‘নিজামুদ্দিন করোনা’ ও গরুর রচনা

চন্দ্রপ্রকাশ সরকার,নতুন গতি:-এতদিনে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর আসল কালপ্রিটের সন্ধান পাওয়া গেছে! কবে, কোথায় থেকে এবং কিভাবে এই ভাইরাস ছড়ালো তা সবিস্তারে জানার পর এই মারণ ভাইরাসের উপযুক্ত ভারতীয় নামকরণও করা হয়ে গেছে। নতুন নামটি হল– নিজামুদ্দিন করোনা। গত ১৫ মার্চ দেশ-বিদেশের প্রায় হাজার চারেক তবলিগী দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কেজে ‘চক্রান্তমূলক’ সমাবেশ ঘটিয়ে এদেশে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে দিয়েছে! তাই ভাইরাসটির ভারতীয় নাম হল নিজামুদ্দিন করোনা ভাইরাস।

    তা কবে, কোথা থেকে এবং কিভাবে এই ভাইরাস বণ্টনের কাজটি সুসম্পন্ন হল তা সবই জানা গেল। কিন্তু যারা এই মারাত্মক দেশবিরোধী (পড়ুন হিন্দু বিরোধী) কাজটি করলো, সেই দেশদ্রোহীদের খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে গেল। সেই সমস্যার নাম এনআরসি! বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যের আক্ষেপ — “নাগরিকদের একটি সার্বিক তথ্যভান্ডার থাকলেই আর কাউকে খুঁজে বার করতে সমস্যা হতো না। যাতে তা না করা যায় সে জন্যই কয়েক মাস ধরে এত আন্দোলন।” (আ. বা.প.২/৪/২০) অর্থাৎ বেশ আটঘাট বেঁধেই হিন্দুদের নিকেশ করতে নেমেছে মুসলমানরা!
    হেঁয়ালি থাক। দ্বেষপ্রেমীদের পুঁজি হলো গল্পে কথিত গরুর রচনা। তাদেরকে কুমির বা করোনা যা নিয়েই লিখতে বলুন না কেন, তারা নিয়ে গিয়ে ফেলবে সেই মুসলমানেই! তা তাদের কাজ তারা করুন, আমরা বরং কয়েকটি তথ্য দেখে নিই এইবেলা।
    বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) করোনাকে প্যান্ডেমিক বা অতিমারি হিসেবে ঘোষণা করে গত ১১ মার্চ। তার একদিন পরেই, ১৩ ই মার্চ, ভারত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয় — ‘করোনাভাইরাস ভারতবর্ষের জন্য তেমন ভয়ানক কিছু নয়’ (ইজ নট হেলথ ইমার্জেন্সি)। ভারত সরকার ঘোষিত সেই অভয়বাণীর আবহে ১৫ মার্চ দিল্লির নিজামুদ্দিন মার্কেজে হাজার চারেক মানুষের তবলিগ জমায়েত শেষ হয়। বিদেশ থেকে যারা ওই তবলিগে এসেছিলেন, তাদেরকে ভিসা দিয়েছিল কে? সে কি ভারত সরকার নয়? ভিসা দেওয়ার সময় তাদের পূর্ণ পরিচয় কি সংগ্রহ করা হয়নি? তাদেরকে সময়মতো নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো বা বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা করানোর দায়িত্ব কার ছিল? তবলিগ শেষ হওয়ার পরের দিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ রাজধানী দিল্লির বুকেই সাড়ম্বরে গোমূত্র পার্টির আয়োজন করে হিন্দু মহাসভা। করোনাকে জব্দ করার সেই হাস্যকর আয়োজন থেকে করোনা ছড়ানোর কোনও সম্ভাবনাই কি ছিল না? তিরুপতি মন্দির কর্তৃপক্ষের হিসেব অনুযায়ী ১৭ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ — এই তিন দিনে ওই মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম ঘটে। ভক্তদের কাছ থেকে প্রনামি সংগৃহীত হয় প্রায় চার কোটি টাকা। শুধুমাত্র ১৮ মার্চ সকাল পাঁচটার মধ্যেই এসেছিলেন ৪৮০৪১ জন পুণ্যার্থী। ১৯ মার্চ জনতা কার্ফু ঘোষণা করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ঘোষণাকে মান্যতা দিয়ে 22 মার্চ সকাল ৭ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সারা ভারতবর্ষ ঘরে বসে থাকলেও একশ্রেণীর মোদি-মুগ্ধ জনতা বিকেল পাঁচটায় তালি ও থালি বাজাতে বাজাতে দলবদ্ধভাবে নগরকেত্তনে বেরিয়ে পড়লেন! মহামান্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘোষণা মোতাবেক ২৫ মার্চ রাত বারোটা থেকে সারা দেশে শুরু হয় তিন সপ্তাহের লকডাউন। আর সেদিনই লকডাউনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে মোদিজীর যোগ্য উত্তরসূরী উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ সদলবলে ‘রামলালা যাত্রা’য় নেতৃত্ব করেন। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়াই লকডাউন ঘোষণা করায় আতান্তরে পড়েন সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা লক্ষ লক্ষ প্রবাসী শ্রমিক। অসহায় সেই মানুষদের ঘরে ফেরার তাড়ানায় রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় জনস্রোত।
    উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। উপরে উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনাই কি সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পক্ষে যথেষ্ট নয়? কিন্তু তাহলে কি হবে ? তাদেরকে যে গরুর রচনাই লিখতে হবে !!