গ্রিন জোনে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত বাতিল হোক,রাজ্যকে নিতে হবে করেনটাইনের দায়িত্ব 

গ্রিন জোনে বাস চালানোর সিদ্ধান্ত বাতিল হোক,রাজ্যকে নিতে হবে করেনটাইনের দায়িত্ব

    সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়

    পয়লা মে, র পর গ্রিন জোন চিহ্নিত এলাকাগুলিতে দোকান খুলে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস চলাচল,নির্মাণ কাজ এবং কল কারখানা খোলা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়েছে তা ভয়ঙ্কর রকম ভাবে করোনাভাইরাস ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত।

    গ্রিন জোন বলে বলা হচ্ছে এই কারণে যে গত ১৪ দিন ধরে ঐ সমস্ত এলাকা থেকে নতুন কোনো সংক্রমণ এর চিহ্ন পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সেখানে করোনাভাইরাস নেই।উপসর্গহীন করোনা ভাইরাস ব ৮০% মানুষের মধ্যে  ছড়িয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। লকডাউন এর শিথিলতা শুরু হলে নানাভাবে গ্রীনজনে আবার সংক্রমণ শুরু হবে না, একথা কেউ বলতে পারে না। তাই এখুনি বাস চলে না বাপ জনসমাগম হতে পারে কোন  স্থানে  বা গণ পরিবহনের জন্য কোনরকম অনুমতি তিনজন হলেও সেখানে দেওয়া উচিত হবে না। রাজ্য সরকার যদি এটা প্রত্যাহার না করে তাহলে অবিলম্বে এরকম আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে ওই অঞ্চলে আবার করোনা প্রাদুর্ভাব ঘটবে।

    উপসর্গহীন যারা তাদের নিয়েই কিন্তু সবচেয়ে বেশি চিন্তার। গত ১৪ দিনের মধ্যে কোন নতুন কভিড আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি, এই লক্ষণকে ধরে রাখতে গেলে আরো অন্তত একটা মাস পরে লকডাউন তোলা উচিত ছিল। অন্তত ১৫ ই মে র পর, হ্যাঁ সেটা গ্রীন জোনেও।

    এখানে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে রাজ্যের জন জীবনে দ্রুত স্বাভাবিক ছন্দ ফিরিয়ে আনার তাগিদে এবং অর্থনীতির দিকে তাকিয়ে।বিশেষত আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি,কৃষক,শ্রমিক এবং অসংগঠিত কর্মীদের দিকে তাকিয়ে ।তারাই পশ্চিমবঙ্গের ৮০% মানুষ।, কিন্তু যে কারণে এতদিন লকডাউন  রাখতে হয়েছিল, সেটা কিন্তু অনেক বেশি জরুরি বলেই আজও সারা বিশ্ব গৃহবন্দী। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থায় অন্য আর কিছুই বিচার্য বিষয় নয়। সেই জরুরি অবস্থার প্রেক্ষিতে  কিন্তু বিশেষ কিছু বদল হয় নি। কিছু এলাকা থেকে নতুন খবর আসছে না মানে এই নয় যে নতুন করে আবার করোনা ফিরে ওই গ্রীন জোনেই আসবেনা। তখন কিন্তু রাজ্য আরও বড়োসড়ো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যাবে।

    এখনো পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা থেকে যথেষ্ট ভালো। বিশেষত দেশের  বড় রাজ্যগুলির  জন ঘনত্বের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি।সেই জনঘনত্ব নিরিখে বিচার করে বলা যায়, পশ্চিমবঙ্গই দেশে জন ঘনত্ব স্কেলে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় ( বেশি সংখ্যক মানুষের বাস যেসব রাজ্যে তার তুলনায় ) সবচাইতে কম আক্রান্ত রাজ্য।এটাও  রাজ্য সরকারের কৃতিত্ব। যেভাবে তারা গোটা রাজ্যে লকডাউন বলবৎ করে covid ইমার্জেনসি কন্ট্রোল করেছে, আপদকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে রাতারাতি বিভিন্ন  জায়গায় জায়গায় covid হাসপাতাল খুলে দিয়েছে, তার জন্য আক্রান্তের পরিমাণ খুব বেশি বাড়ে নি। প্রয়োজনের তুলনায় এখনো পর্যন্ত যথেষ্ট সংখ্যক আইসোলেশন ওয়ার্ড, বেড রয়েছে এবং কোভিড হাসপাতালের ক্যাপাসিটি ঠিকই আছে। প্রয়োজনের তুলনায় কথাটা বললাম কিসের ভিত্তিতে? সরকারের কাছে টোল ফ্রি হেল্পলাইনে যত কল এসেছে তার ভিত্তিতে।সেই কল এসেছে যাদের কাছ থেকে ধরা যেতে পারে আক্রান্ত সংখ্যা তাদের থেকে বেশি নয়।  সেই মানুষেরাই আতঙ্কে ফোন করছে। সেই ফোন কলের ভিত্তিতে যতজনকে পরীক্ষা করা যায় তত ল্যাব আছে কিনা, এবং অসুস্থ হলে তাদেরকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা যাবে কিনা, সবশেষে আইসোলেশন করে রাখার পর হসপিটালে নিয়ে চিকিৎসা করা যাবে কিনা, এই প্রশ্নগুলো কে যদি পাশাপাশি রেখে বিচার করা যায়, তাহলে দেখা যাবে আজকে এই লেখার সময় পশ্চিমবঙ্গের চিত্রটা যথেষ্ট আস্থাজনক।

