সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তা সত্বেও মিলছে না চিকিৎসা!

নিজস্ব সংবাদদাতা : বীরভূমের সিউড়ি সদর হাসপাতাল কয়েক বছর আগেই সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে রূপান্তরিত হয়েছে। ১০তলা ভবন তৈরি হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হয়েছে কি? বারবারই উঠছে এই প্রশ্ন। এবার প্রশ্নের নেপথ্যে হাসপাতালের ইউএসজি, ডিজিটাল এক্স-রে এবং সিটি স্ক্যান পরিষেবা। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে হাসপাতালে বন্ধ ডিজিটাল এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান পরিষেবা। কর্তব্যরত কর্মীরা জানাচ্ছেন, মেশিন খারাপ। কবে ঠিক হবে, তা তাদেরও জানা নেই।

     

    একের পর এক রোগী আসছে এবং শুকনো মুখে ফিরে যাচ্ছে। বেসরকারি কেন্দ্রে এসব পরীক্ষার খরচ বেশি। অনেক রোগীরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু তার পরেও বাধ্য হয়েই সেই পথেই হাঁটতে হচ্ছে পরিজনদের।লাভপুর থানা এলাকার মানিকপুর থেকে ডিজিটাল এক্স-রে করাতে এসেছিলেন রিন্টু মণ্ডল। তিনি বলেন, “বুকে জল জমে যাওয়ায় যক্ষা সন্দেহ করে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছিলেন। হাসপাতালে ম্যানুয়াল এক্স রে হচ্ছে, কিন্তু সেই ছবি দেখে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না বলে জানান চিকিৎসক। তিনি ডিজিটাল এক্স-রে করাতে বলেন। কিন্তু এখানে এসে শুনলাম হবে না। আমার মতোই আরও অনেকেই ফিরে গেল। আমার বাইরে থেকে ডিজিটাল এক্স-রে করানোর সামর্থ্য নেই। যেদিন মেশিন ঠিক হবে সেদিন করাব।”সিটি স্ক্যান করাতে এসেও একইভাবে ফিরে গেলেন বীরভূমের সিউড়ি ২ ব্লকের দমদমা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মীর মান্নান। তিনি বলেন, “বাইরে এই স্ক্যান করাতে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ। ওই খরচ আমাদের সাধ্যের বাইরে। কম পয়সায় চিকিৎসা হবে ভেবেই তো হাসপাতালে নিয়ে আসা। এরপর কী করব, বুঝতে পারছি না।” হাসপাতালের ইউএসজি পরিষেবার অবস্থাও খুব খারাপ। হাসপাতালে ইউএসজির করাতে গেলে তিনমাসের আগে সুযোগই মিলছে না। অন্তঃসত্ত্বা রোগীদের ক্ষেত্রেও মাস দেড়েক পরে মিলছে ডেট।মহম্মদবাজার ব্লকের দিঘলগ্রাম থেকে এদিন চিকিৎসকের পরামর্শে ইউএসজি করাতে এসেছিলেন টুসি খাতুন। তাঁর সম্ভাব্য প্রসবের তারিখ ২রা অক্টোবর অথচ তাকে ইউএসজির ‘ডেট’ দেওয়া হয় ৩০শে সেপ্টেম্বর। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের প্রশ্নের মুখে সেই তারিখ পরে এগিয়ে ১৫ই সেপ্টেম্বর করা হলেও প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, একমাস পরের ইউএসজি রিপোর্ট দেখে কতটা লাভ হবে চিকিৎসকের।

     

    তিনি বলেন, “আমরা তো সরকারি পরিষেবার আশাতেই হাসপাতালে আসি। কিন্তু আমার যা যা সমস্যা আছে, সেগুলোর তো সঠিক চিকিৎসাই হবে না ইউএসজি রিপোর্ট না পেলে। বাইরে রিপোর্ট করানোর মতো আর্থিক সামর্থ্যও আমাদের নেই। এরপর যদি রিপোর্টের অভাবে ভুল চিকিৎসা হয়, তার দায়িত্ব কে নেবে?”অন্তঃসত্ত্বা ছাড়া অন্যান্য পেটের সমস্যা নিয়ে যে রোগীরা আসছেন, তাদের নভেম্বর মাসের ‘ডেট’ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান কর্মীরা। যদিও হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নীলাঞ্জন মণ্ডলের দাবি, “রোগী প্রচুর পরিমাণে আসছে, সেই অনুযায়ী ডাক্তার বাড়াতে হবে। ইউএসজি পরিষেবার দু’বেলা করে চালু রাখার পর থেকে রোগীর চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে। সামান্য ডায়রিয়া বা পেটে ব্যথা হলেও চিকিৎসকরা ইউএসজি করতে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ‘জেনুইন’ ও ‘ইমারজেন্সি কেস’ আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।”

     

    ডিজিটাল এক্স-রে ও সিটি স্ক্যান বন্ধ থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ওদের আউটসোর্সিং করা থাকে। ওদের রিনিউয়াল নিয়ে সমস্যা আছে, টাকা পয়সা নিয়ে সমস্যা আছে। সেসব নিয়ে কথা বলতেই আমি স্বাস্থ্য ভবনে এসেছি।”