জেলার ১ লক্ষ ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে, বীরভূমের সিউড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

     

    খান আরশাদ, বীরভূম:

    দেউচা-পাচামি হলে জেলার ১ লক্ষ ছেলেমেয়েদের চাকরি হবে, বীরভূমের সিউড়িতে বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় _
    বীরভূমের সিউড়িতে রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী জেলার ২১৬ টি প্রকল্পের উদ্বোধন সহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করলেন।
    রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূম জেলা সফরে এসে রবিবার সদর শহর সিউড়ির চাঁদমারি ময়দানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ২১৬ টি প্রকল্পের উদ্বোধন সহ বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করলেন। ৭২৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে এইসব প্রকল্পগুলির জন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সন্ধ্যায় বোলপুরে পৌঁছান সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকের পর রবিবার দুপুর প্রায় সাড়ে বারোটা নাগাদ হেলিকপ্টারে সিউড়ির চাঁদমারি ময়দানে আসেন।
    এদিন বিভিন্ন প্রকল্পের পরিষেবা প্রদানের পাশাপাশি চাকরির কিছু নিয়োগপত্রও তিনি প্রদান করেন।
    লোকপ্রসার, পলু পালনের ঘর নির্মাণ, সমব্যথী, সবুজ সাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রভৃতি প্রকল্পের পরিষেবা দান করেন। কৃষক বন্ধু মৃত্যুজনিত সহায়তা প্রদান, বার্ধক্য ভাতা, পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুজনিত সহায়তা প্রদান করলেন। নিজে ধামসা মাদল বাজিয়ে আদিবাসীদের ধামসা মাদল প্রদান করলেন। মিলি কাহার দেবব্রত মন্ডলের সাথে নতুন করে সংসার পাতবেন, তাকে রূপশ্রী প্রকল্পের পরিষেবা দিয়ে নতুন বেনারসি গায়ে দিয়ে আশীর্বাদ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
    ডেউচা পাচামির জমিদাতাদের ৫৬৩ জনকে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ করা করলেন। একই সাথে ৩৪২ জনকে জুনিয়র কনস্টেবল পদে এবং ২৩০ জনকে গ্রুপ-ডি পদে চাকরির নিয়োগ পত্র তুলে দিলেন তিনি।
    রাজ্যের তিনটে মেডিকেল কলেজও উদ্বোধন করা হয়। এর মধ্যে তমলুক তাম্রলিপ্ত মেডিকেল কলেজ, আরামবাগ প্রফুল্লচন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বারাসাত মেডিকেল কলেজ। এছাড়া বোলপুর বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, যা প্রায় ৩৬৭ কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মাণ করা হয়েছে। এটারও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় যেসব উন্নয়নমূলক কাজগুলি হয়েছে সেগুলিও এক এক করে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলার অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ৮৫ কিলোমিটার ৬২টি গ্রামীণ রাস্তা করা হয়েছে, এছাড়া ৬২ টি আদিবাসী জাহের থানের সীমানা প্রাচীন নির্মাণ করা হয়েছে , ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নির্মাণ করা হয়েছে, তারাপীঠ, পাথরচাপুরি, বক্রেশ্বর, ফুল্লরা তলা, ভান্ডিরবন, নন্দিকেশ্বর প্রভৃতি ধর্মীয় স্থল গুলোতেও সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন আটলক্ষেরও বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই প্রায় তিন লক্ষ দুই হাজারেরও বেশি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
    রাজ্যের উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকা তুলে ধরার পাশাপাশি বামফ্রন্ট, বিজেপি ও কংগ্রেসকেও এক হাতে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ৩৪ বছর ধরে বামফ্রন্ট রাজ্যের জন্য কি করেছে?
    বিজেপি ১৮ টা এমপি জিতিয়ে নিয়ে গিয়ে কি করেছে?
    ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ করেছে। আবাস যোজনার টাকা বন্ধ করেছে ।
