বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কলম তুললেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়

দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা: কামতাপুর, গোর্খাল্যান্ড তো কখনও গ্রেটার কোচবিচার কিংবা কখনও উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে অশান্ত হয়ে আসছে রাজ্যের উত্তরপ্রান্ত। বিজেপির নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-বিধায়কেরা প্রকাশ্যেই পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবিতে সরব। বিগত কয়েক দশক যাবৎ এই দাবির কেন্দ্র বিন্দুতে আছে কোচবিহার জেলা। বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে সব তথ্য তুলে ধরে পৃথক রাজ্যের দাবিতে সরব তার বিরুদ্ধে পাল্টা নথিপত্র সহকারে কলম ধরেছেন তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়।

    রাজ্যসভায় তৃণমূলের উপনেতা সুখেন্দু শেখর রায় দলের মুখপাত্র জাগো বাংলা’র সম্পাদক। সেই পত্রিকার শারদীয় সংখ্যায় সুখেন্দু তাঁর লেখা নিবন্ধে দেখিয়েছেন কামতাপুর আন্দোলনকারীরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোচবিহারের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। সুখেন্দু ধারালো আক্রমণ করেছেন কোচবিহারের মানুষ বিজেপির সাংসদ অনন্ত মহারাজকে। তৃণমূল সাংসদের কথায়, অন্তত গত ২১ অগাস্ট রাজ্যসভায় শপথ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ১৯৪৭ এর ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স অ্যাক্টের ৭ (বি) ধারা অনুযায়ী কোচবিহার মহারাজের কাছ থেকে দখল করা জমি ইংরেজরা ফিরিয়ে দেয়। তখন থেকেই কোচবিহার গ্রেটার কোচবিহার রয়েছে। অনন্ত গ্রেটার কোচবিহার গঠনের জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানান।

    সুখেন্দুর বক্তব্য, অনন্ত সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেছেন। সংশ্লিষ্ট ধারায় এমন কোনও কিছুর উল্লেখ নেই। বলা আছে, ১৯৪৭-এর ১৫ অগাস্টের আগে পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারের অধীনস্থ ভূখণ্ড ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল তার কোনও দায়দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের সরকারের আর রইল না। এই আইন পাশ হওয়ার পরে বিভিন্ন চুক্তি, সনদ বা সমঝোতা অনুযায়ী বিভিন্ন ভারতীয় প্রশাসক বা দেশিয় শাসকদের উপর সরকারের সব ক্ষমতা, আধিপত্য, কর্তৃত্ব শেষ হয়ে যাবে। কোথাও কোচবিহার সম্পর্কে সেখানে আলাদা কিছু বলা নেই।

    সুখেন্দু লিখেছেন, সেই সময় ৫৮৪টি দেশিয় রাজ্য ছিল। তারমধ্যে ৫৬২টি ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। বিভিন্ন দেশিয় রাজ্যের অধিপতিদের সঙ্গে ভারত সরকারের চুক্তি সম্পাদিত হয়। কোচবিহারও তার ব্যতিক্রম নয়।

    সুখেন্দু শেখর রায় একাধিক নথিপত্রের উল্লেখ করে বলেছেন, উত্তরবঙ্গ, গ্রেটার কোচবিহার ইত্যাদি রাজ্য গঠনের দাবির পিছনে আছে চূড়ান্ত ইতিহাস বিকৃতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উত্তরবঙ্গের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গের উন্নয়নের ফারাক কমিয়ে এনেছেন। উত্তরপ্রান্তের আর্থিক পরিস্থিতি যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তখন বিচ্ছিন্নতাবাদের জিগির তোলা হয়েছে।

    তৃণমূলের এই সাংসদ লিখেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে ২০টি রাজ্য গঠনের প্রস্তাব বিবেচনাধীন আছে। অমিত শাহের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, অন্য রাজ্যগুলিতে রাজ্য গঠনের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতা নেই। তাহলে পশ্চিমবঙ্গকে কেন বিভাজন রাজনীতির শিকার হতে হবে?

    তিনি লিখেছেন, ১৯০৫-এ ব্রিটিশ সরকারের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ছয় বছরের মধ্যে প্রত্যাহৃত হয়েছিল। ১৯৪৭-এ হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগের প্রচেষ্টায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগ হয়। পাঞ্জাবে খলিস্তানি আন্দোলন দানা বাঁধে। কিন্তু বাংলায় কোনওদিন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন মাথা তোলেনি। তৃণমূল সরকারের মতো অতীতের শাসক দল এই ব্যাপারে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছে। কিন্তু বিজেপি বাংলাকে ভাঙতে চাইছে। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে না। তারা ছোট ছোট রাজ্য গঠন করে কেন্দ্রের খবরদারী নিশ্চিত করতে চায়।