অগ্রগণ্য মার্কিন টেক কোম্পানি মান্টিক এবার পূর্ব ভারতে পা রাখল

শেখ আব্দুল আজিম, কলকাতা: সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মান্টিকের সবচেয়ে বড় ট্যালেন্ট হাবগুলোর অন্যতম হয়ে উঠবে কলকাতা।অগ্রগণ্য আমেরিকা ভিত্তিক গ্লোবাল তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি মান্টিক পূর্ব ভারতে তাদের কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিচ্ছে বলে ঘোষণা করেছে। এর অঙ্গ হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় এক নতুন অত্যাধুনিক অফশোর ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (ODC) খোলা হয়েছে। পুনের পর এটা ভারতে মান্টিকের দ্বিতীয় অফশোর অফিস।

    সল্টলেক সিটি, সেক্টর ৫-এ অবস্থিত নতুন কেন্দ্রের আজ উদ্বোধন হল। উদ্বোধন করলেন হ্যারি আয়ার, ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, মান্টিক; শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত, কলকাতা সেন্টার হেড অ্যান্ড গ্লোবাল হেড – ডিজিটাল প্রোসেস অটোমেশন, মান্টিক; আনন্দ ঝা, ডিরেক্টর, স্ট্র্যাটেজিক অ্যালায়েন্সেজ, পেগাসিস্টেমস; দেবাশিস সেন, নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটি (NDITA)-র চেয়ারম্যান এবং কল্লোল ঘোষ, ফাউন্ডার, অফার ইন্ডিয়া।

    অগ্রগণ্য মার্কিন টেক কোম্পানি মান্টিক তার গ্লোবাল ক্লায়েন্টদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য কলকাতাকে সবচেয়ে বড় ট্যালেন্ট হাব করে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এই তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিটি ইতিমধ্যেই কলকাতায় ব্যাপক হারে প্রতিভা খুঁজে নিয়োগ করছে এবং ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই কলকাতা থেকে ৩০০ জনকে নিয়োগ করার পরিকল্পনা রয়েছে।এছাড়া প্রতিভার ক্রমবর্ধমান ভাণ্ডার আরও বড় করার জন্য এই শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস থেকে নতুন প্রতিভা তুলে আনার দিকেও জোর দিচ্ছে। একইসঙ্গে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মচারী আকর্ষণ করার জন্য এই অগ্রগণ্য টেক কোম্পানি কোভিডের ফলে কাজ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিতে যে পার্থক্য এসেছে তার সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন এখন মানুষ বাড়িতে বসে বা নিজের শহর থেকেই কাজ করতে পছন্দ করছেন। এই প্রবণতাকে কাজে লাগিয়ে মান্টিকের লক্ষ্য এমন অভিজ্ঞ কর্মচারীদের আকর্ষণ করা, যারা নিজের এলাকা থেকেই কাজ করতে চায়।

    কলকাতার নতুন অফশোর অফিস সম্পর্কে হ্যারি আয়ার, ফাউন্ডার অ্যান্ড সিইও, মান্টিক, বললেন “পুনের পর কলকাতায় আমাদের দ্বিতীয় অফশোর সেন্টার খুলতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। সিটি অফ জয়ে প্রচুর টেক প্রতিভা রয়েছে, দারুণ কর্মসংস্কৃতি আছে এবং গ্লোবাল অ্যাফোর্ডেবিলিটি ইনডেক্সেও এই শহরের স্থান উপর দিকে। এইসব কারণে আমাদের ধারণা কলকাতা শিগগির গ্লোবাল ক্লায়েন্টদের পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় ট্যালেন্ট হাব হয়ে উঠবে। উত্তর আমেরিকা, কানাডা ও ভারতের মত বিশ্বের প্রধান বাজারগুলোর ফরচুন ১০ ও ফরচুন ৫০০ কোম্পানির সঙ্গে যেসব টেক কোম্পানি কাজ করছে মান্টিক তার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা কোম্পানিগুলোর অন্যতম। আমরা মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের মত অন্য ভৌগোলিক এলাকাতেও পা রাখার কথা ভাবছি এবং আরও বেশি নিয়োগের পরিকল্পনা আছে।”

    শীর্ষেন্দু সেনগুপ্ত, কলকাতা সেন্টার হেড এবং গ্লোবাল হেড – ডিজিটাল প্রোসেস অটোমেশন, মান্টিক, বললেন “ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বেশ ভাল পরিমাণে পূর্বাঞ্চলের লোকজন কাজ করে। কলকাতায় এই নতুন অফিস চালু করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল এই অঞ্চলে যে প্রতিভা পাওয়া যায় তা কাজে লাগানো। আমরা প্রথম দিকে কলকাতা কেন্দ্র থেকে ডিজিটাল প্রোসেস অটোমেশন (BPM, RPA) অ্যান্ড ক্লাউড সার্ভিসেস, CRM-কে পরিষেবা দেব। পরের কয়েক মাসে অন্য কাজগুলো ধাপে ধাপে চালু করার পরিকল্পনা আছে।”

    NDITA-র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বললেন “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে আমরা মান্টিককে কলকাতায় স্বাগত জানাই। এখানে আরও ছড়িয়ে পড়তে মান্টিকের আমাদের কাছ থেকে যা যা সাহায্য দরকার হতে পারে, সবই আমরা করব। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্প্রসারণ ইতিমধ্যেই সেক্টর ৫-এর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে এবং আমরা অনবরত এই এলাকার পরিকাঠামোর উন্নতি করে চলেছি। ইতিমধ্যেই আমাদের বেঙ্গল আইটি সিলিকন ভ্যালি হাবে টিসিএস, রিলায়েন্স এবং আদানির মত কোম্পানি আসছে এবং দুবছর অতিমারীতে কেটে যাওয়ার পর এখন ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।

    মান্টিক একটি গ্লোবাল সিস্টেমস ইন্টিগ্রেশন কোম্পানি ও কনসাল্টিং ফার্ম। এই ফার্ম ডিজিটাল প্রোসেস অটোমেশন (DPA) বিশেষজ্ঞ, যার মধ্যে পড়ে বিজনেস প্রোসেস ম্যানেজমেন্ট (BPM) এবং রোবোটিক প্রোসেস অটোমেশন (RPA), কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট (CRM) এবং কোম্পানিগুলোকে ডিজিটাল রূপান্তর ও অ্যাপ্লিকেশন আধুনিকীকরণে সাহায্য করা।

    ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক এই গ্লোবাল তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি আমেরিকার সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে চলা কোম্পানিগুলোর অন্যতম এবং সারা পৃথিবী মিলিয়ে এর কর্মীসংখ্যা এখন ৫০০+। ২০২১-২২ আর্থিক বর্ষে মান্টিকের বাৎসরিক বৃদ্ধির হার ১২%। ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং দ্রুত ডিজিটাল অ্যাডপশনের ফলে এই ফার্ম ২০২৩ আর্থিক বর্ষে বৃদ্ধির হার দ্বিগুণ হয়ে ২০%-২২% -এ পৌঁছবে বলে আশা করছে। তাছাড়া মান্টিক ইনকর্পোরেটেড ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগেই সারা বিশ্বে কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে ১০০০ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে।