বাজারে চালু ৯১টি ওষুধ পরীক্ষায় ফেল, তুলে নিতে নির্দেশ কেন্দ্রের নজরে প্রায় ৪০টি নামী কোম্পানি

আজিম সেখ,নতুন গতি:- কেন্দ্রীয় গুণমান পরীক্ষায় ফেল করল বাজারে চালু অন্তত ৯১টি ওষুধের নির্দিষ্ট ব্যাচ। ভারতবর্ষে ওষুধের শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে ওষুধগুলির নির্মাতা সংস্থাগুলিকে চিঠি ধরিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা পরীক্ষায় ফেল করা ওষুধগুলি বাজার থেকে তুলে নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন কোম্পানির প্রেসার, বুক জ্বালা, গলস্টোন, নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক, আয়রন সাপ্লিমেন্ট, চোখের প্রচুর বিক্রি হওয়া মলম সহ নানান ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ওষুধ আবার সেই রোগের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাজার দখল করে রেখেছে। দেশজু঩ড়ে এগুলির ব্যাপক বিক্রি। টাকার অঙ্কে প্রায় কয়েকশো কোটি টাকার। এমন প্রায় ৪০টি নামকরা কোম্পানি এ কারণে সিডিএসসিও’র নজরে রয়েছে।

সূত্রের খবর, যেমন গলস্টোনের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ওষুধ গুণমান যাচাইয়ের অত্যন্ত জরুরি ‘আইডেন্টিফিকেশন পরীক্ষা’তেই ফেল করেছে। ফার্মাকোপিয়া অনুযায়ী, কোনও ওষুধে তার মূল উপাদানটি নির্দিষ্ট মাত্রায় থাকতে হয়। তবেই তা কার্যকর হয় এবং রোগ সারে। অর্থাৎ ওষুধে ওষুধ কতটা আছে, তা খতিয়ে দেখা হয়। আইডেন্টিফিকেশন পরীক্ষার মাধ্যমে সেই পরীক্ষাটিই করা হয়। কয়েকটি ওষুধ আবার ফেল করেছে ‘ডিসিলিউশন’ পরীক্ষায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়, ওষুধটি কতক্ষণে, কীভাবে মানবশরীরে মেশে। ফেল হওয়ার অর্থ, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেগুলি মানবশরীরে মিশে কাজ করছে না। কেন্দ্রীয় ড্রাগ ল্যাবরেটরির এক প্রাক্তন শীর্ষকর্তা বলেন, এই দুটি পরীক্ষায় কোনও ওষুধের ফেল হওয়ার অর্থ তাকে বাজারে রাখার কোনও মানে হয় না। কারণ, কোনও কাজেই দেবে না এগুলি। যদিও পরীক্ষায় ফেল হওয়া ব্যাচগুলি প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের সাফাইয়ে অধিকাংশ কোম্পানি জানিয়েছে, এগুলি তাদের ওষুধই নয়। তাদের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নকল করে অসাধু লোকজন বাজারে ছেড়েছে। আবার একটি নির্মাতা সংস্থা জানিয়েছে, পাশ না করা ওষুধটি আসলে তাদের রাশিয়ান বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বানানো হয়েছে।
এপ্রসঙ্গে কী বলছেন ওষুধের দোকানদাররা? রবিবার এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ওষুধের দোকানদারদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিসিডিএ)-এর রাজ্য সভাপতি শঙ্খ রায়চৌধুরি বলেন, বিষয়টি নজরে এসেছে। আশা করছি, ড্রাগ কন্ট্রোল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এবং মানুষের কাছে গুণমানের ওষুধ তুলে দেওয়া নিশ্চিত করবে। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সজল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, খবর পেয়েছি। তবে সরকারিভাবে বা কোম্পানির তরফে কোনও চিঠি পাইনি। রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলে এখন ইনসপেক্টরের অভাব মিটেছে। ফলে অন্তত এখানে এমন কাণ্ড হলে, দ্রুত ব্যবস্থা নেবে, এমন আশা রাখি। আর এক সর্বভারতীয় সংগঠন অল ইন্ডিয়া কেমিস্ট অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউটর্স ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ সরকার বলেন, এ প্রসঙ্গে বহু কোম্পানির যুক্তি মানা যায় না। ওষুধের নিম্নমান ধরা পড়লেই তারা সাফাই দেয়, সেই ব্যাচের ওষুধ আসলে তাদের নয়। আমার প্রশ্ন, তাদের না হলে কাদের? কিনছি, ভুগছি তো আমি-আপনিই! ভেজাল হলে ধরা হচ্ছে না কেন? রাজ্যের সদ্যনিযুক্ত ড্রাগ কন্ট্রোলার তারাপদ দাস বলেন, সবে দায়িত্ব নিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেব।
সূত্রের খবর, বর্তমানে সারাদেশে ওষুধ ব্যবসার বাজার কমবেশি এক লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে বাজারের এক থেকে পাঁচ শতাংশ দখল করে রেখেছে ভেজাল ওষুধ। যার মূল ঘাঁটি উত্তরপ্রদেশ।