পুজো মিটলেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়াতে চলেছে তৃণমূল

দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা: পুজো মিটলেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ঝাঁজ আরও বাড়াতে চলেছে তৃণমূল। সেটা আঁচ করে ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছে বঙ্গ-বিজেপিও। গত সোমবার ঝটিতি সফরে কলকাতায় এসে অমিত শাহ পুজো-পরবর্তী আন্দোলনের রূপরেখা বাতলে গিয়েছেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীদের। সূত্রের খবর, পুজোর পরেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আরও জোরালো করতে চলেছেন তাঁরা।

    পুজোর পরে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে তৃণমূলের আন্দোলন যে আরও তীব্র হবে, সেটা বৃহস্পতিবার পঞ্চমীর বিকেলেই ঘোষণা করেছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ড হারবারের সাতগাছিয়ায় দলীয় কর্মসূচি থেকে তিনি বলেন, ‘উৎসবের সময়ে লড়াই-আন্দোলন হয় না। কিন্তু উৎসব শেষে আন্দোলনের ঝাঁজ বাড়বে। বাংলার বঞ্চিতদের হকের টাকা যতক্ষণ না তাঁদের কাছে পৌঁছচ্ছে–ততক্ষণ লড়াই চলবে।’

    তাঁর হুঁশিয়ারির জবাব দিতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বুঝিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরাও ঘরে বসে থাকবেন না পুজোর পরে। তাঁর মন্তব্য, ‘ওরা সুর চড়াক। আমরাও সেই সুরে সুরে তবলা বাজাব। প্রস্তুত আছি আমরাও। কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকায় রাজ্য সরকার কী ভাবে দুর্নীতি করেছে, তা নিয়ে লাগাতার প্রচার অভিযান চলবে।’

    বিজেপির অভিযোগ, যোগ্যদের বঞ্চিত করে তৃণমূল নিজেদের দলের লোকেদের কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে। ওই ‘যোগ্য’দের নিয়ে নভেম্বর থেকে লাগাতার কলকাতার পথে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া শিবির। রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্রীয় বঞ্চনা বনাম রাজ্য সরকারের দুর্নীতি—লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত বঙ্গ-রাজনীতি আবর্তিত হবে এই বাইনারি ঘিরেই। তবে এখনও পর্যন্ত এই লড়াইয়ে ‘অ্যাডভান্টেজ’ তৃণমূল বলেই একান্তে মানছেন গেরুয়া শিবিরের একাংশ।

    কারণ, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রের প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার কথা মুখে বললেও সুকান্তরা এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে বড়সড় কোনও আন্দোলন সংগঠিত করতে পারেননি। বরং কেন্দ্রীয় বঞ্চনার ‘ন্যারেটিভ’ বঙ্গ-রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠা করতে তৃণমূল এখনও পর্যন্ত অনেকটাই সফল। যা নিয়ে ঘনিষ্ঠমহলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পদ্মের অনেকেই।

    বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার কথায়, ‘পরিসংখ্যান থেকেই স্পষ্ট, আমরা পিছিয়ে আছি। একশো দিনের কাজের টাকার দাবিতে অভিষেক দিল্লিতে মন্ত্রীর ঘরের বাইরে ধর্নায় বসেছিলেন। কলকাতায় ফিরে তাঁকে একই দাবিতে রাজবভনের বাইরে লাগাতার ধর্না দিতে দেখা গিয়েছে। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিজেপির এক জনও কিন্তু ধর্নায় বসেননি এখনও। কলকাতায় বিজেপির কোনও বড় মিছিল হয়েছে বলেও মনে পড়ছে না। ’

    তবে পুজো শেষে যুদ্ধের ‘দ্বিতীয় রাউন্ড’ শুরু হতে চলেছে নিশ্চিত ভাবেই। সূত্রের খবর, পুজো উদ্বোধনে অমিত শাহ কলকাতায় এসে কিছু ‘ট্রিকস’ বাতলেছেন সুকান্তদের। সেই ‘ট্রিকস’ মেনে পুজো-পরবর্তী যুদ্ধে বিজেপির সাফল্য আসে কিনা, এখন সেটাই দেখার।