রাজনীতির শিকার রাজ্যের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলি! আটকে টাকা

দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা: পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় রাজ্যে তৈরি হয়েছে ৪৭৪টি সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্র। ৬৫টি ব্লক ও ২৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ‌্যকেন্দ্র। এগুলি তৈরির খরচ (ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট) ছ’মাস আগে স্বাস্থ‌্যমন্ত্রকে পাঠিয়েছে নবান্ন। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষ শেষ হওয়ার আগেই তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর-সহ ১৩টি রাজ‌্যকে ইউসি-র অপেক্ষা না করেই বকেয়া মিটিয়ে দিলেও রাজ্যের প্রাপ‌্য ৮২৬.৭২ কোটি টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন। আটকে রাখা হয়েছে জাতীয় স্বাস্থ‌্য মিশন প্রকল্পের বকেয়া তিন হাজার কোটি টাকা। দফায় দফায় বৈঠক ও চিঠি চালাচালির পরও কোনও প্রতিশ্রুতি না মেলায় সংশয়ে রাজ‌্য।

    রাজ্যের আশঙ্কা, সম্ভবত অর্থ কমিশনের টাকা কেন্দ্র দেবে না। যদিও ইতিমধ্যেই সব সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্রের জন‌্য নার্সদের প্রশিক্ষণ দিয়ে কেন্দ্রে পাঠানোর চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার-ইন্টারনেটের জন‌্য দরপত্র দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ কমিশনের আধিকারকিদের সঙ্গে তিন দফায় বৈঠক করেছে নবান্ন। ছিলেন অর্থ ও স্বাস্থ‌্যদপ্তরের কর্তারা। কিন্তু অর্থ কমিশনের অধিকর্তা অভয়কুমার প্রাপ‌্য মিটিয়ে দেওয়ার কোনও আশ্বাস দিতে পারেননি। অবস্থা সামাল দিতে অর্থ তথা স্বাস্থ‌্যদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জরুরি বৈঠক করেন।

    প্রশ্ন উঠছে, এইভাবে কতদিন চলবে? কারণ, বাড়ি তৈরি হলেও অনুমতি না মেলায় বেশিরভাগ সুস্বাস্থ‌্য, প্রাথমিক ও ব্লক স্বাস্থ‌্যকেন্দ্র কার্যত তালাবন্ধ। যেকটি খোলা আছে সেগুলিতে দুবেলা ঝাঁট পড়ছে না। চাপ বাড়ছে প্রাথমিক ও ব্লক হাসপাতালগুলির উপর। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর কথায়, ‘‘সম্ভবত কেন্দ্রীয় আধিকারিকরাও রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। তা না হলে সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্রের রং কী হবে তা নিয়ে কেন বারবার প্রশ্ন উঠবে। রাজ্যের আধিকারিরা একের পর এক তথ‌্য সাবুদ পেশ করলেও কেন তিনি বৈঠকে চুপ থাকবেন?’’ মন্ত্রীর বৈঠকের পরই রাজ্যের তহবিল থেকে বাজেট বহির্ভূত ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। হকের টাকা অবিলম্বে দিতে স্বাস্থ‌্য দফতরের প্রধান সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম ফের চিঠি দিয়েছেন। অবস্থা এমন জায়গায় গিয়েছে ঠিকাদার-সাফাই কর্মীদের প্রাপ‌্য টাকা আটকে আছে।

    শুরুতে কোনও শর্ত না দিলেও ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে অর্থ কমিশন অন্তত একডজন শর্ত চাপিয়ে দেয়। প্রথমেই বলা হয়, সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্রের রং বদল করে গেরুয়া করতে হবে। অসংক্রামক  ব্যাধির চিকিৎসার জন‌্য ছ’টি বৃত্ত করে রোগের নাম লিখতে হবে। ততদিনে প্রায় ৩৫০ সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্র তৈরি পূর্ণ। স্বাস্থ‌্যমন্ত্রকের পরিদর্শক দল বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে যে রিপোর্ট দেয় তা মানতে গেলে ভেঙে নতুন করে ভবন করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব অবিজেপি রাজ‌্যগুলি বিরোধিতা করে। ফলত, কয়েকটি সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্রের রং কিছুটা বদল হলেও প্রায় সব কেন্দ্রে অন‌্য শর্ত মানা হলেও রং বদল হয়নি। এক কর্তার কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বাস্থ‌্যমন্ত্রক সুস্বাস্থ‌্য কেন্দ্র বাড়ির রং নিয়ে প্রশ্ন না তুললেও অর্থ কমিশন কিন্তু নিজেদের অবস্থান থেকে নড়তে নারাজ। ফলত, একের পর এক বৈঠকই সার।