য ৩৫ জনের চেয়ে আলাদা; পার্শ্বিক খাজগুলো ছোট/মিসিং ছিল। আর ব্রেইন এর এ লোব/ভাগটি গানিতিক যুক্তি, স্থানিক চিন্তাশক্তি নিয়ে কাজ করে থাকে। পাশপাশি তার ব্রেইন ১৫% বেশী প্রশস্ত ছিল। সব কিছু মিলে ধারনা করা হয় তার নিউরোনগুলো কাজ করার জন্য যথেষ্ঠ যায়গা পেত যা তার গানিতিক ও স্থানিক চিন্তা শক্তিতে সাহায্য করত।
    ২০১৩ সালে তার ব্রেইনের এর ফটোগ্রাফি নিয়ে একটি পেপার পাব্লিশ হয় যেখানে দেখানো হয়েছে, আইনস্টাইনের ব্রেইনের প্রিফন্ট্রাল এরিয়া অন্যদের চেয়ে প্রশস্ত, বিশেষ করে ব্রেইন এর যে অংশ জিহবা ও মুখমন্ডল নিয়ে কাজ করে।

    আইনস্টাইনের ব্রেইন নিয়ে গবেষণার প্রধান অসুবিধা/লিমিটেশন হল—পৃথিবীতে আইনস্টাইন এর মত জিনিয়াস একজনই ছিল/আছে। তাই এ গবেষণা আরো বেশী গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য পৃথিবীর বিখ্যাত ম্যাথমেটিশিয়ান্দের ব্রেইন সংগ্রহ করে রাখতে হবে। আইনস্টাইনের মত এরকম বড়মানের বিজ্ঞানীর ব্রেইন নিয়ে গবেষণার ফলাফল হয়তো একসময় সঠিকভাবে বলতে সক্ষম হবে ।