শিলিগুড়ির ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য

শিলিগুড়ি: শিলিগুড়ির ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুকে নিয়ে ক্রমশ দানা বাঁধছে রহস্য। পড়াশোনার চাপে পরেই বিষাদে আত্মহত্যা হতে পারে বলেই প্রাথমিক অনুমান আর তাতেই চিন্তিত শিক্ষক থেকে অভিভাবকমহল।

    উল্লেখ্য, শিলিগুড়ি পুরনিগমের ৪১ নং ওয়ার্ডের জ্যোতি নগর এলাকার বাসিন্দা পেশায় ওষুধ দোকানের কর্মী সুবীর সাহার ছেলে সোমনাথ সাহা ছিল শিলিগুড়ি উচ্চতর বালক বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। তার স্বপ্ন ছিল পদার্থবিদ্যা নিয়ে লেখাপড়া করে অ্যাস্ট্রোনমি নিয়ে পড়ার। মাধ্যমিকে সে ৯৩শতাংশ নম্বর নিয়ে পাশ করেছিল। উচ্চমাধ্যমিকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছাতে চেয়েছিল সে। কিন্তু মাঝপথেই থমকে গেল বছর ১৮ এর ছাত্র সোমনাথ সাহার সব ইচ্ছে। ২৫ জানুয়ারী বিকেল নাগাদ আচমকাই তার ঠাকুমা দেখতে পায় ঘরের ভেতরে থাকা ফ্যানে ঝুলছে নাতি। এদিন দুপুরে সাদা বোর্ডে অঙ্কও কষেছে। পরে সেই বোর্ডে অঙ্কের নিচে সময় ও ‘মা আই কুইট’ লিখে আত্মহত্যা করে বলে জানিয়েছে পরিবার।

    পরিবার এবং পরিচিতদের থেকে জানা গিয়েছে, গত কিছুদিন ধরেই তার স্বভাব চরিত্রে দেখে যাচ্ছিল পরিবর্তন। এক সপ্তাহ ধরে গৃহশিক্ষকদের কাছে পড়তে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। বন্ধুদের জানিয়ে দেয় যে, সে আর টিউশনে যাবে না। বাড়িতে নিজেই পড়বে। তাই বলে আত্মহত্যা করবে, তা ভাবতে পারেনি কেউ।

    মৃতের মা জানিয়েছে, ওই দিন কাজে যাওয়ার সময় সোমনাথ তাকে সাবধানে যেতে বলে। ফেরার সময়ে শিঙাড়া নিয়ে ফিরতে বলেছিল মাকে। তার কথা মতই সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টার মা শিঙাড়া নিয়ে বাড়ি ফিরলেও খাবে কে, ততক্ষনে যে সব শেষ। ছেলে যে আর নেই বাবা মা ভাবতেই পারছেন না।

    এসব থেকে বাঁচতে মনোবিদ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ দেন যে, পড়াশোনা নিয়ে পড়ুয়ারা যেন অতিরিক্ত চাপ না নেয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে অভিভাবকদের। স্কুল-কলেজ খোলা থাকলে ভাল হয়। বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা অবসাদ কাটাতে সাহায্য করবে। বাচ্চাদের সঙ্গে অভিভাবকদের মিশতে হবে। তাদের মনের খোঁজ নিতে হবে। এই সময়ে এটা খুবই জরুরি।

    এবিষয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানান, মানসিক অবসাদের কারণেই এই ঘটনা ঘটিয়েছে সোমনাথ। পরিবারের চাপ এবং মানসিক অবসাদেই এই ধরনের ঘটনা হয়। লকডাউনে স্কুল বন্ধ। সেই কারণেও মানসিক আবসাদের স্বীকার হয় সে। টিউশন বন্ধ করে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আত্মহত্যার আগে এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। অনেকে ধার-দেনা বাকি থাকলে মিটিয়ে দেয়। বন্ধুদের ফোন করে। “আমি চলে যাব, শেষ যোগাযোগ” এসব বলে থাকে। সাধারণত পরিকল্পনা মাফিক হয় এসব। আত্মহত্যার আগে ‘নোট’ রেখে যায়। বাড়ির কেউ চাপ না দিলেও মানসিক সমস্যার জেরেই এই ঘটনা বলে ওই চিকিৎসক দাবি করেন।