ক্ষুধা মুক্ত ভয় মুক্ত ভারত গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে ১৪ বছর পথ অতিক্রম করল এসডিপিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা : ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ, পৃথিবীর সর্বোচ্চ জনসংখ্যার এই দেশে নানা ভাষা জাতি বর্ণের সকল মানুষের সমান অধিকার নিয়ে জীবন যাপন করার পথ রয়েছে আমাদের সংবিধানে।

    শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবিকা, ধর্ম পালন, ন্যায় বিচার, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা এবং, স্বাধীনতা হরণকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সকলকে সমান অধিকার দিয়েছে।

    কিন্তু দেশের র বর্তমান প্রেক্ষাপট এমন এক জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যেখানে দেশের ১৪২ কোটি জনগণকে যাবতীয় অধিকার দানকারী সংবিধান নিজেই নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলার মুখে। সংবিধানকে সংশোধন করার ঘোষণা দিয়ে বিজেপি সরকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারকে কেড়ে নিয়ে বিশ্বের সামনে ভীত ও ক্ষুধার্ত দেশের তালিকায় আমাদের প্রিয় দেশকে সবার ঊর্ধ্বে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

    দেশের সংবাদ মাধ্যম দ্বারা ভারতকে বিশ্ব গুরু বলে প্রচার করা হলেও বিশ্বের সামনে ভারত একটা ভীত ও ক্ষুধার্ত দেশে পরিণত হয়েছে, যে দেশে দিনে দুপুরে রাস্তায় মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে, গণ ধর্ষণ করে ধর্ষিতার দেহ প্রশাসন দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, পৃথিবীর ক্ষুধার্ত তালিকায় ১২১ টি দেশের মধ্যে ১০৭ নম্বরে । তাই দেশকে সত্যি সত্যি বিশ্বের সামনে বিশ্ব গুরু হিসেবে দাঁড় করাতে গেলে ভয় ও ক্ষুধা মুক্ত করে গড়তে হবে। সেই ভয় ও ক্ষুধা মুক্ত ভারত গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে, দেশকে বাস্তবে বিশ্ব গুরু হিসেবে দাঁড় করাতে ১৪ বছর পথ অতিক্রম করে আজ ১৫ বছরে পা রাখল সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া বা এসডিপিআই ।

    আজকের দিনে ২১ জুন ২০০৯ ভারতকে প্রকৃত পক্ষে বিশ্ব গুরু হিসেবে দাঁড় করাতে এক গুচ্ছ অঙ্গীকার নিয়ে পথ চলা শুরু করে এসডিপিআই। দেশকে ক্ষুধা ও ভয় থেকে মুক্তি না করতে পারলে দেশের উন্নতি কোনও দিন সম্ভব নয় । তাই ক্ষুধা ও ভয় মুক্ত ভারত স্লোগান নিয়ে পথ চলা শুরু করে এবং বিগত ১৪ বছর দেশের সকল পরিস্থিতিতে জনগণ যখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়েছেন তখন সবার আগে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া সেই ভয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, ভীতসন্ত্রস্ত মানুষদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে অবগত করে সাহস প্রদান করেছে।

    মসজিদে হামলা করে মুসলিম সম্প্রদায়কে ভীতসন্ত্রস্ত করা হোক বা চার্চে হামলা করে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে হোক বা মহিলাদের ইজ্জত নিয়ে লাঞ্ছিত করা হোক বা দলিতদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে হোক যাবতীয় বিষয়ের বিরুদ্ধে সবার আগে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া রাস্তায় নেমেছে, আন্দোলন করেছে, ভয়কে পরাজিত করে সাহস প্রদান করেছে।

