রাজ্যের একাধিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির চাবিকাঠি বাকিবুর রহমানের হাতে

দেবজিৎ মুখার্জি, কলকাতা: রাজ্যের একাধিক সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির চাবিকাঠি প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ঘনিষ্ঠ ব‌্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের হাতে। সমিতিগুলির আইডি ও পাসওয়ার্ড জানতেন বাকিবুর! এমনকী সেগুলির নিয়ন্ত্রণও ছিল এই ব‌্যবসায়ীর হাতে। সেই সুবিধা নিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো ভুয়ো কৃষকদের নাম ঢোকানো হত সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির তালিকায়। এই পদ্ধতিতে রেশন বণ্টনের নামে কোটি কোটি টাকা তছরূপ করেছেন বাকিবুর ও তাঁর সঙ্গীরা, এমনই অভিযোগ ইডির। এই ব‌্যাপারে বেশ কিছু তথ‌্য ইডির পক্ষ থেকে আদালতে পেশ করা হয়েছে। কাদের মদতে বাকিবুর এত ক্ষমতার অধিকারী, তা জানার চেষ্টা করছেন ইডির তদন্তকারীরা। এই দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন খাদ‌্যমন্ত্রী তথা বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককেও জেরা করা হচ্ছে।

    ইডির সূত্র জানিয়েছে, ব‌্যবসায়ী বাকিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর একাধিক চালকল ও গমকলে তল্লাশি চালানো হয়। তদন্তের পর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট আধিকারিকরা নিশ্চিত যে, বাকিবুরের প্রত্যেকটি চালকলই রাজ‌্য সরকারের নথিভুক্ত ছিল। এই মিলগুলিতে আসত রেশনের চাল। বিপুল পরিমাণের সেই চাল সরিয়ে বাজারে প‌্যাকেটজাত করে বিক্রি করা হত। উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গায় বাকিবুরের একটি চালকলে তল্লাশি চালিয়ে ১০৯টি স্ট‌্যাম্প ও সিল উদ্ধার হয়। সেগুলির মধ্যে যেমন খাদ‌্য দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত কয়েকটি সরকারি সংস্থার আধিকারিকদের স্ট‌্যাম্প রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিভিন্ন জেলার বেশ কয়েকটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির স্ট‌্যাম্প আর সিল। ওই সমিতিগুলি নিয়ে ইডি তদন্তে নামে।

    ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ব‌্যাপারে সমিতির কয়েকজন কর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তদন্তের পর ইডির গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন যে, রাজ্যের বেশ কয়েকটি সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড বাকিবুর রহমানের দখলে ছিল। বাকিবুর নিজের প্রয়োজনে ইচ্ছামতো তাঁর কর্মচারীদের দিয়ে সমিতিগুলির কম্পিউটার ব‌্যবহার করতেন। সেই সূত্রেই ইচ্ছামতো ওই সব সমিতির ফাইলে ভুয়ো কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হতো। ইডির তদন্তে প্রকাশ, বহু কৃষক নিজেদের ফলানো শস‌্য সরাসরি সরকার পরিচালিত সমবায়কে না দিয়ে বাধ‌্য হতেন এজেন্টদের হাতে তুলে দিতেন। সরাসরি অথবা লোক মারফত এই এজেন্টদের পরিচালনা করতেন বাকিবুর রহমানই। এমনই অভিযোগ ইডির।

    যদিও সমবায়ের রেকর্ডে দেখানো হত, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা হয়েছে। এই ক্ষেত্রেই ভুয়ো কৃষকদের নামের তালিকা তৈরি করা হত। কোন কৃষকের নামে ধান বিক্রির কত টাকা অ‌্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে, সেই তথ্যের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকত সেই বাকিবুরের হাতেই। একই সঙ্গে ইডির গোয়েন্দারা এও খতিয়ে দেখছেন যে, বাকিবুরের ‘সহযোগী’ বলে পরিচিত চন্দক ভাইদেরও এই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির আইডি বা পাসওয়ার্ডও বাকিবুরের কবজায় ছিল কি না। ইতিমধ্যেই এজেসি বোস রোডে চন্দক পরিবারের সংস্থা অঙ্কিত ইন্ডিয়ায় তল্লাশি চালিয়ে ইডি ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে।