সিলভার জুবিলি উদযাপিত হল কালিয়াচক কলেজ

নতুন গতি, মালদা: পা পা হাটি হাটি করে পঁচিশটি বছর উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মালদা জেলার দক্ষিণ প্রান্তিক এলাকায় আলোকবর্তিকা হিসাবে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে নিয়োজিত কালিয়াচক কলেজের রজত জয়ন্তী পালিত হল ১৪ ই অগাস্ট। কভিড বিধির কারণে বড় প্যান্ডেল বা বড় অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও সিলেক্টেড কিছু অতিথিদের নিয়ে দুটি পর্যায়ে অর্থাৎ প্রারম্ভিক পর্যায়ে পতাকা উত্তোলন এবং সমাপ্তি পর্যায়ে আলোচনা সভার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয় দিন জোড়া এই অনুষ্ঠানের।
একদিবসিয় সিলভার জুবিলি অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কলেজের পতাকা উত্তোলন এর মাধ্যমে। কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখ ভাগে দক্ষিনে বারোটি এবং উত্তরে বারোটি পঁচিশ বছরের এমব্লেম অঙ্কিত ছোট ছোট পতাকা মধ্যস্থলে কলেজের লোগো অঙ্কিত একটি বড় পতাকা দিয়ে সজ্জিত হয় পতাকা ভবন। এই শুভ আরম্ভের পতাকা উত্তোলন করেন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর নাজিবর রহমান। পতাকা উত্তোলন প্রক্রিয়ায় যুক্ত হোন পশ্চিম বাংলা সরকারের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা কালিয়াচক কলেজের গভর্নিং বডির প্রাক্তন সভাপতি কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, মালদা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাক্তার মোয়াজ্জেম হোসেন, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষক তথা এই কলেজের গভর্নিং বডির প্রাক্তন সদস্য এমডি ইজাজুল হক, প্রাক্তন সদস্য সমিজুদ্দিন আহমেদ ওরফে রাহুল, স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্য আরিফুর রহমান, কালিয়াচক এক নম্বর ব্লকের বিডিও সেলিম আহমেদ সরদার, গাজোল কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর শামসুল হক, কলেজের ফাউন্ডার দের মধ্য থেকে নাজির হোসেন, হাফিজুর রহমান, ছাত্র-সংসদের প্রাক্তন জেনারেল সেক্রেটারি মুখলেস শেখ, সেলিম শেখ ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এই অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কলেজের পলিটিক্যাল সাইন্স ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর গজেণ কুমার বারুই। এনসিসি, এনএসএস, অতিথিবর্গ, অধ্যক্ষ, অধ্যাপক, অধ্যাপিকা, শিক্ষাকর্মী, প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের সম্মিলিত জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর কলেজের উত্তরোত্তর উন্নতি, সমাজ দেশ ও উপস্থিত-অনুপস্থিত সমস্ত মানবতার কল্যাণ কামনা করে ও গুণগত উচ্চশিক্ষা বিস্তারের আবেদন রেখে অধ্যক্ষ নাজিবর রহমান পতাকা উত্তোলন তথা প্রথম পর্যায়ের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

     

    দ্বিতীয় পর্যায়ে কলেজের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মালদা জেলা সদরের মহাকুমা শাসক তথা এই কলেজের অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সুরেশচন্দ্র রানো। তিনি সভাপতির ভাষণে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে কালিয়াচক কলেজের সমস্ত স্টেকহোল্ডার দের প্রশংসা করেন। কলেজ কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রিন্সিপালের উদ্যোগ ও দক্ষতাকে সাধুবাদ জানান এবং আগন্তুক দিনে সমস্যা সমাধানে ও বিভিন্ন অভাব পূরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়াবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। সভায় স্বাগত ভাষণ উপস্থাপন করেন কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর নজিবর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন কলেজের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান এবং ইন্টার্নাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেলের কো-অর্ডিনেটর ডঃ সুব্রত কুমার দাস। এবং থ্যাংকস উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান বিজয়া মিশ্র।

    স্বাগত ভাষণে কলেজের অধ্যক্ষ ড. রহমান উল্লেখ করেন ১৯৯৫ সালের ১৪ ই অগাস্ট এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় অত্র এলাকার সর্ব শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রী বিশেষ করে গরিব এবং মহিলাদের উচ্চশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্য নিয়ে। তৎকালীন সময়ে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মালদা কলেজ এবং মালদা ওমেন্স কলেজ থাকলেও এই প্রত্যন্ত এলাকার অভাবী ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের বিএ পাশ করার স্বপ্ন প্রকৃতপক্ষে অপূর্ণই থেকে যেত। বিশেষত ছাত্রীরা দূরদূরান্তের গ্রাম থেকে এসে দূরবর্তী কলেজে শিক্ষা গ্রহণের জন্য যাওয়ার সুবিধা পেত না সেই অভাব পূরণ করে কালিয়াচক কলেজ। ২৫-২৬ বছরের যাত্রা পথে উচ্চশিক্ষা প্রসারের এই কেন্দ্রটি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তিনি ২০১৫ সালের ২রা জুলাই এই কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করার পর থেকে প্রত্যেক বছর গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগে এই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা স্ট্যান্ড করে চলেছে। ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন কলেজে, বিদ্যালয় শিক্ষকতায় নিযুক্তি লাভ করেছে, অনেকে মেডিকেল ও প্যরামেডিকেলে পাঠরত আছে অনেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসে কার্যরত উপরন্তু উল্লেখযোগ্য যে টাটা সার্ভিসেস কনসালটেন্সি এবং বাজাজ আলিয়াঞ্জ এই কলেজের সাথে মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্বাক্ষর করেছে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করার জন্য। কলেজের এনসিসি ক্যাডেট মালদা, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের মধ্যে প্রথম হয়ে পশ্চিমবাংলা সরকারের রাজ্যপালের পদক লাভ করেছে এবং এন এস এস ভলান্টিয়ার মুখ্যমন্ত্রীর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডে অংশগ্রহণ করে শংসাপত্র লাভ করেছে। অপরদিকে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে বাড়তে আজকে প্রায় দশ হাজারে পৌঁছেছে। এই বিশাল সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা ও পরিষেবা দেওয়ার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মীদের সংখ্যা একেবারে ভীষণভাবে অপ্রতুল। কলেজের শিক্ষক সংখ্যার অপ্রতুলতা দূর করার জন্য নির্দিষ্ট দপ্তর এর সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ১২ জন স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকা যোগদান করানোর ব্যবস্থা করার পর পূর্বের ১১ জন মিলে আজকে স্থায়ী শিক্ষক ২৩ জন হয়। অপরদিকে নতুন করে ১২ জন স্টেট এইডেড কলেজ টিচার্স যোগদান করানোর ব্যবস্থা করার পর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫ জন সর্বসাকুল্যে উভয় ধরনের শিক্ষক মিলে সংখ্যা হয় ৪৮ জন। শিক্ষা কর্মীদের সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।

     

    ইনফ্রাস্ট্রাকচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে রুশা বা রাষ্ট্রীয় উচ্চ শিক্ষা অভিযান এর পক্ষ থেকে দুই কোটি টাকা, এমএসডিপি এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় সমপরিমাণ আর কলেজ থেকে অর্থ বরাদ্দ করে বিল্ডিং এর কাজ করা হয়েছে।, চারটি স্মার্ট ক্লাসরুম, একটি ভার্চুয়াল ক্লাসরুম, একটি ল্যাঙ্গুয়েজ ল্যাবরেটরী, একটি অত্যাধুনিক সেমিনার হল, নতুন অফিস বিল্ডিং, একটি নতুন সাইকেল স্ট্যান্ড, আগে থেকে বিদ্যমান বিল্ডিং এর তিনতলায় তিনটি নতুন ক্লাসরুম নির্মাণ,ল্যাঙ্গুয়েজ ব্লক এর জন্য ত্রিতল বিশিষ্ট নতুন একটি ভবন, একটি মিনি ইনডোর গেমস কমপ্লেক্স, একটি গার্ডেন ফ্লোরা একটি কম্পোস্ট পিট এর ব্যবস্থা হয়েছে। অসম্পূর্ণ গার্লস হোস্টেল এর নির্মাণ সম্পূর্ণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তথাপি প্রায় ১০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে পরিষেবা দেওয়ার উপযুক্ত ভবন, উপযুক্ত বেঞ্চ, ডেস্ক, উপযুক্ত যন্ত্রপাতি, প্রয়োজনীয় শিক্ষক-শিক্ষিকা, প্রয়োজনীয় শিক্ষা-কর্মী সবকিছুই ভীষণভাবে অপ্রতুল তা দূরীকরণের জন্য অধ্যক্ষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আর্টস এবং সাইন্স দুটো বিভাগ নিয়ে শিক্ষাদান অব্যাহত থাকলেও আধুনিক যুগে এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরো নতুন সাবজেক্ট খোলার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

     

    এই সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন গভর্নিং বডির সভাপতি এবং রাজ্য সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন অবস্থায় এই কলেজের উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট প্রচেষ্টা করে কলেজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তিনি অধ্যক্ষের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান শিক্ষক শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মীদের ছাত্র-ছাত্রীদের সহযোগিতার প্রশংসা করেন। বিশেষ অতিথির ভাষণে ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন উল্লেখ করেন তিনি ও কলেজের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন, আরো বলেন প্রিন্সিপাল দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য কলেজ এগিয়ে চলেছে। গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ফাইন্যান্স অফিসার জাহির হসেন তার ভাষণে কলেজের আর্থিক স্বাস্থ্য উন্নতি করে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিষেবা আরো বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেন। গাজোল মহাবিদ্যালয় এর অধ্যক্ষ শামসুল হক উল্লেখ করেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্তরায়। আরিফুর রহমান কলেজে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। আরো বক্তব্য রাখেন ইজাজুল অক হক, সমিযুদ্দিন আহমেদ, নাজির হোসেন , হাফিজুর রহমান, সেলিম শেখ, মুখলেস শেখ প্রমূখ।