রেশন দুর্নীতি মামলাকে ঘিরে চাঞ্চল্যকর তথ্য এবং নতুন মোড়

দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা: রেশন দুর্নীতি মামলা ঘিরে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছে ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান এবং তাকে গ্রেফতার করার পরেই তদন্তে নেমে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী, তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। এরপরই এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে লাগাতার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এই রাজনৈতিক আক্রমনের মাঝেই ঘটলো আরেক কান্ড।

    কি সেই কান্ড? এর আগে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক অভিজিৎ দাসের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল মেরুন রঙের একটি ডায়েরি। সেখানে টাকার লেনদেন সম্পর্কে বেশ কিছু তথ‌্য মিলেছে বলে দাবি ইডির। এবার বাকিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি ডায়েরি এবং সেখান থেকেও বেশ কিছু চাঞ্চল‌্যকর তথ‌্য পেয়েছেন ইডি আধিকারিকরা।

    ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, যাঁর কাছ থেকে ডায়েরিটি উদ্ধার হয়েছে, সেই ব‌্যবসায়ী জেরার মুখে জানিয়েছেন যে, গত দশ বছর ধরে তিনি বেআইনিভাবে রেশনদ্রব‌্য কেনাবেচা করছেন। তাঁর কাছে রেশনের চাল বা গম কেনাবেচার লাইসেন্সও নেই। তিনি বেআইনিভাবেই রেশন ডিলারদের মাধ‌্যমে চাল ও গম কিনে বাইরের বাজারে ব‌্যবসায়ীদের বিক্রি করতেন। তাঁদের মধ্যে প‌্যাকেজিং ব‌্যবসায়ীরাও রয়েছেন বলে সন্দেহ ইডির গোয়েন্দাদের। ওই ব‌্যক্তিকে জেরা করে বেশ কয়েকজন রেশন ডিলারের নামও উদ্ধার হয়েছে। ওই রেশন ডিলারদের কাছ থেকে আরও তথ‌্য জানার চেষ্টায় রয়েছেন ইডি আধিকারিকরা।

    অন্যদিকে, এই মামলায় তদন্তে নেমে ইডির আধিকারিকরা জানতে পারেন, দুটি সংস্থায় শেয়ারে টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, যার ডিরেক্টর পদে ছিলেন প্রাক্তন আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাসের মা ও স্ত্রী। এই সম্বন্ধে অভিজিৎ জানান, “ওই দুটি সংস্থায় মা ও স্ত্রীকে ডিরেক্টর করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কারণ, ওনার নির্দেশ তখন আমাকে মানতেই হত। যদিও পরে যখন দায়িত্ব থেকে সরে যাই, তখন মা ও স্ত্রীকে সরিয়ে আনি। কি লেনদেন হত, তা আমি জানিনা।”

    অন্যদিকে, রেশন দোকানে আসল ‘স্টক’ কত, খাদ্যদপ্তর আর ডিলারের কাছে থাকা তথ্যের ফারাক উসকে দিল নতুন বিতর্ক। ঘটনার জেরে অপর্যাপ্ত রেশন বিলির অভিযোগে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ দানা বাঁধছে। তথ্যের এই গরমিলে নতুন করে অশনি সংকেত দেখছেন ডিলাররা এবং তাঁরা আঙুল তুলছেন দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশের দিকে। তাঁদের আঙ্গুল আইটি সেলের দিকে।

    যদিও আধিকারিকদের দাবি, দপ্তর থেকে এক চুল ভুল পাঠানোর কোনও জায়গা নেই। সরকারি নিয়ম ধরে একেবারে ইঞ্চি মেপে স্টকের হিসাব পাঠানো হয়। সেই তথ‌্য ডিলারদের পাশাপাশি ফোন বার্তায় গ্রাহকদেরও পাঠানো হয়। তাঁদের প্রশ্ন, যে প্রক্রিয়ায় ডিলারদের কাছে রেশন সামগ্রী যায়, তার এক চুল কম বা বেশি গ্রাহকের কাছে গেলে বাকি অংশ ডিলারের কাছেই থাকবে। সেখানে কোনও ডিলার গরমিল করতে পারবেন না। কারণ কোনও ডিলারের ‘স্টক ক্লিয়ার’ না হলে তার তথ‌্যও দপ্তরের আইটি সেলে চলে যায়।