    অপরদিকে রাজ্য সরকার ৪৭ হাজার গরীব মানুষের বাড়ি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। চব্বিশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের টাকা রাজ্য দেবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
    এনআরসি এবং আধার লিঙ্ক নিয়েও সবাইকে তিনি সাবধান করেন। তিনি বলেন বিভিন্ন জায়গায় আধার লিঙ্ক কেটে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের অন্যান্য জায়গার পাশাপাশি বীরভূমেও আধার লিঙ্ক কাটা হচ্ছে বলে তার কাছে খবর এসেছে। নির্বাচনের আগে যাতে জনসাধারণ ব্যাংক লোন না পায়, রেশন ঠিকঠাক না পায়, রাজ্যের অন্যান্য পরিষেবা যাতে ঠিকঠাক না পায় ,সেই জন্যই আধার কার্ড নিয়ে কেন্দ্র এ ধরনের ছলনা করছে। তবে রাজ্য আধার কার্ড ছাড়াই সমস্ত রকম পরিষেবা আগামীতে দেওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন কোন ব্যাংক যদি আধার কার্ড ছাড়া কোন কাজ হবে না বলে দেয়, তাহলে আগামীতে রাজ্যের নিজস্ব ব্যাংক কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাধ্যমে কাজকর্ম করে দেওয়া হবে সাধারণ মানুষদের, বলে তিনি আশ্বাস দেন।
    এনআরসি প্রসঙ্গে বলেন এনআরসি নিয়ে কেন্দ্র আবার কুহু কুহু ডাক শুরু করেছে। এরা কোকিলকেও এখন ডাকতে দিচ্ছে না। কেন্দ্র আর যাই বলুক, এ রাজ্যে এনআরসি কোনমতেই হতে দেবেন না, তা তিনি কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি করে দেন।
    সিপিএম, বিজেপি কংগ্রেসকেও একহাত নেন। বলেন একসময় সিপিএমের অত্যাচার সহ্য করেছি, আর এখন বিজেপির অত্যাচার সহ্য করতে হচ্ছে। বিজেপি, সিপিএম , কংগ্রেস, এরা রাম, বাম আর শাম। তিন জনে এক হয়ে গেছে।
    মিডিয়াকেও তিনি এক হাত নিয়ে বলেন এরা এখন তিলকে তাল করছে। বিজেপি যা বলছে এরা সেটাকে তিল থেকে তাল বানিয়ে প্রচার করছে। এদের সব কথা বিশ্বাস করবেন না।
    রাজ্যের ছেলেরা যাতে আগামীতে চাকরি-বাকরি পায় সেজন্য জেলায় জেলায় ট্রেনিং সেন্টার করা হচ্ছে , যাতে আই পি এস আই, এস এ সহ বিভিন্ন আধিকারিক রূপে বাংলার ছেলেরা চাকরি পায়।
    ডেউচা-পাচামি সম্বন্ধে বলেন ৭৬৮৩ জন কে চাকরিতে ইতিমধ্যে নিয়োগ পত্র দেওয়ার কাজ চলছে। ডেউচা পাঁচামি হলে জেলার এক লক্ষ ছেলেদের চাকরি হবে বলে তিনি জানান। পরিশেষে সবাইকে বলেন বাংলায় এনআরসি হবে না। রাজ্য সরকার তার জন্য সব রকম প্রচেষ্টা চালাবে। এর জন্য কেউ আতঙ্কিত হবেন না।
    অনুব্রত মণ্ডলের জেল হেফাজতের পর মুখ্যমন্ত্রী তার এই সভা করছেন। এই সভায় অনুব্রত সম্বন্ধে কিছু বলবেন কিনা সেই সম্বন্ধে অনেকেই উৎসুক ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিনও তার বক্তব্যে অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টর তারিফ করে তার প্রতি যে এখনো মুখ্যমন্ত্রীর অগাধ ভালোবাসা রয়েছে তা তিনি সকলকে বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী বলেন কেষ্টকে কতদিন ধরে ওরা জেলে পুড়ে রেখেছে কিন্তু মানুষের মন থেকে কেষ্টকে দূর করতে পারেনি, জেলার নব যুবকদের মনে কেষ্ট তার কাজের মাধ্যমে জায়গা করে নিয়েছে। কেস্টর বিরুদ্ধে যদি ওদের অভিযোগ থাকে, তাহলে বিজেপি নেতাদের নামে কয়টা অভিযোগ ওরা দায়ের করেছে সেটা বলুক।
    মুখ্যমন্ত্রী সকলের সাথে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পর অনুষ্ঠান শেষ করেন। মমতা ব্যানার্জি বলেন আমরা ছিলাম, আছি এবং আগামীতেও থাকবো।
    রবিবারের মুখ্যমন্ত্রীর এই পরিষেবা প্রদান ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্য সচিব পি.বি গোপালিকা, জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি, জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখার্জি, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, ডেপুটি স্পিকার ডক্টর আশিস ব্যানার্জি, এমপি শতাব্দী রায়, এমপি অসিত মাল, এমপি সামিরুল ইসলাম, জেলা পরিষদ সভাধিপতি কাজল শেখ, সহ-সভাধিপতি স্বর্ণলতা সরেন, এম এল এ ডক্টর অশোক চ্যাটার্জী, অভিজিৎ সিনহা, ডক্টর মোশারফ হোসেন, ডক্টর সৌমিত্র মোহন, জেলার বিভিন্ন ব্লকের বিডিও সহ অন্যান্য আধিকারিকেরা।