    এই আস্থার ভিত্তিতেই হয়তো গ্রিন জোনে কাজকর্ম শুরু করবার কথা ভেবেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে রাখা উচিত  কেরলের কথা।ভারতবর্ষের সবচাইতে আগে যারা করোনাভাইরাস কে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে তারা কিন্তু চলতি মাসের শেষে গ্রীন জোনে দোকানপাট খোলার কথা ভাবে নি। লকডাউন তারা ১৫ ই মে পর্যন্ত বলবত করে রেখেছে। কেন? উপসর্গহীন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মাধ্যমে লকডাউন উঠে যাওয়ার পর আবার শত শত মানুষ আক্রান্ত হতে পারে, এটা চিকিৎসকদের ই অভিমত।

    গ্রিন জোনে লকডাউন শিথিল করার পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার সময় মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সে কথা নিজেই বলেছেন যে তার বিশেষজ্ঞরা মে মাসের শেষ পর্যন্ত লকডাউন রাখতে অনুরোধ করেছেন। তাহলে তিনি কেন তড়িঘড়ি করে পয়লা মে থেকে বিভিন্ন গ্রিন জোনে কাজকর্ম ব্যবসা দোকানপাট চালু করতে অনুমতি দিচ্ছেন? এটা কিন্তু মনে রাখা দরকার যে সারাদেশে যখনই কোনো বাস চলাচল করছে তখনই সেই বাসটিকে সম্পূর্ণ সানিটাইজড করা হচ্ছে । কোটা থেকে ছাত্রদের নিয়ে আসবার সময় প্রতিটি সরকার সেইভাবে বাস স্যানিটাইজার দিয়ে শুদ্ধ করে তারপর চালিয়েছে। গ্রিন জোনে বাস চালাবার সময় নিশ্চয়ই কোন মালিক সেইভাবে করবেনা ।তাই বাস চালনা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। সরকারিভাবে বিধি নিষেধ কখনও শিথিল করে পালন করা যায় না। যে কারণে সেই সব এলাকাতেও পূর্ণমাত্রায় ব্যবসায়িক কাজকর্ম শুরু করা হচ্ছে না, সেই একই কারণে একেবারেই শুরু করা উচিত ছিল না। কারণ শুরু করলেই সংক্রমণ ছড়াবে,এমন আশঙ্কা থাকবেই। উপসর্গ যার আছে তেমন কেউ না থাকলেও উপসর্গহীন যারা  —-  ছড়াতে পারে তাঁদের মাধ্যমে!

    প্রকৃত অর্থে তাই পশ্চিমবঙ্গ কতটা ভালো আগামী দিনে থাকবে এটা নির্ভর করবে কিন্তু প্রতিটি এলাকায় কত ভালো করে টেস্টিং করা হলো তার উপর। কেরলের প্রত্যেককে টেস্টিং করবার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। টেস্টিং করে করে সন্দেহ হলেই নূন্যতম অসুস্থ দেখলেই সরকারি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে তাদের নিয়ে রেখে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এইভাবে এক লক্ষ মানুষকে রাখা হয়েছে সরকারি তত্ত্বাবধানে।তাই মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যদি এখন বলেন যে লাখ লাখ মানুষকে রাখবার কোন উপায় তার নেই, এটা মেনে নেওয়া মানে রাজ্যকে আরো একবার করো না আক্রান্ত হতে দেওয়া।

    তাই এ দায়িত্ব সরকারকে নিতেই হবে।এলাকা ধরে ধরে টেস্টিং করাটা যদি খুব অসুবিধেজনক হয়, তাহলে ঘরে বসে অ্যাপসের মাধ্যমে প্রত্যেকে প্রাথমিক চেকিং করে ফেলুক। এবং ন্যূনতম মারকিং এর ভিত্তিতে অসুস্থ বলে মনে হলে অনলাইন টেলি কাউন্সেলিং ট্রিটমেন্ট শুরু করা যেতে পারে। সবশেষে মনে হলে  করেনটাইন কেন্দ্রে নিয়ে এনে রাখা হোক।

    প্রতিটি এলাকায় নজরদারির জন্য স্থানীয় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। প্রতিটি এলাকায় কঠোরভাবে লকডাউন চালু থাকুক। এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ থাকুক। জরুরী ভিত্তিতে আশা কর্মীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা করে এলাকা ভিত্তিক রিপোর্ট জমা করুক।সেই তথ্যকে কাজে লাগানো হোক।

    তথ্যসূত্র : বার্তা সাম্প্রতিক