    দেশকে নিপীড়িত বঞ্চিত শ্রেণী মুক্ত করার অঙ্গীকার করেছে, এমন ব্যবস্থা গড়ার অঙ্গীকার করেছে যেখানে থাকবে না এমন কোনো শ্রেণী যারা সমস্ত সুবিধা ভোগ করবে এবং এমন কোনো শ্রেণী যারা শুধুই সমাজের বোঝা বয়ে বেড়াবে। এমন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করেছে যেখানে থাকবে নৈতিক শৃঙ্খলা, মানবিক ঐক্য ও সাম্য। এমন দেশ গড়ার অঙ্গীকার করেছে যেখানে থাকবে সাংবিধানিক সততা ও সামাজিক সচেতনতা, সকলের জন্য সম সুযোগ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা। গড়ে তোলা হবে ক্ষুধা ও ভয় মুক্ত ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা।

    স্বাধীনতার ৭৫ বছর ধরে দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল কোন না কোন সময়ে আপোষ করেছে ফ্যাসিবাদের সাথে, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে থাকা সত্ত্বেও বলিদান দিয়েছে নিরীহ মুসলমানদের। চোখের সামনে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে এবং পরবর্তীতে হত্যা করে দুই হাজার মুসলমানকে। ভোট ব্যাংক চলে যাওয়ার ভয়ে রাজধর্ম পালন করেনি কংগ্রেস সরকার, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও মসজিদ পুনরায় নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাখলেও দেশের বিচার ব্যবস্থা বিশ্বাস এর উপর নির্ভর করে মন্দির নির্মাণের রায় দেয় ।

    এক কথায় দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল ধর্ম নিরপেক্ষতার মুখোশ পড়ে শুধু ভোট ব্যাংক বানিয়ে গেছে দেশের দলিত , আদিবাসী , মুসলিম , খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ , শিখ সম্প্রদায়কে। তাই সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া প্রকৃত পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষতার পরিচয় বহন করে ভারতকে একটি সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েছে এবং দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সামাজিক, আর্থিক , সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সুবিচার নিশ্চিত করবে। মত প্রকাশ, বিশ্বাস, সংস্কৃতিচর্চা, আস্থা এবং ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে স্বাধীনতার ব্যবস্থা করবে। পদমর্যাদা ও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সমতা বিধান এবং পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও প্রতিটি মানুষের মর্যাদার নিশ্চয়তা দেবে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিধান নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করে চলেছে।
    আজ ২১ জুন দেশের সাথে এই রাজ্যেও নানান কর্মসূচি র মাধ্যমে ১৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হচ্ছে।

    আজকে এই প্রতিষ্ঠা দিবসে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক হাকিকুল ইসলাম মহাশয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বার্তা দেন আজ ৭৫ বছর থেকে ভারতবর্ষের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলো একের পর এক রাজনৈতিক দলের কাছে ভাড়াটে হিসেবে থেকেছে, প্রতিটা দল এদের থেকে ভোট ব্যাংক নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে, কোনোদিন এরা নিজ বলে গন্য হয়নি, আজ এই প্রতিষ্ঠা দিবসে সোস্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়দের ঘোষণা দিতে চাই এই পতাকার ছায়া তলে আপনারা ভাড়াটে নয়, আপনারাই মালিক এই পতাকার।

    জনগণের ক্ষমতা, ক্ষমতায় জনগণকে পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে এসডিপিআই, এসডিপিআই-এর উদ্দেশ্য হল কিছু লোকের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে জনগণের কাছে হস্তান্তর করা। রাজনৈতিক ক্ষমতা সমাজের তলানিতে থাকা মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং ক্ষমতা প্রয়োগে তাদের যথাযথ অংশ নিতে হবে। সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে পরিবর্তন কেবল প্রয়োজনীয় নয়, অনিবার্য এবং নিশ্চিত। স্বাধীনতা সমস্ত মানুষের জন্মগত অধিকার এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা হলো সমানভাবে অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার মাধ্যম, তাই নিজের প্রাপ্য অধিকারকে ছিনিয়ে নিয়ে স্বাধীন ভাবে জীবন যাপন করার জন্য আপনাদের সকলকে এসডিপিআই-এর ছায়া তলে আসার আহবান জানানো হচ্ছে।